![গফরগাঁওয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে অবৈধ ২৭ ইটভাঁটি গফরগাঁওয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে অবৈধ ২৭ ইটভাঁটি](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/6-2502121403.jpg)
গফরগাঁওয়ে অবৈধ ইটভাঁটিতে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে ফসলি জমি ও জনস্বাস্থ্য। অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এসব ইটভাঁটি চালু রেখেছেন মালিকরা। এ জন্য তাদের আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হচ্ছে। এ উপজেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্সবিহীন ২৭টি অবৈধ ইটভাঁটি রয়েছে। তার মধ্যে আবার ৫টি ৩০ ফুট উচ্চতার সনাতন পদ্ধতির ড্রামচিমনির ইটভাঁটি। বহু বছর আগে থেকেই নিষিদ্ধ একটি ড্রাম চিমনির ইটভাঁটি এলাকাবাসীর বাধাবিপত্তির মুখে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় এ বছরই নতুন করে চালু করা হয়েছে।
সরেজমিন উপজেলার পাতলাশি, দীঘা, পুখুরিয়া, নিগুয়ারি, চাকুয়া, কুরচাই, ছোট বড়াই, ছোট বারইহাটি গ্রামের বেশ কয়েকটি ইটভাঁটি ঘুরে দেখা গেছে ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে কাঠ। তবে এসব ইটভাঁটির সামনে স্পল্প পরিমাণ কয়লাও দেখা গেছে যা অত্যন্ত নিম্নমানের। অধিকাংশ ইটভাঁটিগুলো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ও কৃষিজমিতে স্থাপন করা হয়েছে। এতে করে ইটভাঁটির নির্গত ধোঁয়া অতি সহজেই লোকালয় ও ক্ষেত খামারে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে বির্পযস্ত হচ্ছে পরিবেশ। কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর ফলে স্বল্প উচ্চতার টিন দিয়ে তৈরি চিমনি থেকে বের হচ্ছে ঘন মেঘের মত কালো ধোঁয়া, ফলে আশপাশের গাছপালা ক্রমে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। মৎস্য খামারের মাছগুলো মরে ভেসে উঠছে। ইটভাঁটিতে অবাধ কাঠ ব্যবহারের ফলে উজাড় হচ্ছে উপজেলার বৃক্ষ সম্পদ।
উপজেলার কুরচাই, চাকুয়া, নিগুয়ারি ও ছোট বড়াইগ্রামে রয়েছে ড্রাম চিমনির ইটভাঁটি। চাকুয়া গ্রামে মেহগনি, রেইনট্রি জাতের দুই শতাধিক গাছের বাগান কেটে নতুন করে এ বছর এমএমবি নামে স্বল্প উচ্চতার আর একটি ড্রাম চিমনির ইটভাঁটি স্থাপন করা হয়েছে। গাছের বাগান কেটে, ফিশারি প্রজেক্ট, ফসলি জমির মাঝখানে এই ড্রাম চিমনির ইটভাঁটি স্থাপনের সময় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে শুরুতেই বাঁধা দেওয়া হয়। ড্রাম চিমনির এই ইটভাঁটি যাতে চালু করতে না এলাকাবাসীর পক্ষে কুরচাই গ্রামের মাসুদ শেখ (৩৫) নামে এক ব্যক্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া ইয়াসমিন বরাবর লিখিত আবেদন করেন। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মৌখিক সম্মতিতে ইটভাঁটিটি চালু করা হয়। এ বিষয়ে ইটভাঁটির ম্যানেজার হাদিউল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, প্রশাসনের লোকজনকে ম্যানেজ করেই ইটভাঁটি চালু করা হয়েছে। প্রশাসনের লোকজন এখানে আসেন না।
কুরচাই গ্রামের মাসুদ শেখ জানান, ইটভাঁটির দিনরাত গাছের গোড়া পোড়ানো হচ্ছে। যার কালো ধোাঁয়ায় আচ্ছন্ন হচ্ছে চারপাশ। শিশু ও বৃদ্ধরা শ্বাস কষ্টে ভুগতে শুরু করেছে।
নিগুয়ারি ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন আরিফ রব্বানী বলেন, ইউরিয়ন পরিষদের অনুমোদন ছাড়া নতুন ইটভাঁটি কিভাবে চালু হলো। তা আমি জানি না।
এ বিষয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, তিনি গফরগাঁওয়ের এই অফিসে নয় বছর ধরে কর্মরত। নয় বছর ধরেই দেখছেন ইটভাঁটি থেকে এলআর ফান্ডের নামে কম-বেশি টাকা আদায় হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ অফিসের উপ-পরিচালক মো. মেজ-বাবুল আলম জানান, অভিযান চালিয়ে গফরগাঁও উপজেলার ড্রাম চিমনির ইটভাঁটিগুলো দ্রুতই ভেঙে ফেলা হবে। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জন্য এলআর ফান্ডের নামে ইটভাঁটিগুলো থেকে চাঁদা আদায় বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য না করে বলেন, অন্য ডিপার্টমেন্টর বিষয়ে আমাদের কথা না বলাই ভালো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া ইয়াসমিন এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে বলেন পরিবেশ অধিদপ্তর এদের ছাড়পত্র দেয় না তারা চাইলে আমরা অভিযান চালাব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আপনি অফিসে আসেন পরে কথা বলব, আমার একটা মিটিং আছে বলে ফোন কেটে দেন। একটি সূত্র জানায় সাংবাদিকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।