
ছবি: সংগৃহীত।
যখন মালদ্বীপ এবং টুভালুর মতো দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিলীন হওয়ার শঙ্কায় দিন গুনছে, তখন বাংলাদেশ তার মানচিত্রে নতুন ভূমি সংযোজন করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা যেখানে অনেক দেশের অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছে, সেখানে বাংলাদেশ কীভাবে ধাপে ধাপে নিজেদের ভূখণ্ড বাড়াচ্ছে, তা সত্যিই বিস্ময়কর। এটি কি প্রকৃতির অবদান, নাকি মানুষের নিরলস প্রচেষ্টার ফল?
বাংলাদেশের ভূখণ্ড স্বাধীনতার সময়, ১৯৭১ সালে ছিল ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার। তবে ভূমি পুনরুদ্ধার এবং সমুদ্রসীমার সম্প্রসারণের মাধ্যমে এখন এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৬০ বর্গ কিলোমিটারে। এর মানে, গত কয়েক দশকে প্রায় ৮৯০ বর্গ কিলোমিটার নতুন ভূমি যুক্ত হয়েছে, যা অনেক দেশের ছোট শহরের চেয়েও বড়।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম ১৯৭১ সালে হলেও ভূতাত্ত্বিকভাবে এই অঞ্চল লক্ষ লক্ষ বছর ধরে গঠিত হচ্ছে। মূলত গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা নদীর পলিমাটির দ্বারা এই ভূখণ্ড সৃষ্টি হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে হিমালয় পর্বতের বরফ গলে এবং ভারী বর্ষণে বিপুল পরিমাণ পলি বহন করে এই নদীগুলো বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত হয়েছে। ফলে ধীরে ধীরে এই পলি জমে গড়ে উঠেছে একটি বিস্তীর্ণ বদ্বীপ, যা আজকের বাংলাদেশ।
বিশ্বের বৃহত্তম বদ্বীপ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ ভূখণ্ড ক্রমাগত পরিবর্তনশীল। প্রতিবছর নদীগুলো প্রচুর পলি বহন করে, যা নতুন ভূমি তৈরি করে, আবার কিছু কিছু জায়গায় জমি বিলীন হয়। এই প্রাকৃতিক পরিবর্তনশীলতা প্রতিনিয়ত অব্যাহত থাকে, এবং প্রতিবছর গড়ে প্রায় ২০ বর্গ কিলোমিটার নতুন ভূমি বাংলাদেশের মানচিত্রে যোগ হচ্ছে।
এছাড়াও, সম্প্রতি জেগে ওঠা ছোট বড় ৫০টিরও বেশি চড় যেন নতুন এক বাংলাদেশের হাতছানি দিচ্ছে। যেখানে মালদ্বীপ ২০৫০ সালের মধ্যে তার আশি শতাংশ জমি ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করছে, সেখানে বাংলাদেশ প্রতিবছর গড়ে ১০ থেকে ২০ কিলোমিটার নতুন ভূমি সৃষ্টি করছে। যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তবে আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশের আয়তন ১ লাখ ৫০ হাজার বর্গ কিলোমিটার হবে। অর্থাৎ, ৫০ বছরে বাংলাদেশের মানচিত্রে ১০০০ থেকে ১৫০০ বর্গ কিলোমিটার ভূমি যোগ হতে পারে, যা প্রায় ঢাকা জেলার সমান।
বাংলাদেশের আয়তন বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে একটি বিস্ময়কর ঘটনা, তবে এটি জলবায়ু পরিবর্তনের সমাধান নয়। মালদ্বীপ এবং টুভালুর মতো দেশগুলো যখন অস্তিত্ব সংকটে, তখন বাংলাদেশ ভূমি অর্জন করছে, যা একটি বিরল বৈপরীত্য। তবে শুধু ভূমির বৃদ্ধি নয়, এই নতুন ভূখণ্ডকে টেকসইভাবে সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।।
নুসরাত