![পাপমোচনে ডুবের মেলা পুণ্যার্থীদের ঢল পাপমোচনে ডুবের মেলা পুণ্যার্থীদের ঢল](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/7-2502121407.jpg)
বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুরের বংশাই নদীতে ডুবের মেলায় ভক্তের ঢল
বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সৈয়দামপুর গ্রামে বংশাই নদীতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দিনব্যাপী ডুবের মেলা। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ডুবের মেলা যুগ যুগ ধরে পালিত হচ্ছে। মাঘী পূর্ণিমায় এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়, যা মানুষের মুখে মুখে ডুবের মেলা নামে পরিচিত। স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, এই মেলায় নদীতে পুণ্যস্নান করলে পাপমোচন হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেলায় জেলার দূর-দূরান্ত থেকে আগত জনগণ পূজা ও স্নান পর্বে অংশগ্রহণ করে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে স্নান উৎসব। নারী-পুরুষ ও কিশোর-কিশোরী স্নান উৎসবে অংশ নেন। পুণ্যার্থীরা বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের পাপমোচন উপলক্ষে ভোরে মানত ও গঙ্গাস্নান পর্ব সমাপন করেন। গঙ্গাস্নান করলে সারা বছরের পাপ মোচন হয়। মনের আশা ও বাসনা পূরণ হয়। এই স্নানে অংশ নিলে পুণ্য মিলে। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসে গঙ্গাস্নানে অংশ নিয়ে তাদের মনের বাসনা পূরণ করে।
এই মেলা ব্রিটিশ শাসনামলে বক্ত সাধু নামে খ্যাত এই সন্ন্যাসীর (মাদব ঠাকুর) মূর্তি প্রতিস্থাপন করে পূজা অর্চনা শুরু করেন। এই পূজা উপলক্ষে তখন থেকে গঙ্গাস্নান ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তখন থেকে এটা ডুবের মেলা নামে পরিচিত। ডুবের মেলায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত স্নান উৎসব চলে। নারী-পুরুষ ও কিশোর-কিশোরী স্নান উৎসবে অংশ নেন। স্নানে অংশ নেওয়া শান্তি রায় বলেন, আমি টাঙ্গাইল শহর থেকে আজকে মাঘী পূর্ণিমার মেলায় এসেছি। এখানে আমি ১০-১২ বছর ধরে আসি। এখানে এসে স্নান করি, অনেক ভালো লাগে। আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি পুণ্যস্থান। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গঙ্গাস্নান হয়। প্রায় ১০০ বছরের ওপরে এই গঙ্গাস্নান চলে আসছে। ডুবের মেলায় যারা আসে তারা মনের বাসনা নিয়ে গঙ্গাস্নান করতে আসেন। গঙ্গাস্নান করলে মনের বাসনা পূরণ হয়। স্নানে অংশগ্রহণ করতে আসা আরতি রায় বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মনে করে যে আজকে এই মাঘী পূর্ণিমার তিথিতে উত্তর বাহিত জলে স্নান করলে সারা বছরের পাপ মোচন হয়। অনেকের মনে আশা থাকে যে স্নান করলে তাদের মনের আশা পূরণ হয়। যাদের ছেলে-মেয়ে হয় না তারা এখানে এসে স্নান করে। একেকজনে একেক রকমের বাসনা নিয়ে এসে স্নান করে।
এ বিষয়ে কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম আল মামুন বলেন, পূর্বপুরুষ থেকেই এই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মাঘী পূর্ণিমায় ডুবের মেলা পালন করে থাকেন। মেলা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসেন। এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা দিচ্ছে।
বোয়ালমারীতে পুণ্যস্নান
নিজস্ব সংবাদদাতা বোয়ালমারী, ফরিদপুর থেকে জানান, বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের জয়নগরে অবস্থিত কয়ড়া কালীবাড়ি সংলগ্ন চন্দনা-বারাসিয়া নদে আড়াইশো বছরের পুরানো ঐতিহ্য মাঘী পূর্ণিমার পুণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসেন পুণ্যার্থীরা। বুধবার সকাল থেকে দিনব্যাপী এ পুণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পুণ্যস্নান ও নানা আয়োজনের পাশাপাশি বসেছে ঐতিহ্যবাহী গ্রাম্য মেলা। তিন দিনব্যাপী চলে এ মেলা। প্রতি বছরের মতো এবারও নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম এ পুণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হয়। জানা গেছে, মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে এ পুণ্যস্নানের মাধ্যমে মায়ের কাছে প্রার্থনা করে নিজেদের পাপ মোচন করেন। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই দূর-দূরান্ত থেকে আসা সনাতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীদের ঢল নামে। এই তীর্থস্নানে হাজারো ভক্ত অংশ নেন। গঙ্গাস্নানের অংশ হিসেবে কুমার নদের এ ঘাটে পবিত্র হতে এ স্নান করা হয়। মা গঙ্গা মন্ত্র, আসমান, সূর্যাগ্য মন্ত্র এরকম নানা মন্ত্র পাঠ করা হয়। মাগুরা থেকে আগত শেফালী রানী দাস জনকণ্ঠকে জানান, কয়েক বছর ধরে এখানে আসি। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এবারও এসেছি। স্নান করে মন্ত্র পাঠ করে প্রসাদ গ্রহণ করেছি।