ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১

চাঁপাইনবাবগঞ্জে হুমকিতে আম বাগান

লাইসেন্স ছাড়াই চলছে ইটভাঁটি

নিজস্ব সংবাদদাতা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

প্রকাশিত: ০০:৫০, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

লাইসেন্স ছাড়াই চলছে ইটভাঁটি

.

পরিবেশ বিধ্বংসী অবৈধ ইটভাঁটিগুলো যাতে কার্যক্রম শুরু করতে না পারে সে মোতাবেক হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনা দেওয়া হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে তা বাস্তবায়ন হয়নি। স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতায় উপেক্ষিত হাইকোর্টের নির্দেশনা। এ জেলায় চলতি মৌসুমে দেড় শতাধিক অবৈধ ইটভাঁটিতে ইট তৈরির কার্যক্রম চলছে। যেখানে পোড়ানো হচ্ছে আম গাছের খড়ি, ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষি জমি ও নদী তীরের মাটি। অবৈধ ইটভাঁটিাগুলো ধীরে ধীরে ধ্বংস করছে পরিবেশ।
ইটভাঁটির চিমনি দিয়ে বের হওয়া কালো ধোঁয়ার প্রভাব পড়ছে জনজীবনসহ গাছ ও কৃষিতে। তথ্যমতে, অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ইট উৎপাদন ও ভাটা পরিচালনার মৌসুম। এই সময়ের মধ্যে লাইসেন্সবিহীন অসংখ্য অবৈধ ইটভাঁটি তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ইটভাঁটি মালিক সমিতি জানায়, জেলায় এ মৌসুমে ১৫৮টি ইটভাঁটিতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যার মধ্যে ৬৩টি জিকজ্যাক ও ৯৫টি চলছে খড়ির ভাটা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের অবৈধ ইটভাঁটিগুলো প্রশাসন ও প্রভাবশালী মহলকে নিয়মিত মাসোয়ারা দেয়। নামসর্বস্ব কিছু গণমাধ্যমকর্মীও নিয়মিত চাঁদা নেন ইটভাঁটি থেকে। ইটভাঁটির মালিকরা জানান, এতদিন নিয়মিত চাঁদার বাইরেও স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন দিবস পালনসহ নানা উদ্যোগের জন্য চাঁদা দিতে হয়েছে তাদের। প্রতিবছর ডিসি-ইউএনওরা ইটভাঁটি মালিক সমিতির মাধ্যমে এলআর ফান্ড ও জাতীয় দিবস পালনের নামে চাঁদা নিয়েছে। তবে এবার রাজনৈতিক দলের নেতাদের মাধ্যমে প্রশাসন ম্যানেজের চেষ্টা করছেন ইটভাঁটি মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজ প্রকৃতি ছাপিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে যাচ্ছে ইটভাঁটির চিমনি। আম বাগানের মধ্যেই গড়ে উঠেছে পরিবেশ বিধ্বংসী ইটভাটা। একটা ইটভাঁটি পেরুলেই চোখে পড়বে আরেকটি ইটভাঁটি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার শেখ হাসিনা সেতুর উপর দাঁড়িয়ে দক্ষিণ দিকে দৃষ্টি মেললে দেখা যাবে প্রায় ১৪টি ইটভাঁটি থেকে ধোঁয়া ছড়াচ্ছে।
জেলা ইটভাঁটি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন জানান, জেলায় ১৫৮টি ইটভাঁটিতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ৬৩টি জিকজ্যাক ও ৯৫টি চলছে খড়ির ভাটা। এই ১৫৮টি ইটভাঁটি মালিকই সমিতির সদস্য। তার দাবি, ৬৩টি জিকজ্যাক ইটভাঁটি লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন। অন্যগুলোর ব্যাপারে তিনি অবগত নন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদ বলেন, আমরা অবৈধ ইটভাঁটিবিরোধী অভিযান শুরু করেছি। হাইকোর্টের নির্দেশনার বিষয়ে অবগত কি-না এমন প্রশ্নে জেলা প্রশাসক বলেন, যে  কোনো অবৈধ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে আলাদা নির্দেশনার প্রয়োজন পড়ে না, আইন অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।
লালপুরে কমছে ফসল উৎপাদন
নিজস্ব সংবাদদাতা, লালপুর, নাটোর থেকে জানান, লালপুরে প্রশাসনের নাকের ডগায় বিভিন্ন এলাকায় যত্র-তত্র অবৈধ ইটভাঁটি গড়ে উঠায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে এই অঞ্চলরে জনসাধারণ। পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানে পাঁচটি ভাঁটির মালিককে জরিমানা ও ভেকু দিয়ে ভাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এসব ইটভাঁটিতে আবারও শুরু হয়েছে ইট পোড়ানোর কাজ। এছাড়া সরকারি নিয়ম ও আইন না মেনে এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই এসব ইটভাঁটি গড়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। আর এসব ইটভাঁটির কারণে কমে যাচ্ছে আবাদি জমির পরিমাণ ও উর্বরতা। আর ইট পোড়ানো কাজে বনজ ও ফলজ গাছ কেটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ ও বনজ গাছ উজাড় হয়ে যাচ্ছে। ইটভাঁটির কালো ধোঁয়ার কারণে আসন্ন আম ও লিচুর মুকুলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করেছেন স্থানীয়রা। অন্যদিকে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ছোটশিশু থেকে সব ধরনের মানুষ। 
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় বলেন, সরকারিভাবে ফসলি জমিতে ইটভাঁটি স্থাপন করা নিষেধ আছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেদী হাসান বলেন, অবৈধ ইটভাঁটিগুলোতে অভিযান করা হবে।

×