ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১

এক-দুই টাকাতেও ক্রেতা মিলছে না

মেহেরপুরে ফুলকপি এখন কৃষকের গলার কাঁটা

নিজস্ব সংবাদদাতা, মেহেরপুর

প্রকাশিত: ২১:২৬, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মেহেরপুরে ফুলকপি এখন কৃষকের গলার কাঁটা

সবজি আবাদে সুনাম রয়েছে মেহেরপুর জেলার। প্রতিবছরই সবজি আবাদ করে লাভবান হয় এই জেলার চাষিরা। লাভের আশায় চলতি বছরও ফুলকপির আবাদ করে চাষিরা। তবে বাজার দর পড়ে যাওয়ায় এখন লাভের বদলে লোকসান গুণতে হচ্ছে চাষিদের। জমিতে ফুলকপির ফুল ফুটে যাওয়ায় এখন আর কেউ নিচ্ছে না কপি। গরু-ছাগলকে দিয়ে খাওয়াতে হচ্ছে। জমি থেকে কপি কেটে ফেলে দিচ্ছেন চাষিরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে মেহেরপুরে ১ হাজর ৩৪০ হেক্টর জমিতে ফুলকপির আবাদ হয়েছে।
কথা হয় মেহেরপুর সদর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। লাভের আশায় ৪ বিঘা জমিতে লাগিয়েছিলেন ফুলকপি। এখন সেই কপি তার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজার দর কমে যাওয়ায় বিক্রি করতে পারেননি কপি। জমি থেকে কেটে কেটে ফেলে দিচ্ছেন সব কপি। উৎপাদিত কপি বিক্রি করতে না পারায় মাঠেই নষ্ট হচ্ছে তার স্বপ্ন। এ চিত্র মেহেরপুর সদর উপজেলার উজলপুর, কুলবাড়িয়া, হরিরামপুর, বামনপাড়া, বন্দর, গাংনী উপজেলার সাহারবাটিসহ জেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠের। এতে উৎপাদন খরচ তো দূরের কথা পুঁজিই হারাতে বসেছেন তারা। বাজারে ১-২ টাকা দরেও কেউ নিচ্ছে না কপি। কপির ফুল ফুটে গেছে এখন আর বিক্রি হবে না তাই এখন গরু-ছাগলকে খাওয়াতে হচ্ছে এসব কপি। বিঘাপ্রতি ৩০-৪০ হাজার টাকা খরচ করে কপি আবাদ করে এখন লোকসানের মুখে পড়েছে চাষি। এখন উৎপাদন খরচই উঠছে না। ফলে দিশেহারা হয়ে পরবর্তী আবাদ কিভাবে করবে তা নিয়ে রয়েছে দুশ্চিন্তায়।
মেহেরপুর সদর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, লাভের আশায় অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও ফুলকপি চাষ করেছিলাম। কিন্তু এখন বাজারের দাম পড়ে যাওয়ায় এই ফুলকপি কেউ নিচ্ছে না।
আরেক চাষি সাজেদুল ইসলাম বলেন, কপি এখন ফুটে গেছে, মানুষ এই কপি খাচ্ছে না। কোনো ব্যাপারিও পাওয়া যাচ্ছে না বিক্রি করার জন্য। জমি থেকে এখন এই কপি কেটে ফেলে দিয়ে জমি পরিষ্কার করতেও ৩-৪ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। সেই টাকাও উঠছে না।
বিভিন্ন অঞ্চলের একাধিক চাষি বলেন, বাজার দর নিয়ন্ত্রণ না থাকায় প্রতিবছরই ফসলের দাম পড়ে যায় এবং চাষিরা লোকসানের মুখে পড়ে। বাজার দর নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান তারা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিবছরই কপি চাষ করে লাভবান হয় চাষিরা। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীরাও দেশের বিভন্ন মোকামে এসব কপি বিক্রি করে লাভবান হয় কিন্তু এ বছর চাষি এবং ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েছে। গাড়ি পাঠিয়ে এখন গাড়ি ভাড়াও উঠছে না। অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতিবছর ব্যবসায়ীরাও লোকসানের মুখে পড়েছে। মেহেরপুর জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, সবজির বাজার দর নিয়ন্ত্রণে কাজ চলমান আছে। চলতি বছরে ফুলকপি চাষিরা লোকসানের মুখে পড়ে। কৃষি বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে চাষিদের সবজি উৎপাদনে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

×