ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩ ফাল্গুন ১৪৩১

আলেমদের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে দুনিয়াও শেষ, আখেরাতও শেষ: ড. মিজানুর রহমান আজহারী

 নিজস্বসংবাদদাতা, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ।। 

প্রকাশিত: ১৮:৫০, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১৮:৫১, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আলেমদের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে দুনিয়াও শেষ, আখেরাতও শেষ: ড. মিজানুর রহমান আজহারী

জনপ্রিয় ইসলামী স্কলার ও গবেষক ড. মিজানুর রহমান আজহারী বলেছেন, এদেশের আসল পরিচয় হলো ইসলাম। যাঁরা ইসলামের কথা বলে, যাঁরা কুরআনের কথা বলে, এঁরা ধর্ম ব্যবসায়ী নয়। আলমদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন না। আলেম বিদ্বেষী হবেন না। তাহলে দুনিয়াও শেষ, আখেরাতও শেষ। নিজেকে ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড় করাবেন না। 

শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারী) ময়মনসিংহের সার্কিট হাউস মাঠে লাখো তৌহিদী জনতার উদ্দ্যেশে পবিত্র কুরআনের সুরা আজহাবের ৩৫ নম্বর আয়াতের তাফসির কালে তিনি একথা বলেন। 

ড. আজহারী বলেন, এই আয়াতে আল্লাহ তালায় দশটি বৈশিষ্টের কথা বলেছেন। আল্লাহ বলেছেন. নারী ও পুরুষ সমান। এই আয়াতের মধ্যদিয়ে নারীদের সম্মান দেখিয়েছেন। দশটি বৈশিষ্টের মধ্যে প্রথমটি হলো মহান আল্লাহ মুসলিম নারী ও পুরুষকে পছন্দ করেন। কেউ যদি নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করেন, তিনি কখনো একথা বলতে পারবেন না যে, তিনি সেটা মানবেন না। আল্লাহ আদেশ সবাইকেই মানতে হবে। যাঁরা আল্লার আদেশের সাথে আত্মসমর্পণ করেন, তারাই মুসলিম। আল্লার বিধানের সামনে বিশ্বাসী মুসলমানের কোনো বিধান থাকে না। 

 

শতবর্ষী আলেমে দ্বীন হাফেজ মাওলানা নূরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক শহীদুল্লাহ কায়সারের সঞ্চালনায় মাহফিলে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মিডিয়া বিভাগের সম্পাদক অ্যাড. মতিউর রহমান আকন্দ, আয়োজক কমিটির আহব্বায়ক অধ্যক্ষ মু. কামরুল হাসান মিলন, যুগ্ম আহব্বায়ক আসাদুজ্জামান সোহেল। 

ড. মিজানুর রহমান আজহারী মঞ্চে এসে উপস্থিত হলে আয়োজক কমিটি আল ইসলাম ট্রাস্ট এবং বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। একই সময় বিএনপির নেতাকর্মীরাও ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।

এ মাহফিলকে সফল করতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন ইসলামি দল, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর ছিলেন। মাহফিলের দুই লাখ বর্গফুটের প্যান্ডেল ছাড়াও ১৬ একর সার্কিট হাউস মাঠ উপচে মানুষের ঢল নামে আশপাশের পার্ক ও সড়কগুলোতে। 

 

এছাড়াও জিলা স্কুল মাঠ, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল মাঠসহ উমেদ আলী মাঠেও মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ে। জিলা স্কুল হোস্টেল মাঠে কয়েক হাজার নারীর উপস্থিতি ছিল। মাঠসহ বিভিন্ন পয়েন্ট ২২টি এলইডি পর্দার ব্যবস্থা করা হয়। তিনটি মেডিক্যাল ক্যাম্প, চার শতাধিক অজুখানা ও ওয়াশরুম এবং পর্যাপ্ত খাবার পানির ব্যবস্থাও ছিল। গোটা নগরীর ছিল অনেকটাই ফাঁকা। যেন মানুষের ঢল নেমেছিল মাহফিল এলাকায়। প্রায় দশ হাজার স্বেচ্ছাসেবকসহ বিজিবি, বিপুল সংখ্যক র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার ভিডিপির সদস্য নিয়োজিত ছিলেন। 

মাহফিলকে কেন্দ্র করে দশ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছে বলে অনেকেরই ধারনা। সকাল আটটায় মাহফিল শুরু হয়ে বিকেল চারটায় ড. আজহারী বক্তব্য ও দোয়ার মধ্যদিয়ে শেষ হয়। 

