ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১

ঢিলেঢালা ভাব, ঘুরে বেড়ানো, টুকটাক বই সংগ্রহ

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:১১, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ঢিলেঢালা ভাব, ঘুরে বেড়ানো, টুকটাক বই সংগ্রহ

অমর একুশে বইমেলায় সময় প্রকাশনের প্যাভিলিয়ন। মানসম্পন্ন বইয়ের পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন প্যাভিলিয়ন আকৃষ্ট করছে পাঠকদের

এক মাসের মেলা। চারদিন গত হয়েছে। ফলে, এখনও ঘুমঘুম চোখ। আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠার চেষ্টা। বইয়ের সংগ্রহ বরাবরের মতোই বিপুল। বিশাল। সে তুলনায় পাঠক যৎসামান্য। ফলে, একটা ঢিলেঢালা ভাব। 
চতুর্থ দিনে মঙ্গলবার মেলা ঘুরে মনে হয়েছে, প্রাণ ফিরে পেতে আরও কয়েকদিন লাগবে। আগামী শুক্রবার ছুটির দিনে ভালো কিছু আশা করছেন প্রকাশকরা। তবে জনপ্রিয় সাহিত্যের প্রতি সাধারণ পাঠকের যে দুর্বলতা, সেটি এ অবস্থায়ও দৃশ্যমান। তরুণ-তরুণীদের অনেকেই মেলায় ঢুকে এদিক ওদিক ঘুরছেন। দাঁড়াচ্ছেন। গল্প করছেন। ছবি তুলছেন ঘনঘন।

আর তারপরই চলে যাচ্ছেন হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের স্টল বা প্যাভিলিয়নে। প্রয়াত লেখক আজও জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। আজও তার তুলনা তিনি নিজেই। অনেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে বই আছে তার। বিশেষ করে অন্যপ্রকাশের প্যাভিলিয়নে আলাদা ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখানে হুময়ূন আহমেদের বইয়ের বড় সংগ্রহ। 
জনপ্রিয় উপন্যাস বা গল্পগ্রন্থের পাশাপাশি সিরিয়াস বইগুলোও হাতে নিয়ে দেখছেন পাঠক। খোঁজখবর করছেন নতুন বইয়ের। সময় প্রকাশনের প্যাভিলিয়নে গল্প উপন্যাস ছাড়াও মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা গুরুত্বপূর্ণ অনেক বই রয়েছে। রয়েছে ইতিহাস গ্রন্থ। বিকেলে প্যাভিলিয়নের সামনে দাঁড়িয়ে দেখা গেল, এসব বই হাতে নিয়ে দেখছেন পাঠক। ভূমিকা পড়ে ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। আনিসুল হকের ‘মা’ উপন্যাসটি এই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সর্বাধিক বিক্রীত গ্রন্থগুলোর একটি।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর তরুণ আজাদ এবং তার সংগ্রামী মায়ের ইতিহাস গড়া আত্মত্যাগ বইয়ের মূল উপজীব্য। বইটি প্রতিদিনই বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকাশক ফরিদ আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা ৩৫ বছর ধরে প্রকাশনায় আছি। দীর্ঘ সময়ে পাঁচ শতাধিক লেখকের দুই সহ¯্রাধিক বই প্রকাশ করেছি। এবারের মেলায় আসছে আরও ৬০টি নতুন বই। এসব বই সুনির্বাচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাঠক নিজের পছন্দ মতো সংগ্রহ করতে পারবেন।

