![আজ আবরার ফাহাদের জন্মদিন আজ আবরার ফাহাদের জন্মদিন](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/3-96-2502111909.jpg)
আজ ১২ ফেব্রুয়ারি। আজকের এই দিনে জন্মেছিলেন আবরার ফাহাদ, এক মেধাবী, স্বপ্নবাজ তরুণ, এক সম্ভাবনাময় তরুণ,যার জীবন মাত্র ২১ বছরেই থেমে গিয়েছিল। আজ আবরার ফাহাদ বেঁচে থাকলে হয়তো ২৭ বছরে পা রাখতেন, হয়তো দেশের একজন সফল প্রকৌশলী, গবেষক, কিংবা সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ হতে পারতেন। কিন্তু সত্য বলার অপরাধে, ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য তাকে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়েছিল।
তার চলে যাওয়া এক ক্ষতচিহ্ন হয়ে রয়ে গেছে জাতির হৃদয়ে। আজ এই দিনে শুধু তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা নয়, বরং শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও অঙ্গীকার জানাই-তার স্বপ্ন যেন আমরা বহন করতে পারি, তার দেখানো সত্যের পথ যেন আমরা ধরে রাখতে পারি।
১৯৯৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি, কুষ্টিয়ায় জন্ম নেওয়া আবরার ফাহাদ ছিলেন এক অসাধারণ মেধাবী ও নিরহঙ্কার যুবক। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় দারুণ দক্ষ ছিলেন তিনি। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হওয়ার পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি হন, যা ছিল তার স্বপ্নের গন্তব্য।
বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (EEE) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন আবরার। সাধারণ ও পরিশ্রমী পরিবারের সন্তান হয়েও নিজের মেধা ও অধ্যবসায়ের জোরে তিনি দেশের সেরা প্রযুক্তিগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জায়গা করে নিয়েছিলেন। তার লক্ষ্য ছিল দেশকে কিছু দেওয়া, সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো।
কিন্তু তার এই সোজাসাপ্টা মনোভাবই তার জীবনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর, ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন আবরার, যেখানে তিনি বাংলাদেশের একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির সমালোচনা করেছিলেন। তার পোস্টটি ছিল একান্তই ব্যক্তিগত মতামত, যেখানে তিনি বিশ্লেষণ করেছিলেন চুক্তিটির ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক।
কিন্তু এই পোস্টই যেন কারও কারও কাছে ছিল "অপরাধ"। ৬ অক্টোবর রাতে, বুয়েটের শেরেবাংলা হলে থাকা শিক্ষার্থী-নামধারী কিছু দুর্বৃত্ত তাকে ডেকে নেয়। সেখানে শুরু হয় ভয়াবহ নির্যাতন।ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাঠি, স্টাম্প, লোহার রড দিয়ে তাকে পেটানো হয়। তাকে জোর করে স্বীকার করানোর চেষ্টা করা হয় যে, তিনি ভুল করেছেন। একপর্যায়ে মৃত্যু হয় এই মেধাবী তরুণের।
একটি বিশ্ববিদ্যালয়, যা হওয়া উচিত ছিল মুক্তচিন্তার জায়গা, সেটাই হয়ে উঠল এক ভয়ংকর হত্যাকাণ্ডের মঞ্চ। আর তার অপরাধ? সত্য বলা।
আবরারের মৃত্যু শুধু একটি প্রাণের অপচয় ছিল না, এটি ছিল একটি জাতির বিবেকের পরীক্ষা। তার নির্মম হত্যাকাণ্ডে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামে, সাধারণ মানুষ সোচ্চার হয়, এবং দেশব্যাপী ন্যায়বিচারের দাবি ওঠে।
আবরারের পরিবারের কান্না শুধু একটি পরিবারের শোক নয়, এটি ছিল সত্য বলার স্বাধীনতার ওপর নৃশংস আঘাতের প্রতীক।তার হত্যার ঘটনায় বিচারের দাবিতে তীব্র আন্দোলনের ফলে ২০২১ সালে ২০ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। যদিও বিচার হয়েছে, তবুও প্রশ্ন থেকেই যায়-এই বিচার কি আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সত্য বলা ও মুক্তচিন্তার জন্য নিরাপদ করতে পেরেছে?
আফরোজা