ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১

পঁচিশভাগ স্লিপার নষ্ট

জোড়াতালি দিয়ে চলছে রেল

মাহমুদুল আলম নয়ন, বগুড়া অফিস

প্রকাশিত: ০০:২২, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

জোড়াতালি দিয়ে চলছে রেল

করতোয়া নদীর ওপর রেল ব্রিজের সিøপারের নড়াচড়া ঠেকাতে বাঁশ দিয়ে জোড়া দেওয়া হয়েছে

বগুড়ায় রেলওয়ের সান্তাহার-বোনারপড়া সেকশনে রেললাইনে কাঠের স্লিপারের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ অকেজো। স্লিপারের ওপরেই বসানো থাকে রেললাইন। এসব স্লিপারের বেশিরভাগ থাকে রেলওয়ে ব্রিজ লুপ লাইন, জয়েন্ট ও রেল ক্রসিংএ ও সিগন্যাল পয়েন্টে। ভাঙ্গা ও ক্ষয়ে যাওয়া অকেজো প্রায় স্লিপারগুলো পরিবর্তনের প্রয়োজন হলেও প্রকৌশল বিভাগের হাতে নেই কোনো স্লিপার।

এক বছর আগে চাহিদা জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দফায় স্লিপার না থাকার বিষয়টি জানানো হলেও এখন পর্যন্ত তা এসে পৌঁছায়নি। রেলওয়ের বগুড়া প্রকৌশল বিভাগ শুধু বলতে পারছেন টেন্ডার হয়েছে। তবে তাদের দাবি কাঠের নষ্ট স্লিপারের পরিমাণ ১০/১৫ ভাগের বেশি হবে না। তবে তারা নষ্ট সিলপারের ওপর ট্রেন চলাচলের কথা অস্বীকার করেননি। ফলে অকেজো স্লিপারের ওপর থাকা রেললাইনের ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়েই।

এর মধ্যে রেল ব্রিজগুলোর সবই কাঠের স্লিপারের ওপর রেললাইন থাকায় সে গুলোতে ঝুঁকি আরও বেশি। বিশেষ করে বগুড়া শহরের রাজাবাজার ও ফতেহ আলীবাজার সংলগ্ন চেলোপাড়া রেলওয়ে (ব্রিজ ২৫) ব্রিজের অবস্থা বর্তমানে খুবই নাজুক। এই ব্রিজের কয়েক স্থানে অকোজে স্লিপার যাতে নড়াচড়া করতে না পারে সে জন্য কাঠের স্লিপারের সঙ্গে বাঁশ ও বাটাম জোড়া দেওয়া হয়েছে। ব্রিজের গার্ডার ও নিচের অংশের পাটাতন মরিচা ধরেছে। আর এসব ঝুঁকি নিয়েই চলছে ট্রেন।
সূত্র জানায়, বগুড়ার সান্তাহার থেকে বোনারপড়া পর্যন্ত রেলওয়ের সেকশনটি রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগের মধ্যে। আর বোনারপাড়া পর্যন্ত রেললাইন মোট ৭৮ কিলোমিটার। কাঠ এবং কংক্রিট দু’ধরনের স্লিপার রয়েছে রেললাইনে। বগুড়া থকে বোনারপাড়া এই দুরুত্বের মধ্যে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ কাঠের স্লিপার অকেজো দীর্ঘ সময় ধরে। লুপ লাইন ক্রসিং জয়েন্ট ও রৌঢে ব্রিজে কাঠের স্লিপার রয়েছে।

এ অবস্থায় গত বছর কয়েকটি ট্রেনের বগিও লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রেলেওয়ে বগুড়া প্রকৌশল বিভাগের আওতাধীন বগুড়া সেকশনে বক্স কালভার্টসহ ৪৮টি রেলওয়ে ব্রিজ রয়েছে। এর মধ্যে ৪/৫টিতে কংক্রিটের স্লিপার রয়েছে। অন্য সব ক’টিতে কাঠের স্লিপার রয়েছে বলে রেল সূত্র জানিয়েছে। এসব রেলওয়ে ব্রিজের মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থা শহরের চেলোপাড়া রেলওয়ে ব্রিজ।

