![দালাল লিখে নিল ২ বিঘা জমি, তবুও লিবিয়ায় নিখোঁজ সন্তান দালাল লিখে নিল ২ বিঘা জমি, তবুও লিবিয়ায় নিখোঁজ সন্তান](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/3-2502091806.jpg)
লিবিয়ায় নিখোঁজ মাদারীপুরের কুদ্দুস ব্যাপারীর স্ত্রী দীনা আক্তার ও তার আট মাসের ছেলে। (ইনসেটে) বাঁয়ে নিখোঁজ কুদ্দুস ব্যাপারী ও ডানে মানব পাচারকারী
ইতালি নেওয়ার চুক্তি করে দালাল লিখে নিয়েছে ৬০ লাখ টাকা মূল্যের দুই বিঘা জমি। তবু লিবিয়ায় নিখোঁজ মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কুদ্দুস বেপারী (৩০) নামের আরও এক যুবক। বর্তমানে স্বামী আর জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন কুদ্দুস বেপারীর স্ত্রী ও তাদের একমাত্র সন্তান। নিখোঁজ কুদ্দুস রাজৈর উপজেলার মজুমদারকান্দি এলাকার আতাহার বেপারীর ছেলে। তিনি একজন মোবাইল মেকানিক ছিলেন। দালাল মনির একই এলাকার মৃত হায়দার শেখের ছেলে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, স্বপ্নের রাজ্য ইতালি নেওয়ার চুক্তি করে একই এলাকার দালাল মনির শেখ (৫০)। নগদ টাকা দিতে না পারায় দালাল মনির কুদ্দুস বেপারীর কাছ থেকে ২ বিঘা জমি লিখে নেয়। বর্তমানে ওই জমির বাজারমূল্য প্রায় ৫০/৬০ লাখ টাকা। চার মাস আগে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয় কুদ্দুস। বাংলাদেশ থেকে লিবিয়ায় নিয়ে তাকে আটকে রাখে কথিত গেমঘরে। গত ২৪ জানুয়ারি ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে ২৩ বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়। এর মধ্যে রাজৈর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ১০ জন এবং মুকসুদপুরের ৩ জনসহ মোট ১৩ জন। ওই ঘটনার পর থেকে কুদ্দুস বেপারী নিখোঁজ থাকে। পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। তিনি জীবিত না মৃত, কিছুই জানে না পবিবার।
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, দালাল মনির শেখ দুই বছর আগে দর্জির কাজ করত। এর পর মানবপাচারকারী সদস্যদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা হয়। এর পর থেকেই বিভিন্ন এলাকার বেকার যুবকদের প্রলোভন দিয়ে অবৈধপথে ইতালি নেওয়ার কাজ শুরু করে। এই মনিরের সঙ্গেই ইতালি যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয় কুদ্দুস।
নিখোঁজ কুদ্দুসের স্ত্রী দিনা আক্তার বলেন, ‘তিন বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়। আমাদের সংসারে আট মাসের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। দালাল মনিরের খপ্পরে পড়ে আমার স্বামী ৫০/৬০ লাখ টাকা দামের ২ বিঘা জমি গোপনে লিখে দেয় মনিরের নামে। আমরাকেউ বিষয়টি জানতাম না। বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় আমার স্বামী জানায়, মনির দালালের মাধ্যমে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাচ্ছি। এটা ৪ মাস আগের কথা। আমার স্বামী লিবিয়িার গেমঘরে ৪ মাস আটকে ছিল। তখন তার সঙ্গে আমাদের কথাও হয়েছে। এর পর গত ১৮/২০ দিন তার সঙ্গে আর কোনো কথা হয় নাই। কোনো খোঁজও পাচ্ছি না। এদিকে দালাল মনিরও পালিয়ে গেছে। মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় মনিরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। এর পর জানতে পারি গত ২৪ জানুয়ারি নাকি লিবিয়া থেকে ৪৩ জনের গেম দিয়েছে, তাতে অনেকে মারা গেছে এবং কিছু লোক নিখোঁজ। সেদিন থেকেই আমার স্বামীরও কোনো খোঁজ নেই। এখন আমার ছেলেকে নিয়ে আমি কিভাবে বাঁচব।’
নিখোঁজ কুদ্দুস বেপারীর ভাই সোবহান বেপারী বলেন, ‘আমার ভাইকে ইতালি নেওয়ার চুক্তি করে গোপনে ২ বিঘা জমি লিখে নিয়েছে মনির দালাল। আমরা কিছুই জানি না। গত মাসে ২২ জানুয়ারি কুদ্দুস ফোন করে জানিয়েছিল গেম দেবে তাই তারা ফোন নিয়ে যাবে। এর পর থেকে কোনো কথা হয়নি। গেম দেওয়ার কথা ছিল ২৫ জানুয়ারি। কিন্তু কবে গেম দিয়েছে, আমার ভাই বেঁচে আছে কি না তার কিছুই জানি না। দালালও ফোন বন্ধ করে পালিয়ে গেছে। আমরা কি করবো, কার কাছে যাবো কিছুই বুঝতে পারছি না। দালাল মনিরের বিচার চাই।’
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. সাইফুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবার চাইলে মামলা করতে পারেন। আমরা তাদের সহযোগিতা করব। মানব পাচারকারীদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। এ ছাড়া অবৈধভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর কেউ যেন না যান, সে বিষয়ে আমরা সচেতনতামূলক সভা করছি।’