গ্রাহকরা টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে
জামালপুরের মাদারগঞ্জে উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় হাজার কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করে উধাও হয়ে গেছে বেশকিছু সমবায় সমিতি। এতে সর্বস্ব হারিয়ে দিশেহারা গ্রাহক। টাকা ফেরত চেয়ে মঙ্গলবার সকালে উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমিতির হাজারো গ্রাহক জমায়েত হয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে।
ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলা সমবায় কার্যালয় থেকে নিবন্ধন নিয়ে মাদারগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন নামে গড়ে ওঠে দুই শতাধিক সমবায় সমিতি। এগুলোর মধ্যে মাদারগঞ্জ আল-আকাবা বহুমুখী সমবায় সমিতি, শতদল বহুমুখী সমবায় সমিতি, স্বদেশ বহুমুখী সমবায় সমিতি, নবদ্বীপ বহুমুখী সমবায় সমিতি, জনতা শ্রমজীবী সমবায় সমিতি অন্ন্যতম।
এসব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পেশার প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহক হাজার কোটি টাকার আমানত জমা রাখেন। সবচেয়ে বেশি টাকা জমা রাখেন আল-আকাবা, শতদল বহুমুখী, স্বদেশ ও আশার আলো সমিতিতে। তবে শুরুর দিকে গ্রাহকদের মুনাফা দিলেও বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকজন টাকা নিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন। এতে সর্বস্ব হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকেই।
জানা গেছে, সমবায় সমিতি চেয়ারম্যানরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ব্যানার ব্যাবহার করে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে এক হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এদের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জামালপুর ৩ আসনর সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজমের খালাত ভাই শতদল বহুমুখী সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান দ্বায়িত্ব পালন করেন।
অন্যদিকে জামালপুরের জেলা জামায়তের বহিষ্কৃত নায়েবে আমির হুমায়ুন কবির, সদস্য সোজা এবং বর্তমান প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর উপজেলা জামায়েতের বহিষ্কৃত সদস্য। শতদল বহুমুখী সমবায় সমিতির গ্রাহক উপজেলার চরপাকেরদহ ইউনিয়নের তেঘুরিয়া এলাকার রুমা আক্তার বলেন, আমার স্বামী একজন প্রবাসী, প্রবাসে থাকার সময় তাঁর কষ্টে অর্জিত সকল টাকা খেয়ে না খেয়ে সমবায় সমিতিতে জমা করি।
পরে তিন চার মাস মুনাফা দিয়ে বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায়। এখন আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। আল-আকাবা বহুমুখী সমবায় সমিতির গ্রাহক ফারজানা আক্তার বলেন, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নিজেদের পাঁচ লাখ টাকা জমা রাখেন। আমানতের বিপরীতে প্রতি মাসে ভালো মুনাফা পাওয়ার আশায় তার মা আনোয়ারা বেগমও সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা শতদল বহুমুখী সমবায় সমিতিতে জমা রাখেন।
হঠাৎ করে গত দুই বছর ধরে মুনাফা দেওয়া বন্ধ করে। পরে সমিতির লোকজন টাকা দেবে বলে আত্মগোপনে চলে যায়। সাবেক ইউপি চেয়াররম্যান ও কৃষকনেতা শিবলুল বারীর রাজুর নেতৃত্বে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে টাকা আমানত রেখে প্রতারিত আমানতকারীরা মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বক্তব্য রাখেন।
পরে প্রশাসনের পক্ষ থকে কোনো প্রকার সাড়া না পাওয়ায় তাদের অবস্থান থেকে সরে আসেন এবং আগামী সাত দিনের মধ্যে কোনো ব্যাবস্থা না নিলে আবার কর্মসূচি দেবেন বলে স্থান ত্যাগ করেন তারা।