ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১

ভোলার পারিবারিক গোরস্তানে দাফন সম্পন্ন

গণঅভ্যুত্থানের ৬ মাস পর লাশ মিলল নিখোঁজ হাসানের

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভোলা

প্রকাশিত: ০০:২৪, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গণঅভ্যুত্থানের ৬ মাস পর লাশ মিলল নিখোঁজ হাসানের

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে নিহত মো. হাসানের কফিন কাঁধে শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মিছিল করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন

৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে নিহত ভোলার  মো. হাসানের (১৯)  মরদেহ ৬ মাস পর তার স্বজনরা খুঁজে পেয়েছেন। শনিবার সকালে ঢাকা থেকে ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের সামান্দার এলাকায় তার বাড়িতে মরদেহ এলে স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। জানাজা শেষে নিজ গ্রামে শহীদ হাসানকে সমাহিত করা হয়। 
শনিবার সকালে ভোলার কাচিয়া ইউনিয়নের সামান্দার গ্রামের  বাড়িতে  সরেজমিনে দেখা যায়, সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে বাবা মোঃ মনির হোসেন নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন। কখনও ছেলের ছবি হাতে নিয়ে অঝোরে কাঁদছেন। মা গোলেনুর বেগম শোকে মুর্ছা গেছেন। পাশে স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে।

হাসানের স্বজনরা জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিগত সরকারের পতন হলে হাসান তার ভগ্নিপতির সঙ্গে বিজয় মিছিলে অংশ নেয়। এসময় পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়লে হাসান নিখোঁজ হন। তারপর থেকে স্বজনরা অনেক খোঁজাখুঁজি করলেও হাসানের কোনো সন্ধান পায়নি।

৬ মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের সহায়তায় স্বজনরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে সংরক্ষিত ৭ টি মরদেহ দেখেন । কিন্তু মৃতদেহের মুখে গুলি লাগায় চেহারা  বোঝার উপায় ছিল না। পরে হাসানের মরদেহ ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে শনাক্ত করে নিশ্চিত করা হয়।
হাসানের বাবা মনির হোসেন বলেন, ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন হাসান। দীর্ঘ ছয় মাসেও সন্ধান পাওয়া যায়নি তার। অবশেষে  ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে তার মরদেহ পাওয়া গেছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ ডিএনএ টেস্টে নমুনা দেন এবং হাসানের ডিএনএ  নমুনার সঙ্গে তাদের ডিএনএ নমুনা মেলে। পরে লিখিতভাবে ঢাকা মেডিক্যাল থেকে  পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তরের করে।  দাফন শেষে হাসান হত্যার বিচারের  দাবিতে  বিক্ষোভ মিছিল করেন বৈষম্যবিরোধীরা।এর আগে গত শুক্রবার  জুমার নামাজ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের সামনে হাসানের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে মরদেহ হাসানের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। 
শহীদ হাসানের পিতা মোঃ মনির হোসেন আরও বলেন, আমার ছেলে যদি অন্যায় করত তা হলে কোনো দুঃখ থাকত না। কেন নির্মমভাবে হত্যা করা হলো? দেশবাসীর কাছে বিচার চাই। আমি আইনের সহায়তা চাই।
শহীদ মো. হাসান ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সামান্দার  গ্রামের জাহাঙ্গীর বেপারিবাড়ির ভাড়াটিয়া  মো. মনির ও গোলেনুর বেগম দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান ও সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তান ছিলেন। পরিবারের সচ্ছলতার জন্য হাসান তার ভগ্নিপতির সঙ্গে ঢাকায় দোকানে চাকরি করত। তার আয়ের টাকায় ভোলায় তার বাবা-মায়ের পরিবারের সংসার চলত। 
হাসানের বড় বোন শাহনাজ বেগম বলেন, আমার ভাই কি দোষ করল যে তাকে প্রাণে মেরে ফেলতে হয়েছে। আমরা দীর্ঘ ৬ মাস পর ভাইয়ের লাশ পেয়েছি। আমার ভাইয়ের হত্যার সঠিক বিচার চাই। হাসানকে যারা হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি দিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

×