উপদেষ্টা ফরিদা আখতার
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হবে। যারা আহত হয়েছেন তাদেরকেও সহায়তা দেওয়া হবে। তাদের জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের অধীনে আলাদা একটা অধিদপ্তর করা হয়েছে। বুধবার ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার হরিহরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে সম্মিলিত খামারি পরিষদ আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃৃতায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এ কথা বলেন।
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে দুধ, ডিম, মাছ ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সহজলভ্য করার মাধ্যমে একটি সুস্থ সবল ও পুষ্টি সমৃদ্ধ জাতি গঠনের লক্ষকে সামনে রেখে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন- অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান আসাদ, বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তান দূতাবাসের হাইকমিশনার সৈয়দ আহদে মারুফ।
সম্মিলিত খামারি সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি তারিকুল ইসলাম তুরকি সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন এলডিডিপির প্রকল্প পরিচালক জসিম উদ্দিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন ড. আমিনুল ইসলাম, তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ফরিদুল ইসলাম, খামরী মনিষা সেনানী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা তারেক রেজা, নাইমুর রশিদ, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি গ্যাবরিয়েল পিনেদাছ, ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আওয়াল, শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ¯িœœগ্ধা দাস, শৈলকুপা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন বাবর ফিরোজ, শৈলকুপা সম্মিলিত খামারি পরিষদের সদস্য সচিব ওসমান আলী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন খামারি পরিষদ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক তানজীর আলম রবিন।
উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, বিল বাঁওড় প্রকৃত মৎস্যজীবীদের কাছে ইজারা দিতে হবে। অ-মৎস্যজীবীদের হাতে বাঁওড়ের ইজারা দেওয়া যাবে না। এ বিষয়ে তিনি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন তিন মন্ত্রণালয় ইজারা ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছে। দ্রুতই এর সমাধান হবে।
তিনি কৃষকদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করে বলেন, এসব জমিতে ধানসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন ফ্যাসিবাদ মুক্ত। গতবছরের এই সময়ও আমরা ভাবতে পারিনি যে প্রাণ খুলে কথা বলতে পারব, প্রকাশ্যে সভা সমাবেশ করতে পারব। কারণ সমাবেশ করলেই পুলিশ দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হতো। দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হলেও এখনো তাদের দোসররা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাই সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন আমাদের দুধ আছে কিন্তু ভা-ার নেই।
এবার আমরা ক্যাটেল হাব তৈরির মাধ্যমে দুধের ভা-ার গড়ে তুলব। তিনি বলেন, সরাসরি খামারিদের কাছ থেকে যাতে টাটকা দুধ মানুষ কিনতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হবে। গরু আমদানি করা হবে মান উন্নত বাজার বৃদ্ধির জন্য, মাংসের জন্য নয়। তিনি শৈলকুপাসহ জেলার খামারিদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে বলেন, বর্তমান সরকার একটি সুস্থ ও মানবিক পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। সমাজে কোনো বৈষম্য থাকবে না এমন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।
সমাবেশে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও পাকিস্তানের হাইকমিশনারের কাছে দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণের বিষয়ে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের মাংস ও দুধ বিক্রির নির্ধারিত স্থান নেই। শৈলকুপায় একটি ক্যাটেল হাব’র ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।
সমাবেশে পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহাম্মেদ মারুফ বলেন, বাংলাদেশের দরিদ্র খামারিদের জন্য উন্নত জাতের শাহী ওয়াল গাভীর পাশাপাশি ভেড়া ও ছাগল দিতে আমরা প্রস্তুত। এতে বাংলাদেশের খামারিদের জীবনমান আরও সমৃদ্ধ হবে। তিনি বলেন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আপনাদের মতো জনগণ দ্বারা পরিচালিত হয় এবং আপনারাই দেশ দুটির চলিকাশক্তি।
পাকিস্তান মাংস ও দুধ উৎপাদনে বেশ এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশের হতদরিদ্র খামারিদের উন্নত জাতের গবাদি পশু দিতে প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার দপ্তর থেকে একটি প্রস্তাবনা ইসলামাবাদে পাঠানো হলে বাংলাদেশী জনগণের জন্য উন্নতজাতের গবাদিপশু দ্রুত পাঠানো সম্ভব হবে।
শেষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার সমাবেশে উপস্থিত খামারিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সমাবেশে প্রাণিসম্পদ বিভাগের প্রান্তিক ৭০০ খামারি ও মৎস্য অধিদপ্তরের ৫০ জন খামারি উপস্থিত ছিলেন।