ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১

স্কুলছাত্র কাশেম নিহতে উত্তাল গাজীপুর:শহরে মশাল ও বিক্ষোভ মিছিল 

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ 

প্রকাশিত: ২৩:৪১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

স্কুলছাত্র কাশেম নিহতে উত্তাল গাজীপুর:শহরে মশাল ও বিক্ষোভ মিছিল 

গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর বাড়িতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনায় আহত একজন ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। বুধবার বিকেলে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আই সি ইউ) ১৬ নম্বর বেডে মারা যান তিনি। তার মৃত্যুর খবরে আবারো উত্তাল হয়ে উঠেছে গাজীপুর।

কাশেমকে হত্যার প্রতিবাদে ও জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রাতে জেলা শহরে মশাল ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা। বৃহষ্পতিবার জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। এদিকে নিহত কাশেমকে প্রতিবিপ্লবের প্রথম শহীদ বলে আখ্যায়িত করেছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।

নিহতের নাম- মোঃ কাসেম (১৮)। তিনি গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানাধীন বোর্ড বাজার দক্ষিণ কলমেশ্বর এলাকার মৃত হাজী জামালের ছেলে।  

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুর জেলা কমিটির সদস্য সচিব মোঃ মহসিন উদ্দীন জানান, গত ৭ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় মোঃ কাসেমসহ গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানার সাইন বোর্ড কামারজুরি এলাকার ফজলুর রহমানের ছেলে শুভ শাহরিয়া (১৬), শরীফপুর এলাকার মেহের আলীর ছেলে ইয়াকুব (২৪), টঙ্গী পূর্ব থানার মধুমিতা রোড এলাকার গণেশ ঘোষের ছেলে সৌরভ (২২) এবং সদর থানার জোড়পুকুর এলাকার ইব্রাহিম মিয়ার ছেলে হাসান (২২) ও অপর ২জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে মোঃ কাশেম হাসপাতালের আইসিইউ’তে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার বিকেল ৩টায় মারা যান। মাথাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে গুরুতর আঘাত রয়েছে তার।  

 

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুর জেলা কমিটির আহবায়ক আব্দুল্লাহ আল মুহিম জানান, মো. কাশেমকে হত্যার প্রতিবাদে ও জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বুধবার রাতে গাজীপুর শহরের শিববাড়ি হতে জেলা প্রশাসক কার্যালয় এলাকায় মশাল ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা। বৃহষ্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের ভাওয়াল রাজবাড়ি মাঠে এবং সাড়ে ১১ টায় গাছা থানার বোর্ডবাজারের আল-হেরা সিএনজি পাম্প স্টেশন মাঠে পৃথক জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।  

 

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেইসবুকে কাশেমের মৃত্যুর খবরটি  পোস্ট করে লিখেছেন, গাজীপুরে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত কাশেম শহীদ হয়ে গেছেন। প্রতিবিপ্লবের প্রথম শহীদ আমার এই ভাই। ওই পোস্টে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে লিখেছেন, “ইন্টেরিম, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করো, করতে হবে।”

 

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে গাজীপুর মহানগরীর সদর থানার ধীরাশ্রমের দাক্ষিণখান এলাকায় গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ. ক. ম. মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের খবর পেয়ে তা প্রতিহত করতে ঘটনাস্থলে যায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের কিছু ছাত্র।

এসময় মন্ত্রীর অনুসারী আওয়ামী লীগ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা ওই বাড়ি ঘিরে ফেলে। তারা ১৭ জন ছাত্রকে আটক করে বেধড়ক মারধোর করে ও কোপায়। একই সময় স্থানীয় মসজিদের মাইকে মন্ত্রীর বাড়িতে ডাকাত পড়েছে বলে ঘোষণা দিয়ে লোকজনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। মাইকিং শুনে আশপাশের লোকজনও সেখানে এসে আটক ছাত্রদের মারধোর করে।

খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। পরে সেখান থেকে গুরুতর আহত মোঃ কাশেম (১৮)সহ ৭জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। লাঠিসোটা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ছাত্রদের উপর হামলা চালিয়ে প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে মারধোর ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের গাজীপুর জেলার আহবায়ক আব্দুল্লাহ আল মুহিম বাদী হয়ে রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) জিএমপি’র সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২৩৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ২শ’ থেকে ৩শ’ জনকে আসামী করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ মামলায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ।

 

আফরোজা

×