এর আগে শুক্রবার রাত থেকেই মাহফিল স্থলে জনতার ঢল নামে। সকাল সাড়ে ১১টার মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যা সার্কিট হাউজ মাঠ। চোখ যতদূর যায়, শুধু মানুষ আর মানুষ দেখা যায়। লাখো জনতার উপস্থিতির কারণে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে গেলে সাধারণত নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না বলে মোবাইল কোম্পানি বাংলালিংক মাহফিল এলাকায় অস্থায়ীভাবে একটি টাওয়ার বসায়। 

 

ড. মিজানুর রহমান আজাহারী বলেন, ইসলাম ছাড়া আমরা অন্য কিছু মানি না, মানবো না। ইসলাম বিরোধী কোনো মতবাদ মানবো না। ইসলাম আছে, ইসলাম থাকবে। যারা ইসলামকে মাটির নিচে পুঁতে রাখতে চায়, ওরা জানে না ইসলামের ধর্ম কী। ইসলাম চারা বীজের মতো, ইসলামকে জমিনে গেড়ে দিলে শাখা-প্রশাখার মতো আসমানের দিকে উঠে যায়। তিনি বলেন, এ পৃথিবীতে সবচেয়ে দামি হলো বিশ্বাস, বিশ্বাস ছাড়া জগত চলে না। 

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কিসের ওপর টিকে থাকে। বিশ্বাসের ওপর টিকে থাকে। পার্টনারশীপের ব্যবসাও টিকে থাকে বিশ্বাসের ওপর। বিশ্বাসীরা টিকে না থাকলে পৃথিবী আল্লাহ টিকিয়ে রাখতেন না। একজন বিশ্বাসী বেঁচে থাকলে আল্লাহ পৃথিবী র্ধ্বংস করবেন না। জগতটাই চলে বিশ্বাসের উপর। বিশ্বাস আছে বলেই দেশ টিকে আছে। 

তিনি বলেন, ৬টি বিষয়ে বিশ্বাস রাখাই হলো ঈমান। ঈমান ছাড়া নেক আমলের কোনো স্বীকৃতি নেই। যার হৃদয়ে ঈমান আছে, সেই সফল। সফল হয়েছেন যাঁরা, ঈমান এনেছেন তাঁরাই। ঈমান হলো সফলতার মাপকাটি। অনুগত বান্দাদের আল্লাহ ভালোবাসেন। আল্লাহর সামনে যখন দাঁড়াবেন (নামাজে) তখন আনুগত্যের সাথে দাঁড়াবেন। মিথ্যা হলো মহাপাপ। মোবাইল ফোনের কারণে মিথ্যা আরো বেড়েছে। আমাদের অনেকেই মিথ্যা বলেন। 

আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেন, আমাদের দেশে মিথ্যা সাক্ষ্যে অনেকের ফাঁসিও হয়েছে। আমার নবী (স.) জীবনে একটা মিথ্যাও বলেনেনি। মিথ্যাবাদীদের সাপোর্ট করা যাবে না। সত্য মানুষকে পূণ্যের পথ দেখায়। মিথ্যা মানুষকে পাপের পথ দেখায়। আর পাপ মানুষকে জাহান্নের পথ দেখায়। এক্ষেত্রে আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আপনি কোন পথে যাবেন। 

তিনি আরো বলেন, ধৈর্য্যশীল নারী ও পুরুষকে আল্লাহ পছন্দ করেন। বিপদ আসলে ধৈর্য্যরে সাথে সবর করতে হবে। বিপদে ধৈর্য্যধারণ করতে হবে। আমাদেরকে গালি দেয় মৌলবাদী আর রাজাকার বলে। রাজাকার রাজাকার বলে গালি দেয়ার দিন শেষ। রাজাকার শব্দটা এখন একটা অ্যাওয়ার্ড হয়ে গেছে। 

পরিস্থিতি পাল্টে দিতে আল্লাহর সময় লাগে না। আমাদেরকে বলে মৌলবাদী। আমরা আসল কথা বলি। আমরা মা-মাটির কথা বলি। দেশপ্রেমের কথা বলি। জনগণ ও ইসলামের কথা বলি। আমরা দেশের সমৃদ্ধির কথা বলি। এজন্য আমাদের বলা হয় মৌলবাদী। আবার আমাদেরকে বলে ধর্ম ব্যবসায়ী। আমরা ধর্মের সত্য কথা প্রচার করি। দেশ ও জনগণের যেটা ভালো সেটাই বলি।

আফরোজা

×