ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১

বেরোবিতে শহীদ আবু সাইদ বই মেলার দায়িত্বে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক

এম কে পুলক আহমেদ, বেরোবি

প্রকাশিত: ১৬:২০, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১৬:২৭, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বেরোবিতে শহীদ আবু সাইদ বই মেলার দায়িত্বে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক

ছবি: সংগৃহীত

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবাবের মতো প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া শহীদ আবু সাইদ বই মেলা উদযাপনের জন্য গঠিত কমিটি নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের  সংগঠন নীলদলের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন বিভাগের অধ্যাপক ড. আপেল মাহমুদকে কমিটিতে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও আবু সাইদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামী গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর নিয়ন্ত্রিত বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি ছিলেন।
 
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৯ তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতি বছর শহীদ আবু সাইদ বই মেলার আয়োজন করবে। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৩ শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী বইমেলা হওয়ার কথা রয়েছে। বই মেলার আয়োজনের জন্য গত ৯ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়  প্রশাসন থেকে ছাত্রকল্যাণ ও পরামর্শের উপদেষ্টা ড. ইলিয়াস প্রামাণিককে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটিতে সদস্য হিসেবে কট্টোর আওয়ামীপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত ড. আপেল মাহমুদকে রাখায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে সমালোচনা চলছে। সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী নিয়োগের পর পরই ভোল পাল্টে গনিত বিভাগের অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলামের সহায়তা প্রথমেই নিজের প্রমোশন ভাগিয়ে নেন অধ্যাপক ড. আপেল মাহমুদ।
 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত তিন মাসেই, এই শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের যানবাহন ক্রয় কমিটি, ডরমেটরী বরাদ্দ কমিটি, বাসা বরাদ্দ নীতমিালা রিভিউ কমটিতে, ভর্তি পরিচালনা কমিটির, ক্যালেন্ডার মুদ্রণ কমিটি, বিশ্ববিদ্যালয়রে বাৎসরিক ছুটি নির্ধারন কমিটিসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে রাখা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা জানান, উপাচার্যের দপ্তরে কোন জরুরি প্রয়োজনে যখনই গিয়েছেন তখনই ড. আপেল মাহমুদকে উপাচার্যের দপ্তরে বসে থাকতে দেখেছেন। একধিক বিএনপিপন্থী শিক্ষক ও কর্মকর্তা জানান, এ ধরনের উগ্র আওয়ামীপন্থী ফ্যাসিস্ট শিক্ষকদের ভিসির দপ্তরে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন তারা।

এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপি পন্থি শিক্ষক ও প্রক্টর ড. ফেরদৌস রহমান বলেন, বিষয় টা এমন না।উপাচার্য নিয়োগ  হওয়ার পর ছাত্র প্রতিনিধিদের কাছ থেকে তিন জন করে শিক্ষকের নাম চাওয়া হয়েছিল।এই কারনে যে  বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দায়িত্বে কোন কোন শিক্ষক কে দেখতে চায়।সেখানে এআইএস বিভাগের প্রতিনিধিরা আপেল মাহামুদ এর নাম দিয়েছিলো। এই কারনে তাকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। আরও ৬৬ জন শিক্ষক রয়েছে  তাদের কে রেখে শুধু এক শিক্ষক কে এতো এতো জায়গায় রাখতেছে বেরোবি প্রশাসন এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ৬৬জনের মধ্যে ত অধ্যাপক কম, তিনি ত অধ্যাপক, এই জন্য তাকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। 

ছাত্রদলের বেরোবি শাখার আহবায়ক আল আমিন বলেন,ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বেরোবির সকল শিক্ষার্থীদের দাবী ছিলো আওয়ামী পন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তাদেরকে অপসারণ না করে বরং আরো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী পন্থী শিক্ষক কে বইমেলার পরিচালনার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রদান আমাদের হতাশ করেছে। এটি শহীদ আবু সাঈদের রক্তের সাথে বেঈমানী করা এবং গণঅভ্যত্থানের চেতনাবিরোধী বলে আমি মনে করি। এই ধরনের বিতর্কিত কর্মকান্ড থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কে সরে আসতে হবে। শাস্তির বিপরীতে আওয়ামী পুনর্বাসন শিক্ষার্থীরা মেনে নেবেনা। এরকম চলতে থাকলে ক্যাম্পাসে অস্থিরতা এবং প্রশাসনের প্রতি অনাস্থা তৈরী হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আরমান  বলেন, আমরা একটা খসড়া করে শুরুর দিকে একটা লিস্ট দিয়েছিলাম। সেখানে আমরা কোনো ক্রস চেক করি নি। এখন যদি উনি আগে দল করে থাকে তাহলে আমরা তাকে বাদ দেওয়ার জন্য প্রশাসনে বলব।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড মো: শওকাত আলী বলেন, বিগত সময় শিক্ষার্থীরা চেয়েছে এই জন্য আমরা তাকে কমিটিতে রেখেছি। আমরা কমিটি করার ক্ষেত্রে যারা গবেষণামূলক কাজে জড়িত শুধু তাদেরকে রাখার ক্ষেত্রে বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছি। কারন আমাদেরকে ত কিছু কিছু লোককে রাখা দরকার।এই জন্য আমরা তাকে রেখেছি। আমরা ত ভালোর জন্যই করেছি। উনি যদি খারাপ কাজ করে থাকে তাহলে অবশ্যই তাকে বহিষ্কার করা হবে।

আসিফ

×