![গোপনে বলতাম,আল্লাহ এই ডাইনির হাত থেকে আমাদের বাঁচাইয়া দাও গোপনে বলতাম,আল্লাহ এই ডাইনির হাত থেকে আমাদের বাঁচাইয়া দাও](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/১৩-2-2502121640.jpg)
পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের গুমঘর (আয়নাঘর) পরিদর্শন শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা বিশিষ্ট নাট্য নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার ভেরিফাইড ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘এ রকমই একেকটা আয়নাঘরে আমরা সতেরো কোটি মানুষ আটকা ছিলাম ষোলো বছর। আর গোপনে বলতাম, আল্লাহ এই ডাইনির হাত থেকে আমাদের বাঁচাইয়া দাও।’
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) উপদেষ্টা ও নির্মাতা ফারুকী গুমের শিকার বন্ধু সাজেদুল ইসলাম সুমনকে স্মরণ করে তার ফেসবুকে একটি আবেগঘন পোস্ট দেন। জনকণ্ঠের পাঠকদের জন্য তার পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
‘এ রকমই কোনো একটা ঘরে হয়তো আমার বাল্যবন্ধু সাজেদুল ইসলাম সুমনকে আটকে রাখা হয়েছিল। এ রকমই কোনো একটা ঘরে অজানা আশংকায় সে কেঁপে কেঁপে উঠতেছিল। এইরকম একটা ঘরে বসেই হয়তো সে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে কাঁদতে কাঁদতে বলছিল, “আল্লাহ, তুমি আমারে এই বারের জন্য বাঁচাইয়া দাও। আমি আর রাজনীতি টাজনীতি করবো না। আমার সন্তানের জন্য আমারে বাঁচাইয়া দাও। আমার মায়ের জন্য আমারে বাঁচাইয়া দাও।”
এরকমই একেকটা ঘরে আমরা সতেরো কোটি মানুষ আটকা ছিলাম ষোলো বছর। আর গোপনে বলতাম, আল্লাহ এই ডাইনির হাত থেকে আমাদের বাঁচাইয়া দাও।
সুমনের সাথে আমার শেষ কথা হয় উত্তরার এক হাসপাতালে লুকাইয়া থাকা অবস্থায়। ওর ভাগনে আবরারের একটা শ্যুট ছিলো আমার সাথে। স্পষ্ট মনে আছে ওর শেষ কথা, ‘দোস্ত, আবরাররে তুই ইজি কইরা নিস। নাইলে অ্যাকটিং খারাপ করব’।
এমনই এক জালিমের শাসনে ছিলাম যে তোর জন্য, সুমন, একটা কথাও বলতে পারি নাই। পরে জানলাম মানুষরুপী জানোয়ার জিয়াউল আহসানের নির্দেশে তোরে ইনজেকশন দিয়ে মেরে শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেয়।
যে বাবার ঘরে ফিরে সন্তানের সাথে ভাত খাওয়ার কথা ছিলো তাকে এই ডাইনির দল শীতলক্ষ্যার মাছেদের খাবারে পরিণত করে।
এই হায়েনাদের হয়ে যখন কেউ কথা বলতে আসে, আমার মাথায় রক্ত উঠে যায়। আমি আমার কমপোজার লুজ করি।’
এর আগে, আজ (১২ ফেব্রুয়ারি) বিদেশি গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনে গেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ড. ইউনূস বলেন, আপনারা সবাই সঙ্গে ছিলেন, কাজেই আমার নতুন করে কিছু বলতে হবে না। এটার বর্ণনা যদি বলতে হয়, তাহলে বলব এটা বীভৎস দৃশ্য। যারা নিগৃহীত হয়েছে, যারা এটার শিকার হয়েছে তারা আমাদের সঙ্গেই আছেন, তাদের মুখের থেকেই শুনলাম কী হয়েছে। এটার কোনো ব্যাখ্যা নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘এরকম টর্চার সেলের সংস্করণ সারা বাংলাদেশ জুড়ে নাকি আছে। কেউ বলে ৮০০, কেউ বলে ৯০০। গত সরকার আইয়ামে জাহেলিয়া প্রতিষ্ঠা করে গেছে সর্বক্ষেত্রে, এটা তার একটা নমুনা।
আয়নাঘর যাতে কেউ ধ্বংস করতে না পারে, প্রমাণ হিসেবে রাখতে সিলগালার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, মানুষের মনুষ্যত্ববোধ বলে যে কোনো জিনিস আছে সেটার থেকে বহু দূরে গভীরে নিয়ে গেছে আয়নাঘরের এই বিভৎস দৃশ্য। নৃশংস প্রতিটি জিনিস হয়েছে এখানে। যতটা শুনি অবিশ্বাস্য লাগে যে এটা কি আমাদেরই দেশ, আমাদেরই জগৎ?
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বিনা কারণে জঙ্গি আখ্যায়িত করে মানুষকে তুলে এনে এসব টর্চার সেলে নির্যাতন করা হতো।
তিনি আরও বলেন, এখন শুনি বাংলাদেশ জুড়েই আরও ২৭-২৮টি আয়নাঘর আছে। আমার ধারণা ছিল শুধু এখানেই আছে। এগুলোর সংখ্যাও নিরূপণ করা যায় না, কতটা জানা আছে, কতটা অজানা আছে।
গুম কমিশনকে এসব আয়নাঘর আবিষ্কার করার জন্য ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা।
সাজিদ