ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১

নোয়াখালীতে লবণাক্ত জমিতে তরমুজ চাষে তিন গুণ লাভ

গিয়াসউদ্দিন ফরহাদ

প্রকাশিত: ০১:০৭, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ০১:১১, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নোয়াখালীতে লবণাক্ত জমিতে তরমুজ চাষে তিন গুণ লাভ

জমিতে তরমুজের বীজ রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন

নোয়াখালীতে জমিতে তরমুজের বীজ রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কিষান-কিষানিরা। বিবিরহাট গ্রামের বিলের জমিতে তরমুজের বীজ রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন মানবেতর জীবন যাপনকারী দৈনন্দিন খেটে খাওয়া কৃষকরা।
অপরদিকে বঙ্গোপসাগরের মেঘনা বক্ষে জেগে ওঠা নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এখন চলছে তরমুজ আবাদের মহাযজ্ঞ। কোথাও তরমুজের বীজ রোপণের কাজ চলছে, কোথাও আবার সার, পানি ও কীটনাশক ছিটাচ্ছেন কৃষক। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মাঠে মাঠে চলছে এমন ব্যস্ততা। অল্প সময়ে বেশি লাভ হওয়ায় পতিত জমিতেও প্রথমবারের মতো তরমুজ চাষে নেমেছেন অনেকে।
বৃহস্পতিবার সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটা, লন্ডনী মাকের্ট, ভূইয়ার হাট, টাংকিরগাটের পাশবর্তী গ্রামগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, বিলের মধ্যে জমি প্রস্তুতির কাজ শেষে জমিতে তরমুজের বীজ রোপণ করা হচ্ছে। পুরুষের সাথে নারী শ্রমিকেরা জমিতে তরমুজের বীজ বসিয়ে দিচ্ছেন।

কিছু মাঠে বীজ রোপণ শেষ হওয়ায় সেখানে অনবরত পানি ছিটানো হচ্ছে। দূরের মেঘনা নদীতে কিংবা পুকুরে জমা পানি সেচযন্ত্রের সাহায্যে পাইপ দিয়ে আনা হচ্ছে খেতে। প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাঁচ বছর আগেও নোয়াখালীর অধিকাংশ এলাকায় এমন চাষের পর জমি অনাবাদি পড়ে থাকত। শুষ্ক মৌসুমে মাটিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যেত।

তাই বৃথা পরিশ্রম হবে ভেবে কেউ চাষাবাদের চেষ্টাও করতেন না। এখন সেই জমিগুলোই হতভাগ্য কৃষকদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে তরমুজচাষিদের। অল্প সময়ে বিনিয়োগের দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ লাভ করায় দিন দিন তাদের ভরসা হয়ে উঠছে লবণসহিষ্ণু তরমুজ চাষ। নোয়াখালীতে চরবাটা গ্রামের কৃষক আবুল হাসেম বলেন, গত বছর তরমুজে ব্যাপক লাভ হয়েছিল।

কিছু কিছু কৃষক বিঘাপ্রতি লাখ টাকার বেশি লাভ করেছিলেন। এ কারণে এবার অনেক বেশি কৃষক তরমুজের পেছনে উঠেপড়ে লেগেছে। তিনি নিজেও এ বছর ৩০ বিঘা জমিতে তরমুজের বীজ রোপণ করেছেন। এ বছর চাষের খরচ, সারের দাম, বীজের দাম সবই বেশি। মৌসুমি শ্রমিকদেরও যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। নোয়াখালীর চেয়ারম্যানঘাট এলাকার একটি খেতে বীজ রোপণ করতে করতে রনলাল দাস নামের এক কৃষক বলছিলেন, ‘সারা বেলা ৩৫০ টাকা  আবার কখনো ৫০০ টাকা মজুরিতে কাজ করতিছি এইখানে।

এখন আমাগের দম ফেলার সময় নেই। প্রতিবছর তরমুজ চাষের মৌসুম শুরু হলি এই এলাকার নারীরা ও ঘরের কাজ শেষ করে কয়েক হাজার টাকা আয় করতি পারে।’  নোয়াখালী জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় মাত্র ৮৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছিল। এরপর ২০২১ সালে তরমুজ চাষ হয় ৫৮০ হেক্টর জমিতে। ২০২২ সালে উপজেলায় তরমুজ আবাদের জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯০৫ হেক্টরে। ২০২৩ সালে উপজেলায় ১ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়।

আর ২০২৪ সালে তরমুজ আবাদের জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২ হাজার  হেক্টরে। তবে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে চলতি বছর সবচেয়ে বেশি জমিতে তরমুজ চাষ করছেন কৃষকেরা। এবার জেলার ৩টি উপজেলায় তরমুজ আবাদের জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭০০ হেক্টরে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধান চাষের চেয়ে তরমুজে লাভ বেশি। ধানের বীজ বোনা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তুলতে অন্তত পাঁচ মাস সময় লাগে। এরপর খরচ বাদে এক বিঘা জমির ধান বিক্রি করে লাভ হয় সর্বোচ্চ ৯ হাজার টাকা।

×