আড়পাঙ্গাশিয়া নদীতে পাঁচ কোটি ৭৩ লাখ ৩৭ হাজার ২৪৮ টাকার ব্রিজের নির্মাণ কাজ পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে বরগুনা-১ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর প্রভাবখাটিয় সাব-ঠিকাদার মোঃ সগির হোসেন কাজ না করে বছরের পরপর ফেলে রেখেছেন। এতে আমতলী ও তালতলী উপজেলার লাখো মানুষ চরম ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে। দ্রুত এ ব্রিজের নির্মাণ কাজ সমাপ্তের দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, আমতলী থেকে তালতলী উপজেলা সড়ক পথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম তালতলী সড়ক। ৪০ কিলোমিটার এই সড়কটির আড়পাঙ্গাশিয়া নদীর উপর ১৯৮৫ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করে। এ ব্রিজ দিয়ে দুই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পারাপার হয়। দুই উপজেলার সেতুবন্ধন ওই ব্রিজটি দিয়ে প্রতিদিন ঢাকা ও তালতলীগামী পরিবহন বাস, আইসোটেক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাভার ভ্যান, ট্রাক, প্রাইভেট কার, মাহেন্দ্র, ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা ও মোটর সাইকেলসহ কয়েক হাজার গাড়ী চলাচল করে। ওই ব্রিজটি ২০১০ সালে নরবরে হয়ে পড়ে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বেশ কয়েকবার সংস্কার করেছে।
২০২০ সালের জানুয়ারী মাসে ওই নদীতে গাডার ব্রিজ নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিপ্তর ৬০ মিটার দৈর্ঘ্য আরসিসি গাডার ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব পাশ করেন। ওই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর দরপত্র আহবান করে। পাঁচ কোটি ৭৩ লাখ ৩৭ হাজার ২৪৮ টাকা বরাদ্দ হয়। পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার টিএনএএসআই জেডি নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওই কাজ পায়।
দরপত্রে উল্লেখ আছে ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল কাজ শুরু করে ২০২১ সালের ৩০ মার্চ কাজ শেষ করতে হবে। কিন্তু ঠিকাদারী কোম্পানী ওই ব্রীজের কাজ বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগ সাবেক সদস্য বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সগির হোসেনের কাছে বিক্রি করে।
অভিযোগ রয়েছে সাব- ঠিকাদার মোঃ সগির হোসেন তৎকালিক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর প্রভাব খাটিয়ে ব্রিজের নির্মাণ কাজ না করে ফেলে রাখেন। প্রথম দফায় কাজের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর তিনি ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে কাজ শুরু করেন। নদীর দুই কিনারে দুইটি গাডার কাজ অসমাপ্ত রেখেই কাজ বন্ধ করে দেয়। কাজ না করেই তিনি প্রভাব খাটিয়ে প্রায় তিন কোটি টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন।
এরপর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও তিনি ব্রিজের নির্মাণ কাজ করেনি। গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলন ফ্যাসিস্ট শেষ হাসিনা পালিয়ে গেলে সাব-ঠিকাদার মোঃ সগির হোসেন আত্মগোপনে যান। গত পাঁচ বছর ধরে ব্রিজ নির্মাণ কাজ না করায় আমতলী-তালতলী দুই উপজেলার লক্ষাধীক মানুষ চরম ভোগান্তিতে পরেছে। পাশের নরবরে বেইলি ব্রিজ দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ ও যানবাহন চলাচল করছে।
বুধবার সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, আড়পাঙ্গাশিয়া নদীর দুই পাড়ে দুইটি গাডার নির্মাণ করা আছে। ওই গাডার দুটিতে ময়লা আর্বজনায় একাকার হয়ে আছে। আড়পাঙ্গাশিয়া গ্রামের মোঃ হুমায়ূন কবির হাওলাদার বলেন, ঠিকাদার ব্রিজের কাজ না করে বছরের পর বছর ফেলে রেখেছে। এতে দুর্ভোগে পরেছে দুই উপজেলার অন্তত লক্ষাধীক মানুষ। দ্রুত ব্রিজ নির্মাণ কাজ সমাপ্তির দাবী জানান তিনি।
ছোটবগী গ্রামের মোঃ নজরুল বিশ্বাস বলেন, কয়েক বছর ধরেই ব্রিজের দুইটি গাডার নির্মাণ করে ফেলে রেখেছে। ব্রিজ নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় মানুষ জীবনের ঝুকি নিয়ে নরবরে বেইলি ব্রিজ দিয়ে চলাচল করছে।
বাস গাড়ী চালক মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, ব্রিজ নির্মাণ না করায় খুবই ভোগান্তির মধ্যে চলাচল করতে হচ্ছে। দ্রুত ব্রীজ নির্মাণ কাজ সমাপ্তির দাবী জানান তিনি। সাব-ঠিকাদার মোঃ সগির হোসেন বলেন, ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।
আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ ইদ্রিস আলী বলেন, ঠিকাদার সগির হোসেনকে দ্রুত ব্রিজ নির্মাণের কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। দ্রুত কাজ না করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, ঠিকাদার ব্রিজ নির্মাণ কাজের বেশ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন। তবে কত টাকা নিয়েছেন তা আমি জানিনা। বরগুনা নির্বাহী প্রকেীশল অফিস ভালো জানেন।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, বিষয়টি আমি অবগত আছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্রিজ নির্মাণ কাজ শেষ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বরগুনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, দীর্ঘদিন আড়পাঙ্গাশিয়া নদীর গাডার ব্রিজের কাজ বন্ধ আছে তা ঠিক কিন্তু বর্তমানে ঠিকাদার কাজ শুরু করেছেন। আশা করি এবার ব্রিজের কাজ শেষ হবে।
আশিক