ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গৃহবধূ হত্যা, লাশ পিত্রালয়ে পাঠিয়ে পালালো স্বামী

নিজস্ব সংবাদদাতা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: ১৮:১৮, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গৃহবধূ হত্যা, লাশ পিত্রালয়ে পাঠিয়ে পালালো স্বামী

ছবিঃ : দৈনিক জনকণ্ঠ

নরসিংদী জেলার রায়পুরার মুক্তা বেগম (২০) নামে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তার লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন।

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে আশুগঞ্জ থানা পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠায়। এর আগে ভোর চারটার দিকে নিহতের লাশ এক আত্মীয়ের মাধ্যমে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নিহতের স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন সদর হাসপাতাল থেকে ওই আত্মীয়কে লাশের গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।

নিহত মুক্তা বেগম আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর হোসেনপুর (কুড়ের পাড়) গ্রামের গোলাম মিয়ার মেয়ে। তার সাত মাস বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। এ ঘটনায় আশুগঞ্জ থানা পুলিশ নিহতের শ্বশুর, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চাঁনপুর গ্রামের মুজিবুর রহমান ও শ্বাশুড়ি খোশনাহার বেগমকে আটক করেছে।

পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক মুজিবুর রহমান, খোশনাহার বেগম মুক্তাকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তারা জানান, রাত ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত মুক্তা ও তার স্বামী আব্দুল্লাহর মধ্যে ঝগড়া হয়। রাত ২টার দিকে স্বামী আব্দুল্লাহ মুক্তাকে মুখ চেপে শ্বাসরোধে হত্যা করে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে শ্বশুরবাড়ির লোকজন অসুস্থতার অজুহাতে লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মুক্তাকে মৃত ঘোষণা করলে খায়েশ মিয়া নামে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে লাশ সিএনজিতে করে মুক্তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় তারা।

নিহতের পরিবারের দাবি, দেড় বছর আগে মুক্তার বিয়ে হয় রায়পুরার চাঁনপুর গ্রামের মুজিবুর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহর সঙ্গে। আব্দুল্লাহ মিষ্টির দোকানের কারিগর।

বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই আব্দুল্লাহ ও তার পরিবার মিষ্টির দোকান চালুর জন্য মুক্তার বাবার কাছে তিন লাখ টাকা যৌতুক দাবি করতে থাকে। টাকা না পেয়ে তারা মুক্তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করত। একাধিকবার সালিশ বৈঠক হলেও নির্যাতন বন্ধ হয়নি।

মুক্তার বাবা গোলাপ মিয়া মেয়ের সুখের কথা ভেবে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিলেও আর্থিক সংকটে তা দিতে পারেননি। তবে জামাই ও নাতির চিকিৎসা, সিজারিয়ান অপারেশনের খরচসহ নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন।

বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে মুক্তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার বাবাকে ফোনে জানায়, স্বামীর সঙ্গে ঝগড়ার কারণে সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে এবং তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে গোলাপ মিয়া সদর হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই লাশ নিয়ে চলে যায় শ্বশুরবাড়ির লোকজন।

সকালে নিহতের শ্বশুর-শাশুড়ি লাশ দেখতে এলে পুলিশ তাদের আটক করে।

আশুগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সজল কান্তি দাস জানান, নিহতের লাশের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তার গলা ও শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

নিহতের শ্বশুর-শাশুড়ি হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। যেহেতু ঘটনাস্থল নরসিংদীর রায়পুরা, তাই নিহতের পরিবারের সদস্যদের সেখানকার থানায় অভিযোগ করতে বলা হয়েছে।

রেজা

×