ব্রিটিশ আমলে তৈরিী এই ব্রিজের স্থায়িত্বকাল অনেক আগেই পেরিয়েছে। মেরামত সংস্কারবিহীন অবস্থায় শহরে ট্রেন প্রবেশমুখে অবস্থিত এই ব্রিজের অবস্থা একেবারে নাজুক। ব্রিজের নিচের অংশে ছোট করিডরের মতো জায়গা দিয়ে লোক চলাচাল করার কথা। তবে লোকজন ব্রিজে রেললাইনের ওপর দিয়েও চলাচল করেন। সেখানকার কয়েক স্থানে পাটাতন নেই। রেললাইনের স্লিপারের অবস্থা দেখে যে কারো আঁতকে ওঠার কথা।

বেশিরভাগ কাঠের স্লিপার নষ্ট, কোনোটার আবার অংশই নেই। প্রয়োজনের তাগিদে যেমন মানুষ এই রেল ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাফেরা করেন। তেমনি ট্রেনও প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে চলছে। নাট বল্টু যেমন নড়বড়ে তেমনি কাঠের স্লিপারের আবার নড়াচড়া ঠেকাতে লাগানো হয়েছে বাঁশ!। এর সঙ্গে আবার কাঠের বাটামও রয়েছে। গার্ডারেও ধরেছে মরিচা।

সব মিলিয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় ওপর দিয়ে লোকজন ও ট্রেন চলাচল করছে বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে। মাঝে মাঝে লোকজন পাটাতন বা নষ্ট স্লিপারের কারণে পড়ে গিয়ে আহতও হচ্ছেন। ব্রিজের ওপর দিয়ে যাতায়াতকারী চেলোপাড়ার বাসিন্দা শিক্ষক সুজাউদৌলা, চাকরিজীবী শফিকুল ইসলামস এলাকবাসী লাবলু মিয়া ও দুলাল প্রামাণিকসহ অন্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় মন্তব্য- এই ব্রীজের কারণে যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, ট্রেন আসার সময় ব্রিজের জয়েন্টগুলো নড়তে শুরু করে।

রেলওয়ে লালমনিরহাট বিভাগের সহকারী সেতু প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) তৌহিদুল ইসলাম জানান বগুড়া রেলওয়ে ব্রিজে বিষয়ে জানান, এটি সংস্কার করা প্রয়োজন। স্লিপার, ওয়েল্ডিং থেকে প্লেট বিভিন্ন ধরনের কাজ রয়েছে। বাজেট বরাদ্দ পাওয়া গেলেই কাজ করা হবে। বগুড়া রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইদুর রহমান জানান তাদের নিকট কাঠের কোনো স্লিপার নেই। তাই স্লিপার নষ্ট হলেও তা প্রতিস্থাপন করা যাচ্ছে না। গত বছর তাদের পক্ষ থেকে কয়েক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। স্লিপারের জন্য দরপত্র হলেও এগ্রিমেন্ট হয়নি।

তবে তারা আশা করছেন কয়েক মাসের মধ্যে এটি এসে পৌঁছবে। তিনি ট্রেন চলাচলে ঝুঁকির কথা অস্বীকার করে জানান ঝুঁকি থাকলে তারা গতি কমাতেন। জানান এই মুহূর্তে ৭/৮শ’ কাঠের স্লিপার প্রয়োজন। তবে রেলওয়ের নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছে কমপক্ষে তাদের দেড় হাজার কাঠের স্লিপার দ্রুত প্রয়োজন। এটি না আসলে ও রেলব্রিজ মেরামত না করলে ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি থেকেই যাবে।

×