![সরকারের আশ্বাসে মেলা ঘিরে নতুন আশা সরকারের আশ্বাসে মেলা ঘিরে নতুন আশা](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/b1-2502111738.jpg)
বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলায় প্রতিদিনই বাড়ছে বইপ্রেমীদের ভিড়
অমর একুশে বইমেলা, অনেকেই বলছেন, খেই হারিয়েছে। নতুন করে সামনে এসেছে নিরাপত্তা ইস্যুটিও। প্রাণের মেলায় লেখক পাঠক প্রকাশকরা সাধারণত ফুরফুরে মেজাজে থাকেন। উৎসবের আমেজে কেটে যায় এক একটি দিন। পরস্পরের সঙ্গে সাবলীল গল্প আড্ডা হয়। নতুন কী কী বই এলো, আসছে কোনগুলো, কোন বই কে কখন সংগ্রহ করবেন, কোন লেখকের অটোগ্রাফ চাই, কার সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগ খুঁজতে হবে- পাঠকের মাথায় এসবই মূলত ঘুরে।
কিন্তু এবার বিখ্যাত লেখকদের অনুপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। যারা মেলায় ঢুকলেই অটোগ্রাফ শিকারিরা চারপাশ থেকে ঘিরে ধরতেন তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আসছেন না। একইভাবে অনেক প্রকাশকও আসছেন না। এসবের প্রভাব ক্রমে স্পষ্ট হচ্ছে মেলায়। আর সোমবারের ঘটনা তো উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
ওইদিন কিছু মানুষ ‘সব্যসাচী’ নামের একটি স্টল বন্ধ করে দেয়ার দাবিতে সেখানে অবস্থান নেয়। স্টল থেকে প্রতিবাদ করা হলে ব্যাপক হৈ চৈ বেঁধে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকেও। এই ঘটনায় মেলায় এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল।
তবে ১১তম দিনে মঙ্গলবার আতঙ্ক কিছুটা কমেছে বলেই মনে হয়েছে। এর মূল কারণ সরকারের আশ্বাস। অন্তর্বর্তী প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিবৃতি দিয়ে মেলা সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভয় দিয়েছিলেন। আশ্বস্ত করেছিলেন। এ সংক্রান্ত এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, একুশে বইমেলা এ দেশের লেখক ও পাঠকদের প্রাণের মেলা।
এ দেশের সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, চিন্তক, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণি-পেশা-বয়সের মানুষের মিলনস্থল। বইমেলায় এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা (সব্যসাচী স্টলের সামনের ঘটনা) বাংলাদেশের উন্মুক্ত সাংস্কৃতিকচর্চাকে ক্ষুণœ করে, ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের মর্যাদার প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশ ও বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে এ ঘটনার তদন্ত এবং দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছে।
মেলায় নিরাপত্তা জোরদার করতে এবং এই তাৎপর্যপূর্ণ স্থানে যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া দেশে ‘মব ভায়োলেন্সের’ যেকোনো ঘটনা প্রতিরোধে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।
একাধিক প্রকাশক এই বিবৃতির বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, এর ফলে মেলার নিরাপত্তা বাড়বে। যারা মেলায় আসতে চান তারা সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে আসতে পারবেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রকাশক বলছিলেন, আমাদের অনেকের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছিল। ফলে আমরা কিছুটা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছিলাম।
