ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১

বিশ্বসাহিত্যের বিপুল সম্ভার যে স্টলে

জনকণ্ঠ ফিচার

প্রকাশিত: ২৩:৪৮, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বিশ্বসাহিত্যের বিপুল সম্ভার যে স্টলে

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের দৃষ্টিনন্দন স্টল ক্রেতা ও বইপ্রেমীদের আকর্ষণের  কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে

এবারের মেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্টলটি যে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সে কথা বলাই বাহুল্য। বিআরটিসির ডাবল ডেকার বাসের আদলে চমৎকার স্টল করা হয়েছে। দূর থেকে দেখেই ছুটে যেতে ইচ্ছা করে। তবে তার চেয়ে বড় কথা, এই স্টলে রয়েছে বিশ্বসাহিত্যের বিপুল সম্ভার। হ্যাঁ, অমর একুশে বইমেলায় মূলত পাওয়া যায় বাংলাদেশী লেখকদের বই।

পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান নিয়মিতভাবে অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশ করছে। এর ফলে মেলায় এসে বাইরের দুনিয়ার সাহিত্য সম্পর্কেও জানার সুযোগ পাচ্ছেন পাঠক। আর এক্ষেত্রে দীর্ঘকাল ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে দেশব্যাপী পরিচিত নন্দিত প্রতিষ্ঠান বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। এই কেন্দ্র সম্পর্কে বইপ্রেমীরা যথেষ্টই অবগত।

প্রতিষ্ঠানটি আলোকিত মানুষ গড়ার স্বপ্নে সারাদেশে পাঠাগার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। একইসঙ্গে প্রকাশ করছে বই। পৃথিবীর নানা প্রান্তে নানা ভাষায় লেখা বই অনুবাদ করে পাঠকের হাতে তুলে দিচ্ছে। একই উদ্দেশ্যে প্রায় প্রতি বছর স্টল নিচ্ছে অমর একুশে বইমেলায়। এবারও আছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। না, খোঁজাখুঁজি করতে হবে না। এবারের মেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্টলটিই কেন্দ্রের। 
অমর একুশে বইমেলার ১২তম দিনে ঢু মারার সুযোগ হয় বিশ^সাহিত্য কেন্দ্রের স্টলে। প্রকাশনার দিক থেকে এটি একেবারেই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের। লম্বা স্টলে প্রচুর বই সাজিয়ে রাখা হয়েছে। অধিকাংশই বিশ্বসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। তা ছাড়া বিশ^সাহিত্য কেন্দ্রের বই সব সময়ই সুনির্বাচিত। যে বইগুলো না পড়লেই নয়, তেমন বইয়ের বিশাল সংগ্রহ এখানে। অনুবাদের মানের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়। নেপথ্যে এসব বিষয় তদারকি করেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। হ্যাঁ, তিনিই প্রতিষ্ঠানের প্রাণপুরুষ। 
স্টলে লক্ষ্য করে দেখা যায়, সেখানে প্রদর্শিত হচ্ছে জগদ্বিখ্যাত লেখকদের উপন্যাস ও গল্পের অনুবাদ। উপন্যাসের কথা যদি বলি, স্টলে আছে লিও টলস্টয়ের ‘শয়তান’, ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’, হেরমান হেসের ‘সিদ্ধার্থ’, নিকোলাই অস্ত্রভস্কির ‘ইস্পাত’, আলবেয়ার কাম্যুর ‘দি প্লেগ’ বা ‘দি আউট সাইডার।’ ফিওদর দস্তয়ে ভস্কির বিখ্যাত উপন্যাস ‘বঞ্চিত লাঞ্ছিত’, ভিক্টর হুগোর ‘লে মিজারেবল’, বার্ট্রান্ড রাসেলের ‘আলস্যের জয়গান’, ইভান তুর্গেনেভের ‘পিতা পুত্র’, নিকোলাই গোগলের ‘ডেড সোলস’Ñ আর কত নাম বলব! সবই চমৎকার সাজিয়ে রাখা হয়েছে।  
বিশ^সাহিত্যের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত ও সমাদৃত গল্প সংকলন প্রকাশিত হয়েছে কেন্দ্র থেকে। রুশ সাহিত্যিক আনন্ত চেখভের শ্রেষ্ঠ গল্প পাওয়া যাচ্ছে স্টলে। নিকোলাই গোগল, ডি.এইচ. লরেন্স ও জ্যাক লন্ডনের শ্রেষ্ঠ গল্প আছে। পাওয়া যাচ্ছে জেমস জয়েসের শ্রেষ্ঠ গল্প। ম্যাক্সিম গোর্কি, ও হেনরী, মার্ক টোয়েন, গী দ্য মোপাসাঁর মতো বিখ্যাত লেখকদের শ্রেষ্ঠ গল্প আছে। লিও তলস্তয়ের ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ বা ‘আনা কারেনিনা’র কথা কে না জানে?

দেশ ও কালোত্তীর্ণ গ্রন্থ দুটির অনুবাদ এখানে পাওয়া যাচ্ছে। বিশ^সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ গল্প, সেরা ছোটগল্প আছে। আছে হোমরের ‘ওডেসী’ বা কালিদাসের ‘মেঘদূত’-এর মতো মহাকাব্য। বিশ^ বিখ্যাতদের কবিতা ও নাটকের অনুবাদ আছে। 
কয়েক বছর আগের একটি ক্যাটালগ অনুযায়ী, তাদের প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে বিশ^সাহিত্য বিবেচনায় বিখ্যাত উপন্যাস রয়েছে ৪৭টি, গল্পগ্রন্থ ২৭টি, মহাকাব্য ৭টি এবং কাব্যগ্রন্থ রয়েছে ৩টি। এ ছাড়া সংস্কৃতি বিষয়ক রচনা আছে ৫টি। গ্রিক নাটক আছে ১৬টি, ফরাসি নাটক ৬টি, মার্কিন নাটক ৩টি, রুশ নাটক ১টি, নরওয়ের নাটক ৭টি, সুইডেনের ১টিসহ অনেকগুলো দেশের নাটক অনুবাদ করা হয়েছে।

বর্তমানে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে বলেন জানিয়েছেন স্টলের কর্মীরা। একইভাবে কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত বইয়ের মোট সংখ্যা কয়েক বছর আগে ছিল ৫৫৮টি। বেশিরভাগই বিশ^সাহিত্যের অমর সৃষ্টি। বর্তমানে এই সংখ্যাটিও বেড়েছে। মেলা উপলক্ষে আসছে নতুন বইও। সব মিলিয়ে দারুণ সমৃদ্ধ একটি স্টল। বিশ্বসাহিত্যের বিপুল সম্ভারের খোঁজে পাঠক প্রতি দিনই স্টলটিতে যাচ্ছেন। 
মেলা মঞ্চের আয়োজন ॥ বুধবার বইমেলার মূলমঞ্চে প্রচলিত ধারার আলোচনা ছিল না। এদিন কবিতা বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাসান রোবায়েত। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মঈন জালাল চৌধুরী এবং আশফাক নিপুন। সভাপতিত্ব করেন ফরহাদ মজহার।

×