ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১

হাজার হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস

প্রকাশিত: ২১:৩০, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

হাজার হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি

সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্তবর্তী কুশিয়ারা নদী থেকে রহিমপুর খাল দিয়ে পানি প্রত্যাহারের বিষয়ে বাংলাদেশ ভারত সমঝোতা চুক্তি আড়াই বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। পানি সরবরাহের অভাবে এলাকার হাজার হাজার হেক্টর কৃষিজমি অনাবাদী থেকে মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। কৃষিনির্ভর উপজেলার কৃষকরা বছরের পর বছর ক্ষেতের জমিতে চাষাবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
জকিগঞ্জ উপজেলার শরিফগঞ্জের কাছে কুশিয়ারা নদী থেকে দীর্ঘ ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য রহিমপুর খালটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১০ সালে সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের মাধ্যমে শতকোটি টাকা ব্যয়ে পুনর্খনন ও পাম্পহাউস নির্মাণ করে। খাল খনন ও পাম্প হাউস নির্মাণে খালের পানি আটকানোর জন্য ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। পাম্প হাউস নির্মাণ ও খাল পুনর্খননের কাজ সম্পন্ন হলে বাঁধটি অপসারণ করতে চাইলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ বাধা প্রদান করে। বাঁধ অপসারণ করতে না পারায় কৃষিজমিতে পানি সরবরাহ ব্যাহত হয়।
প্রায় ১৫ বছরেও রহিমপুর খালের মুখের বাঁধ অপসারণ করতে না পারায় এ উপজেলার হাজার হাজার হেক্টর কৃষিজমি অনাবাদি থেকে ক্রমশ উর্বরতা হারাচ্ছে। ভারত থেকে আসা বরাক নদী জকিগঞ্জের আমলশীদে এসে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে ১৫-২০ কিমি সীমান্ত এলাকা ঘেষে দীর্ঘ পথ প্রবাহিত হয়ে মেঘনায় মিলিত হয়েছে। ঢলের সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা পলিতে এই দুই নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে প্রতি বছর বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়ে থাকে।
কুশিয়ারা নদীর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতীয় সীমান্তরেখা চিহ্নিত রয়েছে। কুশিয়ারা নদী দু’দেশের মধ্যে ভাগ হয়ে যাওয়ায় নো-ম্যান্স ল্যান্ডের অংশ হওয়ায় ভারতের বাধার মুখে বাঁধ অপসারণ করা যায়নি। ২০২২ সালের ২১ আগস্ট যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক শেষে কুশিয়ারা নদী থেকে রহিমপুর খাল দিয়ে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয় এবং বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে। ২০২২ সালে ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও বাংলাদেশ জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদী থেকে ১৫৩ কিউসেক পানি ওঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। এ সমঝোতা স্মারকের ফলে রহিমপুর সংযোগ খালের মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হয়। তখন পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেছিল ২০২২ সালের নভেম্বরে বোরো ফসল রোপণের পূর্বেই চুক্তি মোতাবেক পানি প্রত্যাহার করা সম্ভব হবে। কিন্তু চুক্তির আড়াই বছর পরও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফের বাধার কারণে রহিমপুর খালের মুখের বাঁধ অপসারণ করে রহিমপুর পাম্পহাউস চালু করা যায়নি। চুক্তি অনুযায়ী পানি পাওয়া গেলে উপজেলার ৫ হাজার হেক্টর জমি বোরো ও রবিশস্য চাষের আওতায় আসার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী কানাইঘাট, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষিজমি সেচ সুবিধার আওতায় আসবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জকিগঞ্জ শাখা কর্মকর্তা জানান, ভারত-বাংলাদেশ সমঝোতা স্মারক সই হলেও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফের বাধার মুখে বাঁধ অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছেনা। তবে পাম্প হাউস ও খালের উন্নয়ন চলমান রয়েছে। দ্রুততম সময়ে সব আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে বাঁধ অপসারণ করে পাম্প হাউস চালু হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এলাকাবাসীর মতে পানি সরবরাহ নিশ্চিত হলে সিলেটের পাঁচ উপজেলার অন্তত ১২ লাখ কৃষকের সেচ সুবিধা থেকে প্রায় ৮৭ হাজার টন উৎপাদনের স্বপ্ন পূরণ হতো। স্থানীয়রা জানান, কুশিয়ারার অপরতীরের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৪২টি পাম্প বসিয়ে পানি উত্তোলন করছে ভারত। কিন্তু আমরা পানি উঠাতে পারছি না। এদিকে দীর্ঘদিন চালু না হওয়ায় রহিমপুর পাম্প হাউসের যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

 

 

×