প্রধান উপদেষ্টার বিবৃতির পর স্বস্তি বোধ করছি। আমাদের আশা, অমর একুশে বইমেলা সামনের দিনগুলোতে তার ভাবগাম্ভীর্য ধরে রাখতে পারবে। আরেক প্রকাশকের মন্তব্য: আমি মেলায় মোটামুটি আসছি। কোনো সমস্যা হয়নি এখনো। তবে মেলার অনেকদিন বাকি আছে। আমি ছাড়াও আমার স্টলে অনেক ছেলে মেয়ে কাজ করছে প্রতিদিন। তাদের নিরাপত্তার কথাও আমাকে ভাবতে হয়।
প্রধান উপদেষ্টার বিবৃতি পড়ে সেই দুশ্চিন্তা কিছুটা কমেছে বলে জানান তিনি। অবশ্য লেখকদের কেউ কেউ মনে করেন বাংলা একাডেমিকে আরও দায়িত্ব নিতে হবে। মেলার নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে তাদের হাতে। তা না হলে বিশৃঙ্খলা এড়ানো যাবে না।
৯১ নতুন বই ॥ মেলার ১১তম দিনে ৯১টি নতুন বইয়ের তথ্য দিয়েছে বাংলা একাডেমি।
মূল মঞ্চের আয়োজন ॥ বিকেলে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘আদর্শায়িত কল্পলোক ও শাহেদ আলীর দ্বিধাচিত্ত মন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিবলী আজাদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মোস্তাক আহমাদ দীন। সভাপতিত্ব করেন চঞ্চল কুমার বোস।
প্রাবন্ধিক বলেন, শাহেদ আলীর গল্পে যেমন দার্শনিক প্রতীতি রূপায়ণের চেষ্টা রয়েছে, তেমনি রয়েছে সামাজিক বৈষম্য আর অনাচার ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস। তাঁর রচনাগুলো উত্তাল সময়, ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধকালের বৌদ্ধিক ও নান্দনিক প্রতীতির প্রতি লেখকের এক ধরনের প্রতিক্রিয়া। সমকালের অন্যান্য লেখকের মতো তিনি উচ্চকন্ঠী নন। তাঁর গল্পে নেই হুল্লোড় কিংবা মতাদর্শিক উচ্ছ্বাস।
বিমূর্ত দার্শনিকতা ও সৌন্দর্য অনুসন্ধান শাহেদ আলীর লেখার গুরুত্বপূর্ণ এক বৈশিষ্ট্য। তাঁর গল্পে উঠে আসে গ্রামীণ মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্ত, হতদরিদ্র প্রান্তিক চাষি এবং শহুরে মুটে-ভিখিরি চরিত্রগুলো। শিল্পের দাবি অক্ষুণœ রাখার ক্ষেত্রে শাহেদ আলী যথেষ্ট সফল একজন লেখক।
আলোচক বলেন, রাজনীতি-সচেতন সক্রিয় ব্যক্তিত্ব শাহেদ আলী সাহিত্যের বিভিন্ন অঙ্গনে তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তবে তাঁর রাজনৈতিক ও সৃষ্টিশীল জীবনকে কখনো একাত্ম করেননি। এমনকি তাঁর গল্পের মধ্যে কঠোর নীতিবোধও আরোপ করেননি।
তাঁর রচনায় জীবনবাস্তবতার যে চিত্র তিনি এঁকেছেন সেখানে নি¤œ ও নি¤œ-মধ্যবিত্ত শ্রেণির উপস্থিতিই আমাদের চোখে পড়ে। ভাষার ক্ষেত্রে তিনি লোকজ, আরবি, ফারসি, উর্দু শব্দরাজিকে সাবলীলভাবে তাঁর সাহিত্যে স্থান দিয়েছেন।
সভাপতির বক্তব্যে চঞ্চল কুমার বোস বলেন, শাহেদ আলীর রচনায় বাংলার কৃষিভিত্তিক জীবনের ছন্দ, সুর, কথা ও উপকথা ধরা পড়ে। তাঁর লেখার অনুষঙ্গ হলো সাধারণ বাঙালি ঘরের সাংস্কৃতিক উপকরণ। তাঁর বিস্তৃত সাহিত্যকর্ম নিবিড় পাঠ ও গভীর পর্যালোচনার দাবি রাখে।
লেখক বলছি ॥ লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- নাসির আলী মামুন এবং মামুন সারওয়ার।