ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি সেতু নির্মাণ কাজ

নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা

প্রকাশিত: ২০:৩১, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি সেতু নির্মাণ কাজ

ব্রিজের কাজ না করেই বছরের পর বছর এভাবে ফেলে রাখা হয়েছে

আড়পাঙ্গাশিয়া নদীতে পাঁচ কোটি ৭৩ লাখ ৩৭ হাজার ২৪৮ টাকার  সেতু নির্মাণ কাজ পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে বরগুনা-১ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর প্রভাব খাটিয়ে সাব-ঠিকাদার মো. সগির হোসেন কাজ না করে বছরের পর বছর ফেলে রেখেছেন। এতে আমতলী ও তালতলী উপজেলার লাখো মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। দ্রুত এ সেতুর নির্মাণ কাজ সমাপ্তের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

জানা গেছে, আমতলী থেকে তালতলী উপজেলা সড়কপথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম তালতলী সড়ক। ৪০ কিলোমিটার এই সড়কটির আড়পাঙ্গাশিয়া নদীর ওপর ১৯৮৫ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করে। এ ব্রিজ দিয়ে দুই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পারাপার হয়। দুই উপজেলার সেতুবন্ধ ওই সেতু দিয়ে প্রতিদিন ঢাকা ও তালতলীগামী পরিবহন বাস, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাভার ভ্যান, ট্রাক, প্রাইভেট কার, মাহেন্দ্র, ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা ও মোটরসাইকেলসহ কয়েক সহস্র্রাধিক গাড়ি চলাচল করে। ওই সেতুটি ২০১০ সালে নড়বড়ে হয়ে পড়ে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বেশ কয়েকবার সংস্কার করেছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ওই নদীতে গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর  ৬০ মিটার দৈর্ঘ্য আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব পাস করেন। ওই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর দরপত্র আহ্বান করে। পাঁচ কোটি ৭৩ লাখ ৩৭ হাজার ২৪৮ টাকা বরাদ্দ হয়। পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার টিএনএএসআই জেডি নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই কাজ পায়। দরপত্রে উল্লেখ আছে ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল কাজ শুরু করে ২০২১ সালের ৩০ মার্চ কাজ শেষ করতে হবে। কিন্তু  ঠিকাদারি কোম্পানি ওই ব্রিজের কাজ বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগ সাবেক সদস্য বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. সগির হোসেনের কাছে বিক্রি করে। অভিযোগ রয়েছে সাব-ঠিকাদার মো. সগির হোসেন তৎকালীন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর প্রভাব খাটিয়ে ব্রিজের নির্মাণ কাজ না করে ফেলে রাখেন। প্রথম দফায় কাজের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর তিনি ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে কাজ শুরু করেন। নদীর দুই কিনারে দুইটি গার্ডার কাজ অসমাপ্ত রেখেই কাজ বন্ধ করে দেন। কাজ না করেই তিনি প্রভাব খাটিয়ে প্রায় তিন কোটি টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন। এরপর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও তিনি ব্রিজের কাজ করেনি। বুধবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আড়পাঙ্গাশিয়া নদীর দুই পাড়ে দুইটি গার্ডার নির্মাণ করা আছে। ওই গার্ডার দুটিতে ময়লা আবর্জনায় একাকার হয়ে আছে।    
আড়পাঙ্গাশিয়া গ্রামের মো. হুমায়ূন কবির হাওলাদার বলেন, ঠিকাদার ব্রিজের কাজ না করে বছরের পর বছর ফেলে রেখেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে দুই উপজেলার অন্তত লক্ষাধিক মানুষ। দ্রুত ব্রিজ নির্মাণ কাজ সমাপ্তির দাবি জানান তিনি।
সাব-ঠিকাদার মো. সগির হোসেন বলেন, ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। আশাকরি দ্রুত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ঠিকাদার সগির হোসেনকে দ্রুত ব্রিজ নির্মাণের কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। দ্রুত কাজ না করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ঠিকাদার ব্রিজ নির্মাণ কাজের বেশি টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন। তবে কত টাকা নিয়েছেন তা আমি জানি না। বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশল অফিস ভালো জানে। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, বিষয়টি আমি অবগত আছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্রিজ নির্মাণ কাজ শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বরগুনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, দীর্ঘদিন আড়পাঙ্গাশিয়া নদীর গার্ডার ব্রিজের কাজ বন্ধ আছে তা ঠিক, কিন্তু বর্তমানে ঠিকাদার কাজ শুরু করেছেন। আশাকরি এবার ব্রিজের কাজ শেষ হবে।

×