![রোগীর চাপে সেবা ব্যাহত রোগীর চাপে সেবা ব্যাহত](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/23-2502101457.jpg)
হাসপাতালে ডাক্তারের জন্য রোগীদের দীর্ঘ অপেক্ষা
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি এই হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ভর্তি রোগী কয়েকগুণ বেশি। সোমবার দুপুর ২টা পর্যন্ত রোগী ভর্তি ছিল ৫৬৩ জন। সবচেয়ে বেশি রোগী রয়েছে করোনারি কেয়ার ইউনিট, সার্জারি ওয়ার্ড, মেডিসিন ও শিশু ওয়ার্ডে। এ ছাড়া হাসপাতালের বহির্বিভাগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে গড়ে প্রতিদিন দেড় হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেন। ৯ ফেব্রুয়ারি ১৭ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নেন। রোগীর চাপে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। তাদের সামলাতে গিয়ে চিকিৎসকরা হাঁপিয়ে ওঠেন। হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, এখানে মোট চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৫৪টি। কর্মরত আছেন ৪৯ জন। শূন্য রয়েছে ৫ চিকিৎসকের পদ। এর মধ্যে সিনিয়র কনসালট্যান্ট পদ ৩টি ও জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদ ২টি। এত স্বল্প পরিমাণে চিকিৎসক দিয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চালানো কষ্টদায়ক হয়ে পড়ছে। কেননা শয্যার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি রোগী এখানে ভর্তি থাকেন। এর পরেও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য পদ পূরণ ও নতুন পদ সৃষ্টির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কোনো মাথা নেই।
সূত্রটি আরও জানায়, জেনারেল হাসপাতালের ২৫০ শয্যা ও করোনারি কেয়ার ইউনিটের ২৮ শয্যা ধরে মোট ২৭৮ শয্যার বিপরীতে এখানে গড় ৬ শতাধিক রোগী চিকিৎসাধীন থাকেন। প্রতিদিন রোগীর চাপ বাড়ায় বর্তমান জনবল দিয়ে চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হিমশিম অবস্থা। সেই সাথে মারাত্মক জায়গা সংকট রয়েছে। জনবল সংকেট মন্ত্রণালয়ে বারবার চাহিদাপত্র পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু সমাধানের কোনো নাম নেই। ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর ৬০ চিকিৎসক, ১০০ জন সেবিকা ও ১৬৫ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু আজ অবধি কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
সরেজমিন দেখা গেছে, হাসপাতালের পুরুষ মেডিসিন, মহিলা মেডিসিন ও লেবার ওয়ার্ড ও সার্জারি ওয়ার্ডে রোগীর চাপে পা ফেলার জায়গা নেই। প্রতিনিয়ত পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দা ছাড়িয়ে রোগীর ঠাঁই হয় ওভার ব্রিজ ও সিঁড়ির পাশে। সেখানে রোগীর দীর্ঘ সারি পড়ে। এ ছাড়া করোনারি কেয়ার ইউনিটে রোগীর চাপ লেগেই থাকে। হাসপাতালে এত বেশি রোগীর চাপ যে নতুন রোগী বিছানার অভাবে যেখানে সেখানে থেকে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছেন। যেখানে সামান্য জায়গা মিলছে সেখানেই রোগীর চিকিৎসার জন্য বিছানা দেওয়া হচ্ছে। সিঁড়ির নিচে থাকতে দেওয়া হয়েছে রোগী। চৌগাছা উপজেলা থেকে আসার এক রোগীর স্বজন মতিয়ার রহমান জানান, করোনারি কেয়ার ইউনিটের চারপাশে রোগী আর রোগী। একসঙ্গে এত রোগীর চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক সেবিকা হিমশিম খাচ্ছে। রোগীর চাপে তাদের সঙ্গে ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না তারা। পূরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন এক রোগীর স্বজন গোলাম ছরোয়ার জানান, সরকারি হাসপাতাল বলে এত রোগীর মধ্যে কোনো রকম চিকিৎসাসেবা মিলছে। রোগীর চাপের কারণে রোগীরা ন্যায্য চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। রাউন্ডে এসে চিকিৎসকরা তড়িঘড়ি করে বের হয়ে যান। ভালো করে রোগের বর্ণনা শোনার সময় নেই। রোগী সামাল দিতে চিকিৎসক-সেবিকাদের হিমশিম অবস্থা।
এ বিষয়ে হাসপাতালের এক জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক জানিয়েছেন, এমন পরিবেশে রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে তারা কষ্ট পান। কিন্তু অসহায়ত্ব প্রকাশ করা ছাড়া কিছু করার নেই। সময় নিয়ে এত রোগীর দেখা অসম্ভব ব্যাপার।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. হিমাদ্রী শেখর সরকার জানিয়েছেন, সরকারি এই হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণের বেশি রোগী ভর্তি থাকে। এ ছাড়া বহির্বিভাগে দেড় হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। রোগীর চাপের কারণে চিকিৎসক ও সেবিকাদের কষ্ট হয়। এরপরও জনবল সংকটের মধ্য দিয়েও রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। কোনো রোগী যেন চিকিৎসা অবহেলার মধ্যে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলে জেলা হাসপাতালে রোগীর চাপ অনেকটা কমে যাবে।