ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

ডিসি পার্কে সংঘর্ষের জের প্রাইম মুভার ও লরি শ্রমিকদের কর্মবিরতি

চট্টগ্রাম বন্দর অবরুদ্ধ, পণ্যের প্রবেশ ও ডেলিভারি বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ০০:৩৯, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

চট্টগ্রাম বন্দর অবরুদ্ধ, পণ্যের প্রবেশ ও ডেলিভারি বন্ধ

চট্টগ্রামের ডিসি পার্কে সংঘর্ষের জেরে বুধবার প্রাইম মুভার শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে বন্ধ হয়ে যায় বন্দরে পণ্য প্রবেশ ও ডেলিভারি

চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট ডিসি পার্কের কর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে চারদফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছে প্রাইম মুভার শ্রমিকরা। মঙ্গলবার রাতভর ও বুধবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেছেন প্রাইম মুভার শ্রমিকরা। এর আগে তারা মঙ্গলবার রাত থেকে ভোর পর্যন্ত সড়কে গাড়ি রেখে বিক্ষোভ করেছিল তারা। শ্রমিকদের এই কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রাম বন্দর একপ্রকার অবরুদ্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় আমদানি রপ্তানির পণ্য পরিবহন। 
মঙ্গলবার রাতে ডিসি পার্কের কয়েকজন গার্ড ও কর্মচারী প্রাইম মুভার চালক-হেলপারদের মারধর করে। প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ পরিবহন শ্রমিকরা ডিসি পার্কে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। রাতভর এ নিয়ে ছিল চরম উত্তেজনা। মারধরের ঘটনার পর টোল রোডের নিরাপত্তা এবং আহতদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেন প্রাইভ মুভার শ্রমিক ও চালকরা। শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে রাখায় ডিপো এবং বন্দর থেকে কন্টেনারও বের হয়নি। 
রাতে ফৌজদারহাট বন্দর টোল সড়কের ডিসি পার্কের সামনে কর্মীদের সঙ্গে প্রাইম মুভার চালকদের কথাকাটাকাটি থেকে মারামারি শুরু হয়। স্থানীয় কিছু বাসিন্দা এবং বিভিন্ন যানবাহন চালকরাও মিলেমিশে প্রাইম মুভার চালক হেলপারদের সঙ্গে হাতাহাতি ও মারামারিতে জড়ায়। এর প্রভাব পড়ে ডিসি পার্কে। সেখানে বিক্ষুব্ধ চালক ও শ্রমিকরা গিয়ে পার্কের গেটসহ বিভিন্ন স্থাপনায় তা-ব চালায়। 
প্রাইম মুভার শ্রমিকরা জানিয়েছেন, ফুল উৎসবের কারণে টোল রোডে যানজট সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে মঙ্গলবার একটি লরি কন্টেনার নিয়ে সীতাকু-ের দিকে যাওয়ার সময় পার্কের কয়েকজন কর্মী সেটিকে থামার সংকেত দেয়। ওই সময় ডিসি পার্কের একটি গাড়ি বের করেন সেখানকার কর্মীরা। অপরদিকে যে লরিকে থামার সংকেত দেওয়া হয়েছিল, সেটি কিছুটা দূরে গিয়ে থামে। এ কারণে লরির চালক ও সহকারীকে মারধর করা হয়।

প্রাইম মুভার শ্রমিকরা এর প্রতিবাদ জানালে তাদেরও বেঁধে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেন শ্রমিকরা। পরে প্রাইম মুভার শ্রমিকরা নগরীর কাস্টমস মোড় থেকে সল্টগোলা এলাকা পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখান যান চলাচল বন্ধ রেখে। 
মঙ্গলবার রাত ২টা পর্যন্ত সড়ক বন্ধ থাকায় লরিসহ বিভিন্ন যানবাহন আটকা পড়ে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। পরে ভোরে সড়ক থেকে চালক ও শ্রমিকরা সরে গেলেও বুধবার সকালের দিকে আবারও বিক্ষোভে নামেন তারা। দফায় দফায় রাস্তা বন্ধ করার কারণে সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। 
এদিকে বুধবার দুপুর পর্যন্তু প্রায় তিন থেকে চার কিলোমিটার এলাকায় কিছু সিএনজি অটোরিক্সা, প্রাইভেট গাড়ি ও বাস চলাচলের জন্য সরু রাস্তা ছেড়ে দেয় শ্রমিকরা। কিন্তু কোনো লরি চলাচল না করায় সড়কে যানজট এবং বন্দর থেকে আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের কন্টেনারও বিভিন্ন ডিপোগুলোতে আনা নেওয়া বন্ধ হয়ে থাকে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব বুধবার সন্ধ্যায় ওমর ফারুক জনকণ্ঠকে জানান, বন্দর অভ্যন্তরে পণ্য ওঠানামা স্বাভাবিক রয়েছে। তবে শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে থাকায় বন্দর থেকে আমদানির পণ্য ডেলিভারি এবং রপ্তানির পণ্য আসা বন্ধ রয়েছে। এছাড়া বন্দর এলাকায় সড়কগুলোতে যানবাহন চলার অবস্থা নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রশাসনিকভাবে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। 
অপরদিকে মঙ্গলবার রাতে জেলা প্রশাসন সূত্র গণমাধ্যমকে জানায়, ডিসি পার্ক সংলগ্ন রাস্তায় ট্রাক, লরির চালক ও শ্রমিকদের দুইপক্ষের মধ্যে বাগ্বিত-া হয় এবং সহিংসতার রূপ নেয়। এরপরই ডিসি পার্কে তা ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটরা সেখানে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। 
প্রাইম মুভার ও ট্রেইলর শ্রমিকরা যে চারদফা দাবি তুলে ধরেছেন, সেগুলো হলো শ্রমিকদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা, আহতদের চিকিৎসা  ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা, ডিসি পার্কের জন্য বিকল্প পথে ব্যবস্থা করা এবং সড়কে শ্রমিকদের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদান। 
শ্রমিকদের কমবিরতির প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের স্বাভাবিক কর্মকা-ে। এ প্রসঙ্গে বেসরকারি কন্টেনার ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডার সচিব রুহুল আমিন সিকদার জানান, প্রাইম মুভার ও ট্রেইলার শ্রমিকরা কাজ না করায় এবং বন্দরের প্রবেশ পথগুলো অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় বুধবার বিকেল পর্যন্ত ডিপোগুলো থেকে কোনো পণ্য বের হয়নি এবং ডিপো থেকে কোনো রপ্তানির কন্টেনারও বন্দরে প্রবেশ করতে পারেনি। 
উল্লেখ্য, ফৌজদারহাটে অবস্থিত ডিসি পার্কে প্রতিবছরের জানুয়ারিতে চলে আসছে মাসব্যাপী ফুল উৎসব। জানুয়ারি মাস শেষ হলেও এ পার্কে এখনও লাখো ফুলের সমারোহ। প্রতিদিনই ছুটছে হাজার হাজার দর্শনার্থী। যে সড়ক দিয়ে এ পার্কে প্রবেশ করতে হয়, সেই একই সড়কে চলাচল করে বন্দরের পণ্যবাহী বিভিন্ন ধরনের ভারি যানবাহন। ফলে, সেখানে বিশৃঙ্খলা, যানজট সৃষ্টি এবং অনভিপ্রেত ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়।

×