ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১

স্টল বন্ধে ছন্দপতন নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা

জনকণ্ঠ ফিচার

প্রকাশিত: ০০:৩৩, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

স্টল বন্ধে ছন্দপতন নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা

মেলায় একটি সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়নে বই দেখছেন পাঠক

বহুবিধ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এখন দেশ। কিন্তু বইমেলার মতো ঐতিহ্যবাহী আয়োজনে এর কোনো প্রভাব পড়বে না তো! লেখক প্রকাশকদের অনেকেই মেলা শুরুর আগে বিষয়টি নিয়ে ভেবেছেন। মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমিও নিরাপত্তা ইস্যুতে কাজ করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আশ্বস্ত করে জানিয়েছিল তারা মেলার পুরোটা সময় বিশেষ তৎপর থাকবে।

সে অনুযায়ী মোটামুটি স্বাভাবিকভাবে চলছিল মেলা। কিন্তু দশম দিনে সোমবার ছন্দপতন ঘটেছে, বলতে হবে। মেলার একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টল এদিন বন্ধ করে দেওয়া হয়। আপত্তির মুখে বন্ধ করা স্টলটির নাম সব্যসাচী। সন্ধ্যার দিকে হঠাৎই এই স্টলের সামনে বেশ কিছু মানুষ এসে জড়ো হন। তারা দাবি করতে থাকেন, এখান থেকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়া হয়েছে। এই স্লোগান কেন দেওয়া হয়েছে জানতে চান তারা।

তসলিমা নাসরিনের বই স্টলে রাখা হয়েছে জানিয়েও তারা প্রতিবাদ করেন। স্টলের ভেতর থেকে একজন নিজের মতো করে জবাব দেওয়ার চেষ্টা করলে ব্যাপক তর্কাতর্কি হৈ চৈ শুরু হয়ে যায়।  মেলা জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেক পাঠককে দ্রুত পায়ে মেলা থেকে বের হয়ে যেতে দেখা যায়। অবশ্য দ্রুতই ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছে যায় পুলিশের একটি দল। পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন তারা।

একাধিক ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, স্টলের সামনে জড়ো হওয়া ব্যক্তিরা স্টলটি বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানাতে থাকেন। প্রকাশকের শাস্তিও দাবি করেন তারা। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়। এ অবস্থায় পুলিশ স্টলটি বন্ধ করে দেয়। প্রকাশককেও বের করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় প্রকাশকদের মধ্যে কিছুটা দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে।

কেউ কেউ নিরাপত্তা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলছেন, কোনো বিষয়ে আপত্তি থাকলে যেন সেটা বাংলা একাডেমি সরাসরি দেখে। তা না হলে সমস্যা বাড়বে। শঙ্কাও।  
৮৪ নতুন বই ॥ মেলার অষ্টম দিনে ৮৪টি নতুন বইয়ের তথ্য দিয়েছে বাংলা একাডেমি। 
মূল মঞ্চের আয়োজন ॥ বিকেলে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘ড. মনিরুজ্জামানের সময়রেখা : ভাষাবিজ্ঞানের ত্রিকালদর্শী পরিব্রাজক’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাশরুর ইমতিয়াজ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সালমা নাসরীন এবং মামুন অর রশীদ। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মনসুর মুসা।  
প্রাবন্ধিক বলেন, ড. মনিরুজ্জামান ভাষাবিজ্ঞানের দুরূহ পথে কেবল সরলরৈখিকভাবেই পরিভ্রমণ করেননি, বরং নজর দিয়েছেন অতীতের ভাষিক নিরীক্ষায় এবং ভবিষ্যতের ভাষা-গবেষণার সুলুক সন্ধানে। প্রতিভার মৌলিকত্বে তিনি তার স্বকীয় অবস্থান নিশ্চিত করেছেন।

ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ে গভীর পা-িত্য এবং উপভাষা গবেষণায় অসামান্য অবদানের কারণে ভাষাবিজ্ঞানের জগতে যেমন তার অবিস্মরণীয় খ্যাতি রয়েছে, তেমনি সুসাহিত্যিক ও সাহিত্য-বিশ্লেষক হিসেবেও বাংলা সাহিত্যজগতে তার নাম সুবিদিত। তিনি বাংলাদেশে অনুসৃত ভাষাবিজ্ঞানের যাবতীয় ধারাসমূহের বিন্যাস করেছেন, একইসঙ্গে তার রচনায় তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বের বিকাশমানতার ধারা প্রতিভাত হয়েছে। 

আলোচকদ্বয় বলেন, ড. মনিরুজ্জামান ছিলেন আধুনিক চিন্তাধারার অধিকারী বিজ্ঞানমনস্ক একজন মানুষ। গবেষণার মাধ্যমে তিনি বাংলা উপভাষার উচ্চারণগত, ব্যাকরণগত এবং শব্দগত বৈচিত্র্য তুলে ধরেছেন। ভাষা গবেষণায় তিনি আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। তিনি উপভাষার অভ্যন্তরীণ রূপটি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন এবং উপভাষাকে উদার দৃষ্টিতে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। 
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মুনসুর মুসা বলেন, ড. মনিরুজ্জামান শৈশবকাল থেকেই বিভিন্ন উপভাষার সংস্পর্শে এসেছিলেন এবং একজন গবেষক হিসেবে ভাষাবিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা করেছেন। তার মূল্যবান গবেষণা ভবিষ্যতের গবেষকদের জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা জোগাবে। 
লেখক বলছি মঞ্চ ॥  এদিন নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন  কুদরত-ই-হুদা এবং হিজল জোবায়ের।

×