ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১

মাটিদস্যুদের থাবা

চন্দনাইশে টিলা কেটে সাবাড়

সংবাদদাতা, চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ০১:১৪, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

চন্দনাইশে টিলা কেটে সাবাড়

চট্টগ্রামের চন্দনাইশে কাঞ্চননগর লর্ড এলাহাবাদ এলাকায় এভাবেই চলছে টিলা কেটে মাটি লুট

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার পূর্ব সীমানায় থাকা পাহাড়ের অনেক টিলার মাটি কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করেছে মাটিদস্যুরা। বিগত ১৫ বছরে যা কাটা হয়েছে, গত তিন মাসে তার দ্বিগুণ টিলা কেটে সাবাড় করেছে দস্যুর দল। ফলে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। প্রতিদিন রাতের আঁধারে চন্দনাইশের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় শত শত ডাম্পারে পাহাড়ের মাটি কেটে নিয়ে গেলেও প্রশাসনের তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই বললেই চলে। 
চন্দনাইশের পূর্বাংশ তথা কাঞ্চননগর, লর্ড এলাহাবাদ, ছৈয়দাবাদ, দোহাজারী লালুটিয়া, রায় জোয়ারা, ধোপাছড়ি পুরো ইউনিয়নজুড়ে রয়েছে অসংখ্য সারি সারি টিলা। টিলাগুলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছিল জনপদের। কিন্তু সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পড়েছে মাটিদস্যুদের স্কেভেটর ও কোদালের কোপ। সাবাড় করে দেওয়া হয়েছে পাহাড়ের অনেক টিলার পর টিলা। টিলাভূমিকে সমতল করে গড়ে তোলা হয়েছে জলাশয় ও আশ্রয়ণ। 
গত ১৫ বছরে চন্দনাইশের অনেক টিলার অস্তিত্ব বিলীন করে দিয়েছে প্রভাবশালী মাটিদস্যুরা। সে মাটিদস্যুরাই পুনরায় অন্যান্য রাজনৈতিক দলের আশ্রয় নিয়ে গত ৩ মাসে তার দ্বিগুণ টিলা কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে পাহাড়ি অঞ্চলের। তারা টিলা কেটে জলাশয় ও বিশাল বিশাল গর্তের সৃষ্টি করছে।

পরিবেশ ও প্রকৃতি ধ্বংসের এই তা-বের জন্য প্রশাসনের নির্লিপ্ততাকে দায়ী করছে সচেতন মহল। অবশিষ্ট থাকা পাহাড়-টিলা রক্ষায় এখনই পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি ও টিলা খেকোদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
তিন দশকের বেশি সময় ধরে চন্দনাইশে চলছে টিলা কেটে জলাশয় ও আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণের কাজ। গত ৫ আগস্টের পর থেকে যে সকল পাহাড়ের টিলা কেটে নিচ্ছে মাটিদস্যুরা। এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করেও তেমন ফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। মাটিদস্যুরা বলে বেড়াচ্ছেন প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বা অনুমোদন নিয়ে তারা পাহাড়ের মাটি কাটছেন।

উপজেলার কাঞ্চননগর, লর্ড এলাহাবাদ, ছৈয়দাবাদ, দোহাজারী লালুটিয়া, রায় জোয়ারা, ধোপাছড়ি পুরো ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা এক সময় টিলাবেষ্টিত থাকলেও এখন এসব এলাকা পরিণত হয়েছে সমতলে। গতবছর পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) করা একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ি এলাকায় গড়ে ওঠা ৫টি ইটভাঁটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

চন্দনাইশে টিলার কোনো পরিসংখ্যান নেই কারও কাছে। চন্দনাইশের টিলাগুলো সাধারণত অব্যবহৃত ভূমি হিসেবে পড়ে আছে। টিলার মতো ভূমির মূল্য কম হওয়ায় মালিকরা টিলাগুলো কেটে মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। বন বিভাগের অদীনে থাকা টিলাগুলো অভিভাবকহীনের মতো কেটে নিয়ে ইটভাঁটিতে মাটি বিক্রি করছে অনায়াসে।

এ ছাড়া প্রভাবশালী টিলাখেকোরা বিভিন্ন মালিকের কাছ থেকে টিলা কিনে মাটি কেটে বিক্রি করছে ইটভাঁটি ও বিভিন্ন ব্যক্তিদের নিকট। দীর্ঘদিন ধরে টিলা ধ্বংসের এই যজ্ঞ চললেও প্রশাসনের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে লোক দেখানো অভিযান ও জরিমানা করেই দায়িত্ব পালন করেছেন তারা। আর টিলাখেকোরা জরিমানা পরিশোধ করে পুনরায় শুরু করেন টিলা কাটা।

যে কারণে চন্দনাইশে টিলা ধ্বংস বন্ধ করা সম্ভব হয়নি বলে মনে করেন সচেতন মহল। চন্দনাইশে এখনো যেসব টিলা অবশিষ্ট রয়েছে সেগুলো টিকিয়ে রাখতে হলে এখনই পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করতে হবে। মামলাভুক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ টিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাইনবোর্ড টানাতে হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিব হোসেন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ডিপ্লোমেসি চাকমা সম্প্রতি টিলা কাটার সংবাদ পেয়ে যৌথভাবে পাহাড়ি এলাকায় গভীর রাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন।

এ সময় টিলাখেকোরা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযানের সংবাদ পেয়ে মাটি কাটার লোকসহ পালিয়ে যায়। এ সময় টিলা কাটার স্কেভেটর ও মাটি বহনকারী ডাম্পার আটক করা হয়। পরে ডাম্পারের মালিকদের জরিমানা করে সরকারি কোষাগারে জমা করেছেন। 
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিব হোসেন বলেছেন, টিলা বা পাহাড় কাটা আইনগত অপরাধ। কোনোভাবেই পাহাড় কাটা যাবে না, কারণ পাহাড় পরিবেশ রক্ষা করে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড় ও ধানী জমির টপসয়েল কাটা বন্ধ করার জন্য মোবাইল কোর্ট অব্যাহত রয়েছে। গভীর অরণ্যে গভীর রাতে পাহাড় কাটার সংবাদ থাকলেও মোবাইল কোর্টের লোকজন যাওয়ার আগেই তারা পালিয়ে যায়। তবে সংবাদ ফেলে অবশ্যই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আইগত পদক্ষেপ করবেন বলে জানান।

×