ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১

আজ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদানের ঘোষণা

সাগর-রুনি হত্যা মামলার জিজ্ঞাসাবাদে অনেকে মুখ খুলছে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:০১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সাগর-রুনি হত্যা মামলার জিজ্ঞাসাবাদে অনেকে মুখ খুলছে

সাগর-রুনি

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় আগের সরকারের লোকজন জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন রুনির ভাই নওশের আলম রোমান। অপরদিকে তাদের আইনজীবী শিশির মনির বলছেন, উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগাযোগের ব্যাপারে মুখ খুলেছেন।

মঙ্গলবার হাইকোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তারা এ কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাগর-রুনির ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ। এর আগে দুপুরে ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির সামনে সাগর-রুনির নির্মম হত্যার বিচারের অপেক্ষায় ১৩ বছর’ শীর্ষক এক প্রতিবাদ সভা করেছে সাংবাদিকরা। হত্যাকা-ের বিচার দাবিতে আজ বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দেওয়ার ঘোষণা দেন সংগঠনটির সভাপতি আবু সালেহ আকন।  

হাইকোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইনজীবী শিশির মনির জানান, এটি চাঞ্চল্যকর এবং দুর্ভাগ্যজনক। ১৩ বছরেও এই মামলার তদন্ত শেষ করে রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি। আমি মনে করি এটি রাষ্ট্রীয় লেভেলে বড় ধরনের ব্যর্থতার ফল। এই সরকার আসার পর হাইকোর্ট বিভাগের আদেশে উচ্চতর টাস্কফোর্স গঠিত হয়েছে।

এই টাস্কফোর্স ৪ এপ্রিলের মধ্যে তাদের তদন্তের সারবত্তা পেশ করবেন। তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, যতটুকু আমরা জানতে পেরেছি, বেশ কিছু অগ্রগতি হাতে এসেছে। সময়ের ব্যবধানে এই ডেভেলপমেন্ট নিয়ে হাইকোর্ট বিভাগে তদন্ত প্রতিবেদন সাবমিট করা হবে। অতীতে এই মামলাটিকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে দেওয়া হয়নি; এই মর্মে তদন্ত রিপোর্টে কিছু তথ্য-উপাত্ত এসেছে।

অতীতে এই তদন্ত প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। আইনি পদ্ধতিতে চলতে দেওয়া হয়নি। এ আইনজীবীর আশা, স্বল্পতম সময়ের মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তারা একটি গ্রহণযোগ্য বিচার পরিচালনা করার মতো উপযুক্ত তদন্ত রিপোর্ট আদালতের সামনে দাখিল করবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্তের বিষয়টির সঙ্গে স্পর্শকাতরতা আছে। এক ধরনের গোপনীয়তা আছে। ৎতবে যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা করেছেন, অন্য মামলায় জেলে আছেন, এরকম ব্যক্তিবর্গ যারা কিছুটা বক্তব্য দিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগাযোগের ব্যাপারে তারা মুখ খুলেছেন।

তবে আদালতের বাধ্যবাধকতার কারণে বর্তমানে সবটুকু জানানো উচিত নয় বলে মন্তব্য করে শিশির মনির বলেন, কিছু আলামত আসছে যে, অতীতে তদন্তকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্টারেস্ট ইম্পিলিমেন্ট করার জন্য তদন্ত প্রক্রিয়াকে সঠিক আইনি পথে পরিচালিত হতে দেওয়া হয়নি। এগুলো তদন্তের অংশ হবে। কারা কারা ছিলেন, কারা বাধা দিয়েছেন, কীভাবে দিয়েছেন।

যারা রিট করেছেন তারা কেন রিট করেছেন। কেন র‌্যাবকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। র‌্যাবতো কোনো তদন্তকারী সংস্থা নয়। সেটিও খতিয়ে দেখছে তদন্ত সংস্থা। অতীতে উচ্চ পর্যায় থেকে এখানে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। এই উচ্চ পর্যায় চিহ্নিত করে তদন্ত রিপোর্টে দেখানো হবে। আপাতত বলাটা সমীচীন নয়।
আগের সরকারের লোকজন জড়িত ॥ রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, তদন্ত তো আমরা বুঝি না। তারপরও সব কিছু দেখে কিছুটা আশার আলো দেখতে পাই। আমরা আশা করব যেহেতু আগের সরকার নেই, আমরা সব সময় মনে করতাম যে, আগের সরকারের সংশ্লিষ্ট কেউ বা সরকার স্বয়ং এ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত। কারণ যত ধরনের নাটক হয়েছে, যে ডিএনএ টেস্ট থেকে শুরু করে আমাদের হয়রানি এবং নানা সময় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী কথাবার্তা বলেছেন। 
যেমন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বেডরুম পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব তার নয়। এসব থেকে আমরা মনে করি, তৎকালীন সরকার বা তাদের সংশ্লিষ্ট কেউ এটার সঙ্গে জড়িত। সরকার আন্তরিক হলে ১২ বছর ধরে তদন্ত চলতো না। র‌্যাবের মতো একটা বাহিনী যারা তদন্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত না...। তিনি বলেন, এতবার আশাভঙ্গ ঘটেছে, যার ফলে আমরা আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু পাচ্ছি না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা তদন্ত রিপোর্ট কী আসছে সেটা জানতে পারছি।
পজিটিভ কিছু একটা শুনতে পাব- মেঘ ॥ এই দম্পতির ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ বলেন, আগে তো কিছু হতো না। এখন তো দেখছি যে ওরা কাজ করছে। তো একটু হলেও আমরা আশাবাদী। আশা করা যাচ্ছে, পজিটিভ কিছু একটা শুনতে পাব। 
প্রতিবাদ সমাবেশ সাংবাদিকদের ॥ এদিকে দুপুরে ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির সামনে ‘সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনী নির্মম হত্যাকা- বিচারের অপেক্ষায় ১৩ বছর’ শীর্ষক এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে ডিআরইউ। 
প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে সাংবাদিকরা বলেন, সাংবাদিকদের জীবন অভিশপ্ত জীবন। সবাই চায় আমাদের দমিয়ে রাখতে। বিগত সরকার আমাদের ভয় পাওয়ার জন্য সাগর-রুনি হত্যাকা- ঘটিয়েছিল। কিন্তু আমরা থেমে থাকিনি। এই হত্যা মামলা হওয়ার পর ১১৫ বারের মতো পিছিয়েছে। বাংলাদেশে কি এর আগে কখনো কোনো হত্যা মামলার বিচার হয়নি?

তৎকালীন সরকারের প্রত্যেকে এ মামলার বিষয়ে উদাসীন ছিলেন। যেখানে স্বয়ং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন সাগর রুনির হত্যাকা-ের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, সেখানে কি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহস আছে প্রমাণ বের করার। ফলে সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত এই মামলার কোন অগ্রগতি হচ্ছে না। আমরা প্রত্যাশা করব বর্তমান সরকার, এ মামলাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
বিচারের দাবিতে আজ বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে প্রতিবাদ সভা থেকে ঘোষণা দেন সংগঠনটির সভাপতি আবু সালেহ আকন।
ডিআরইউ সভাপতি বলেন, গত ১৩ বছরেও এই হত্যার বিচার হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার যে ফ্যাসিস্ট ছিল তার প্রমাণ হচ্ছে, এই হত্যার বিচারকে তারা ভিন্নখাতে প্রভাবিত করেছে। 
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ডিআরইউয়ের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কুদরত-ই-খুদা, প্রমুখ।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ পাওয়া যায়।

×