ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১

খুমেক হাসপাতালে সেবা পান না রোগীরা

অচল অ্যাম্বুলেন্সেও পুড়ছে জ্বালানি

প্রবীর বিশ্বাস, খুলনা অফিস

প্রকাশিত: ২০:১০, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

অচল অ্যাম্বুলেন্সেও পুড়ছে জ্বালানি

দীর্ঘদিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে অ্যাম্বুলেন্স

খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছয়টি অ্যাম্বুলেন্সের একটি ছয় মাস ধরে গ্যারেজে। যার বিল আগেই তোলা হয়েছে প্রায় তিন লাখ টাকা। আর একটি দিনের পর দিন পড়ে আছে হাসপাতাল অভ্যন্তরে। অথচ তেল পুড়ছে। শুধু তাই নয় ডিজেল ইঞ্জিনের গাড়ি হলেও অকটেনে ছাড়া যেন চলেই না। শুধু কি তাই; পাঁচ লিটার ধারন ক্ষমতার মবিলের স্থলে ঢুকছে ১০ লিটার করে। বাকি চারটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও লাশ ওঠার সুযোগ নেই। ড্রাইভারস কক্ষ সার্বক্ষণিক খোলা থাকার কথা থাকলেও প্রায়ই থাকে তালাবদ্ধ। ফলে সঠিক সেবা পায় না রোগী ও তাদের স্বজনরা। যার সঠিক উত্তর নেই গাড়ি চালকদের কাছে। পরিচালক জানালেন বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
নগরীর নূরনগর এলাকার একটি গ্যারেজে গত জুলাই মাসের ২ তারিখ থেকে ঘষামাজা হচ্ছিল যে অ্যাম্বুলেন্সটি সেটির নম্বর ১৮৭৭, যা খুমেক হাসপাতালের রোগী আনা নেওয়ার কাজে ব্যস্ত থাকার কথা। অথচ পড়ে থাকা অ্যাম্বুলেন্সটির খরচের অর্থ আগেই উত্তোলন করা হয়েছে। গ্যারেজ মালিক আলমগীর হোসেন বলেন, প্রায় তিন লাখ টাকা বিল হবে, আগেই সেই টাকা অফিস থেকে তোলা হয়েছে বলে আমি জানি। আগে পরেও এভাবেই হয়েছে।
অপরদিকে হাসপাতালের গ্যারেজে ২৫০৬ নম্বরের গাড়িতে লেগে থাকা ধুলাবালি দেখে মনে হবে অনেক দিন অব্যবহৃত। অথচ ডিজেলচালিত গাড়ির ফুয়েল ক্রয়ের দুটি ভাউচার পর্যালোচনা করে দেখা যায় একটিতে গত বছরের ১১ জুন ৮০ লিটার অকটেন ও ১০ লিটার মবিল কেনা হয়েছে। আর একটি ওই মাসের ২৩ তারিখে আরও ৪০ লিটার অকটেন তোলার হিসেব পাওয়া যায়। যে ভাউচারটি অনুমোদন দিয়েছেন তখনকার উপ-পরিচালক ডা. মো. হুসাইন শাফায়াত। অথচ অনেক রোগীর স্বজনরা জানেনই না অল্প খরচে হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স সেবা মেলে। লিটন সরকার নামের রোগীর এক স্বজন বলেন, একটু সুস্থ হওয়ার পর ভাইকে নিয়ে সাতক্ষীরা গ্রামের বাড়িতে যাব। সাড়ে তিন হাজার টাকায় ঠিক করলাম। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স পেলে হয়তো টাকা একটু কম লাগত।
অন্যরোগীর স্বজন খোকন মল্লিক বলেন, আমাকে একজন বলেছিলেন হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স আছে কিন্তু ড্রাইভাস রুমে গিয়ে দেখি তালা মারা, সেখানে কেউ নাই। তাই বাধ্য হয়েই ব্যক্তিমালিকানার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেছি। তিনি আরও বলেন, এটি খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল। যেখানে ১০ জেলার রোগী আসে সেবা নিতে। সেখানেই এই বেহাল অবস্থা।
অপরদিকে সুযোগ বুঝে সুবিধা নিচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যক্তি মালিকরা। ডালিম মিয়া নামের এক চালক বলেন, শুধু এখানেই নয়, খুলনার কোনো সরকারি হাসপাতালে ঠিকমতো অ্যাম্বুলেন্স সেবা নাই। আমরা আছি বলেই রোগীরা সেবা পায়। কোথাও গেলে খরচ থেকে কিছুটা লাভ রেখে আমরা ভাড়া নিই। এ ছাড়া সরকারি হাসপাতালে লাশ বহন করে না, যা একমাত্র আমরাই করি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালের গাড়ির ফুয়েল ক্রয়ের নির্দিষ্ট পাম্প নতুন রাস্তার মোড়ের এলেনা পেট্রোল সাপ্লাই। পাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্তরা, অ্যাম্বুলেন্স চালক ও হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে এমটি হলেও পাম্প ব্যবস্থাপক সিরাজুল ইসলাম জানালেন দায়সারা কথা। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠান থেকে যেভাবে স্লিপ পাস হয় আমরা সেভাবে ফুয়েল ও মবিল সরবরাহ করি। ডিজেল গাড়িতে অকটেন কিভাবে গেল এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, এটা চালকরাই ভালো বলতে পারবেন।
বিষয়টি জানতে চালকদের তলব করলেন পরিচালক। এসময় ইনচার্জ হায়াত আলীকে পাওয়া না গেলেও আব্দুর রহিম ও মোহাম্মদ মন্টু নামের দুই চালককে পাওয়া গেল। মন্টু বলেন, অন্য গাড়ির ফুয়েল ম্যানেজ করতে দুইবার ডিজেলের জায়গায় অকটেন কেনা হয়েছে। আর একটা গাড়িতে বেশি মবিল খাচ্ছিল বলে এক সঙ্গে ১০ লিটার মবিল কেনা হয়। এ ছাড়া অ্যাম্বুলেন্স সারাই বিষয়ে তিনি বলেন, আগের বাজেটে বরাদ্দ ছিল বলে টাকা উত্তোলন করে পরে গাড়ি সারা হয়েছে।
পরে হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মোহসীন আলী ফারাজী বলেন, ডিজেল ইঞ্জিনে অকটেন কেন এবং পাঁচ লিটার মবিলের জায়গায় ১০ লিটার কিভাবে কেনা হলো সেটি খতিয়ে দেখা হবে। এ ছাড়া অ্যাম্বুলেন্স মেরামতের আগেই কেন টাকা উত্তোলন করা হয় এবং ড্রাইভার কক্ষ কেন বন্ধ থাকে সে বিষয়গুলো নিয়েও ড্রাইভার ও অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তিনি আরও বলেন, আমি নতুন এই দায়িত্বে এসেছি তাই সবকিছু এখনো আমি বুঝে নিতে পারিনি। 

×