![কোটিপতিদের গ্রাম আছে যে জায়গায়! কোটিপতিদের গ্রাম আছে যে জায়গায়!](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/WhatsApp-Image-2025-02-13-at-53243-PM-2502131359.jpg)
বাউফলের তেঁতুলিয়া নদীর তীরবর্তী একটি গ্রামের নাম সহিস্যা তাতেঁরকাঠি। এক সময় এ গ্রামের মানুষ ছিল অভাবী। ঠিকমত তিন বেলা খেতে পারতেন না। তারা খাল-নদী আর বিলে মাছ ধরে কোন রকম জীবিকা নির্বাহ করত। আজ সেই গ্রামের মানুষ কোটিপতি।
ভাবতেই অবাক লাগে! মনোবল আর কাজের প্রতি একাগ্রতা তাদেরকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এই তেঁতুলিয়া নদী একদিন তাদের সর্বস্ব হারা করে ছিল। ভিটে-মাটি, ফসলী জমি কেঁড়ে নিয়েছে। বর্তমানে সেই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এখন কোটিপতি। এ গ্রামে রয়েছে তাদের আলিশান বাড়ি। বহুতল পাকা ভবন। ইলেকট্রিক সিটির বধৈলতে ঘরে মধ্যে শিতাতাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রও বসিয়েছেন কেউ কেউ। ডিস এন্টেনাও বসানো হয়েছে বাড়ির ছাদে। তাঁরা ঘরে বসে রিমোট টিপে হরেক রকম টিভি চ্যানেল দেখছেন। তাই গ্রামটি এখন কোটিপতিদের গ্রাম হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে।
শুধু সহিস্যা তাঁতেরকাঠি গ্রামই নয়, এরকম আরও অনেক কোটিপতি রয়েছেন, নাজিরপুর, ও ধানদি, ডালিমা ও ছোট ডালিমা গ্রামেও। এরমধ্যে আবার তাঁতেরকাঠি গ্রামের একজন মানুষ রয়েছেন, যিনি দেশের একটি শীর্ষ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক। তিনি গোটা বাউফলের মানুষকে দু হাতে দান করে যাচ্ছেন। তিনি নিজেও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। তার এলাকার বিশেষ করে নারীদের উচ্চ শিক্ষিত করে তোলার জন্য এলাকায় একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন।
এ গ্রামের মানুষগুলোর কোটিপতি হওয়ার পিছনে রয়েছে মনোবল আর কাজের প্রতি একাগ্রতা। এক সময় তাঁরা কাজের সন্ধানে চলে যান ঢাকা, চট্রগামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এরমধ্যে বেশির ভাগ মানুষ চলে আসেন ঢাকায়। কাজ নেয় বংশাল, নাজিরাবাজার, নয়াবাজার, নর্ধসাউথ রোড, ধোলাইপাড়, মীর হাজিরবাগ এলাকার প্লেনসিটের দোকানে। এদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষই শ্রমিকের কাজ করত। যোগ্যতা অনুযায়ী কেউ কেউ প্লেনসিটের দোকানে ম্যানেজার ছিলো।
এসব প্লেনসিটের দোকোনে ৫-৭ বছর করে কাজ করে তারা। এ সুবাধে ব্যবসায়ীক ধারণা অর্জন করেন তাঁরা। এরপর থেকে তারা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন । লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখে আগাতে থাকেন। শুরুতে ৪-৫ জন মিলে জমানো শ্রমের টাকা দিয়ে ঢাকার ওইসব এলাকায় দোকান ভাড়া নিয়ে প্লেনসিটের ব্যবসা শুরু করেন। আবার কেউ কেউ একক ভাবে ব্যবসা শুরু করেন। ৮-১০ বছরের ব্যবধানে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে যায়।
একদিন তাঁরা দোকানে শ্রমিকের কাজ করত। আজ তাদের দোকানে অন্যরা শ্রমিকের কাজ করেন। এসব গ্রামের ৪-৫ হাজার মানুষ বর্তমানে ব্যবসা করছেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। তারা উর্পাজিত অর্থ দিয়ে শুধু গ্রামেই নয়, এদের মধ্যে কেউ কেউ ঢাকায় বাড়ি করেছেন, গাড়ি কিনেছেন। নিজেরা সুশিক্ষিত না হলেও সন্তানদের উচ্চ শিক্ষিত করতে নামি-দামি স্কুল-কলেজে পড়ালেখা করাচ্ছেন। তাঁরা বছরের বিশেষ দিনগুলোতে বেড়াতে আসেন গ্রামে। তখন তাদের পদচারণায় গ্রামগুলো আলোকিত হয়ে উঠে। বিভিন্ন সামাজিক কাজে দান সাহয়তা করেন তাঁরা।
তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্য, যারা গ্রামের বাড়িতে থাকেন, তাদের স্বাবলম্বী করতে গ্রামে জমি কিনে দেন তাঁরা। সেই জমি চাষ করে তারা ফসল ফলাচ্ছেন। কেউ পোল্ট্রি ফার্ম, মাছের ঘের করছেন। এ ভাবে তাদের সহায়তায় স্বাবলম্বী হচ্ছে গ্রামে থাকা অন্যান্য মানুষগুলো।
রিফাত