আমরা অপেক্ষা করে আছি। নানা বিষয়ে বিখ্যাত লেখকদের লেখা বই নিয়ে মেলায় আছে আগামী প্রকাশনীও। এই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সামনে সিরিয়াস পাঠকের আনাগোনাই বেশি লক্ষ্য করা গেছে। হুমায়ুন আজাদ, আহমদ শরীফ, সরদার ফজলুল করিম থেকে শুরু করে সলিমুল্লাহ খান বা ফরহাদ মজহারÑ কার বই নেই এখানে! ফলে, চিন্তাশীল পাঠকরা এই গন্তব্যে পৌঁছতে দেড়ি করছেন না। 
সবচেয়ে পুরনো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি মাওলা ব্রাদার্স। এই প্রতিষ্ঠানেও রয়েছে কালজয়ী সাহিত্য, মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, জীবনীসহ নানা বিষয়ে লেখা গুরুত্বপূর্ণ সব বই। কিছু সময় প্যাভিলিয়নের পাশে দাঁড়িয়ে দেখা গেছে, পাঠক মন দিয়েই এসব বই দেখছেন। কিনছেনও।

সাহিত্য প্রকাশ, পাঠক সমাবেশ, কথাপ্রকাশ, ঐতিহ্যসহ আরও কিছু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে আনাগোনা আছে পাঠকের। প্রকাশকদের মেলায় তেমন পাওয়া না গেলেও বিক্রয়কর্মীরা জানিয়েছেন, বিক্রি একেবারে মন্দ নয় তাদের। প্রথমদিকে আশা করা হয় কম। সে তুলনায় বিক্রি মন্দ নয়। 
৪৭ নতুন বই ॥ চতুর্থদিনে মঙ্গলবার একাডেমির নথিভুক্ত হয়েছে  নতুন আরও ৪৭টি বই। এসবের মধ্যে রয়েছে উপন্যাস গল্প কবিতাসহ নানা বিষয়ে লেখা বই।   
মূল মঞ্চের আলোচনা ॥ এদিন বইমেলার মূলমঞ্চে ছিল ‘কুমুদিনী হাজং : জুইলৗ তারা, তারালা জুই’ শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাভেল পার্থ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মতিলাল হাজং এবং পরাগ রিছিল। সভাপতিত্ব করেন আবু সাঈদ খান।  
প্রাবন্ধিক বলেন, ঔপনিবেশিক জুলুমবিরোধী কৃষক আন্দোলনের এক সংগ্রামী নেত্রী কুমুদিনী হাজং। তিনি ঔপনিবেশিক শাসন, বৈষম্য, সার্বভৌমত্ব, আত্মপরিচয়, ন্যায্য মজুরি, কৃষি, ভূমি, অরণ্য কিংবা সমাজ রূপান্তরের প্রশ্নগুলো জারি রেখে লড়াই চালিয়ে গেছেন। কুমুদিনী হাজং ঔপনিবেশিক জুলুম, যুদ্ধ, মহামারি, দাঙ্গা, দখল, লুণ্ঠন, পরিবেশ-গণহত্যা ও কর্তৃত্ববাদী ইতিহাসের সাক্ষী।

ব্রিটিশ আমলে অন্যায় টংক প্রথার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা টংক আন্দোলনে বহু হাজং নারী-পুরুষ শহিদ হন। তবে এই আন্দোলনের সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত নাম কুমুদিনী হাজং। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত থেকে শুরু করে ব্রিটিশ জুলুম, জাতিরাষ্ট্রিক জাত্যাভিমানের রক্তদাগের ভেতর দিয়ে তাই কুমুদিনীকে পাঠ করা জরুরি। 
আলোচকদ্বয় বলেন, টংক আন্দোলনে কুমুদিনী হাজংয়ের মতো আরও নাম না জানা অনেক নারীর প্রবল অংশগ্রহণ ছিল। তারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে কৃষক সমিতি গঠন করেছেন, নারী-পুরুষদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। খুব অল্প বয়স থেকেই অধিকার আদায়ের জন্য বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন কুমুদিনী হাজং।

সমৃদ্ধ কৃষিজীবনের স্বপ্ন নিয়ে কৃষি ব্যবস্থা ও কৃষক সমাজকে সকল কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করার জন্য জীবন বাজি রেখে টংক আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তাঁর সংগ্রামী জীবন, কর্ম ও অবদান নিয়ে নানামুখী গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। 
লেখক বলছি মঞ্চ ॥ এই মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক পাপড়ি রহমান ও আতাহার খান।

×