ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১

বসন্তের জানান দিচ্ছে তেওতা জমিদারবাড়ীর আঙ্গিনা

শহিদুল ইসলাম, নিজস্ব সংবাদদাতা, শিবালয় মানিকগঞ্জ:

প্রকাশিত: ১৬:৩২, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বসন্তের জানান দিচ্ছে তেওতা জমিদারবাড়ীর আঙ্গিনা



ঋতু পরিক্রমায় শীতকাল এখনো শেষ হয়নি। দিনপঞ্জিতে বসন্ত আসতে আরো কদিন বাকি। এর মধ্যে পলাশ-শিমুলের শাখা ভরে উঠেছে রঙ্গে-রঙ্গিন ফুলে। গাছে-গাছে পাখির কলকাকলি। কোকিলের কুহু-কুহু শব্দ ভাসছে বাতাশে। প্রকৃতিতে এসেছে নবপ্রাণ। তবে, মানিকগঞ্জের শিবালয়ে পলাশ-শিমুলের তেমন দেখা না মিললেও তেওতা জমিদারবাড়ীর দক্ষিণ আঙ্গিনায় কালের স্বাক্ষী হিসেবে টিকে থাকা ফুলে-ফুলে ভরা পলাশের গাছটি বসন্তের জানান দিচ্ছে। রঙ্গিন ফুলের মুগ্ধতায় যেন সতেজতা ফিরে পেয়েছে প্রাচীন এ জমিদারবাড়ী।    


জানা যায়, বসন্তকালে পলাশ ও শিমুল গাছ প্রকৃতিতে শুধু শোভাই বৃদ্ধি করেনা। সৌন্দর্য্যের পাশাপাশি গাছের মালিকরাও আর্থিকভাবে লাভবান হন। শিমুলের তুলায় লেপ-তোশকসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়। আর পলাশের রয়েছে একটি বিশেষ চাহিদা। বিদ্যাদেবী বলে খ্যাত ‘সরস্বতী’ পুজায় বাজারেও উঠে এ ফুল। এক সময় এ উপজেলার গ্রামাঞ্চলে কিছু পলাশ গাছের দেখা মিললেও কালের বিবর্তনে এখন তা অনেকটাই হারাতে বসেছে। 


শিবালয় উপজেলার স্থানীয়রা জানান, কিছু-কিছু গ্রামে স্বল্প পরিমানে শিমুল গাছের দেখা মিললেও পলাশের যেন দেখা দায় ! বসন্ত ঋতুর আগমনে এরা জেগে উঠে ওঠে ফুলে-ফুলে। তবে, কালের স্বাক্ষী হিসেবে পলাশ ফুলের একটি গাছ এখনো টিকে আছে উপজেলার ঐতিয্যবাহী তেওতা জমিদারবাড়ীর আঙ্গিনায়। 


সরজমিনে দেখা মিলে, গাছটি ভরে আছে শুধু ফুলে-ফুলে। গাছের নিচে মাটিতে কিছু ফুল বিছানা পেতেছে প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য। জমিদার বাড়ীর দক্ষিন আঙ্গিনার পাশে পথে চলা উৎসুক অনেকের হাতে থাকা স্মার্ট ফোনে ধারন হচ্ছে প্রকৃতির এ মনোরম দৃশ্য। এছাড়া, উপজেলার বিভিন্ন পরিত্যাক্ত ভিটা ও কাঁচা-পাকা রাস্তার ধারে অযত্ন অবহেলায় কিছু শিমুল গাছের দেখা মিললেও পলাশের দেখা দায়। 


মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি গোলাম সারোয়ার ছানু বলেন, দিন পঞ্জিকায় এখনো চলছে শীতকাল। এরি মধ্যে পলাশ-শিমুলের রঙিন উচ্ছাসে প্রকৃতি সেজেছে নতুনরূপে। এরকম মনোমুগ্ধকর পরিবেশ নয়ন জুড়িয়ে যায়। এমন প্রকৃতির ছোয়া পেয়ে সকলেই আনন্দিত। শীতের তীব্রতা কাটিয়ে বইছে ফাগুন হাওয়া। যা মানুষের মনে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে।


স্থানীয় তেওতা একাডেমির প্রধান শিক্ষক মোঃ মোজাম্মেল হোসেন জনকন্ঠকে জানান, দূর্লভ হয়ে উঠেছে পলাশ ফুলের গাছ। নতুন প্রজন্মের অনেকেই পলাশ ফুলের সাথে তেমনা পরিচিত নন। ঋতুরাজ বসন্তকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য একটি গাছই প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য যথেষ্ঠ। অন্তত বসন্তের জন্য হলেও বিভিন্ন স্থানে এ গাছের চারা লাগানো দরকার বলে মনে করেন তিনি।


প্রকৃতিপ্রেমী ও স্থানীয় সাংবাদিক শাহজাহান বিশ্বাস বলেন, পরিকল্পিত আবাদ না হওয়ায় এ অঞ্চলে পলাশ-শিমুল গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। অযত্ন ও অবহেলায় বেড়ে ওঠা এখনো কিছু গাছ প্রকৃতিতে টিকে আছে। যার মধ্যে তেওতা জমিদারবাড়ীর আঙ্গিনার পলাশ গাছটি। এটি সংরক্ষনের দাবি জানান তিনি। প্রতি বসন্তে আগুন রাঙা ফুল ফুটিয়ে গাছটি নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়ে আসছে।


মানিকগঞ্জ জেলা পরিবেশ রক্ষা কমিটির সহ-সভাপতি লক্ষী চ্যাটার্জী বলেন, পলাশ-শিমুল গাছ উজার হওয়ায় প্রকৃতির রুপ বদল হচ্ছে। প্রকৃতির রুপ ও বসন্তের সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এসকল গাছ রোপন করা প্রয়োজন রয়েছে।  

 
জনকন্ঠের সাথে কথা হয় শিবালয় উপজেলা বন কর্মকর্তা মোঃ শরিফুল ইসলামের সাথে। এ উপজেলার পলাশ ও শিমুল গাছের সংখ্যা জানতে চাইলে এর সঠিক সংখ্যা জানাতে ব্যর্থ হন তিনি। তবে, তিনি এ জাতীয় গাছ টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনীয়তায় গুরুত্বারোপ করেন। 

সাজিদ

×