ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

মেলান্দহে ২৪টির মধ্যে ২২টির অনুমতিপত্র নেই

পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ইটভাঁটি

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর

প্রকাশিত: ২০:২৩, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ইটভাঁটি

জামালপুর : পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে মেলানন্দহে ইটভাঁটি

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় ২৪টি ইটভাঁটির মধ্যে ২২টিতেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ভাঁটিগুলোতে চলছে ইট তৈরি ও ইট ব্যবসার কার্যক্রম।

উপজেলার অনেক ভাঁটি নদীর জায়গা, কৃষিজমি বর্গা ও স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে হওয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই, তবু চলছে ইটের ভাঁটিগুলো। জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় ইটভাঁটিগুলো পৌরসভা ও লোকালয়ের ভেতরে হওয়ায় সেখানে কোনো ভাঁটিকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। উপজেলার ভুরুঙ্গা গ্রামে একটি ক্লিনিকের ১০০ মিটারের মধ্যে পাশাপাশে চারটি অবৈধ ইটভাঁটি ঢাকঢোল পিটিয়ে দিব্বি ইট তৈরি ও ইটের ব্যবসা রমরমাভাবে চলছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ইটভাঁটি বাদশা ব্রিকস ভাঙা ও ফাটল চিমনি দিয়েই প্রসাশন এবং সবার চোখে ধুলা দিয়ে চলছে। গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম ইটের টাকা নিয়ে ইট না দেওয়া, চড়া দামে বিক্রি, আয়কর ফাঁকি, কৃষি ও ফসলি জমি খনন করে অনাবাদি ও জলাশয়করণ, ভাঁটিতে শিশুদের ঝুঁকির কাজে লাগিয়ে শিশুশ্রম আইন লঙ্ঘন, ব্যাংক, গ্রাহক ও জমির মালিকদের সঙ্গে প্রতারণা, ইটভাঁটিতে আসা মাহিন্দ্র গাড়ির কারণে প্রতিনিয়ত বুরুঙ্গা সড়কে সড়ক দুর্ঘটনা, পাশেই মাদ্রাসা, মসজিদ ও কিন্ডারগার্টেন থাকা, ক্লিনিকে স্থাস্থ্যসেবা ব্যাহত, এলাকাটি প্রায় ফল ও ফসলহীন এলাকা ও জনশূন্যে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন বাদশা ব্রিকসে অনেকবার অভিযান পরিচালনা করে জরিমানাও করা হয়। এতে কোনো লাভ হয়নি। এখন একটা ভাঁটি থেকে আরেকটি ভাঁটি যোগ করেছে। বাদশা ব্রিকস সংলগ্ন দুলাল কমিশনারের ভাঁটিও কিনে নিয়েছেন বাদশা ব্রিকসের মালিক। বাদশা ব্রিকসের সোহেল নামের একগ্রাহক বলেন, বাদশা ইট মাপে ছোট। দামও বেশি। আর এদের ব্যবহারও ভালো না। তাই ইট না নিয়েই চলে যাচ্ছি। ভাঁটিতে কর্মরত কয়েকজন শিশুশ্রমিক বলেছে, আগুনে ও রোদে ইট টানতে অনেক কষ্ট হয়। গরিব মানুষ কাজ না করলে চলমু কি করে? রোকুনুজ্জামান নামে একজন পাওনাদার জানান, আমি ইট ও মাটি বাবদ ৫ লাখের বেশি টাকা পামু। ইটের দাম প্রায় ১১ হাজার টাকা। তাও নাকি তার পোষাচ্ছে না। টাকা দেই দিচ্ছি বলে ঘুরাচ্ছেন। শুধু বাদশা ব্রিকসই নয়, এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দুলাল কমিশনারের ভাঁটি, এবিবি, মা ব্রিকস, বাঘা ব্রিকস, নবাব ব্রিকস, মালঞ্চ ব্রিকসসহ অধিকাংশ ইটভাঁটির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। এসব ভাঁটির কারণে পরিবেশ ও জলবায়ুর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। মেলান্দহ উপজেলার নদ-নদী ও পরিবেশ নিয়ে অনেকদিন ধরে গবেষণা করছে ব্রহ্মপুত্র নদ গবেষণা সেল। সেই সেলের গবেষক শিক্ষার্থী আল ফাহাদ বলেন, ইটভাঁটি থেকে দূষিত গ্যাস ও তাপ আশপাশের জলাভূমি, জীবজন্তু, গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। অথচ নিয়ম না মেনে পরিবেশ ছাড়পত্র না নিয়ে যেখানে-সেখানে ইটভাঁটি গড়ে তোলা হয়েছে এবং হচ্ছে।
কৃষিজমি নষ্ট, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ এমন প্রক্রিয়ায় ইটভাঁটিগুলোয় ইট তৈরি বন্ধ করতে হবে। আইনের তোয়াক্কা না করে অতিরিক্ত মাত্রায় কার্বন ও সালফার নিঃসরণ, বসতবাড়ি, কৃষিজমি, টিলা সংলগ্ন সমতলে ইটভাঁটি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি মাটির ইটের বিকল্প হিসেবে যেসব উপকরণ ও পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে, তার ব্যবহার বাড়াতে হবে।
বাদশা ব্রিকসের মালিক বাদশা মিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেই ভাঁটি চালাচ্ছি। অভিযোগগুলো পুরোটা সত্য নয়। মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম আলমগীর জনকণ্ঠকে বলেন, নদীর জায়গা দখল করায় কয়েকটি ভাঁটির ছাড়পত্র নেই। আমি এখানে নতুন এসেছি। ইটের ভাঁটির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান আছে। সব ইটভাঁটির কাগজপত্র দেখে অভিযান চালাতে সময় লাগবে।

×