ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১

গত বছর ১ কোটি ২৪ লাখ ৮৭ হাজার যাত্রী পারাপার

যাত্রীসেবায় নজিরবিহীন রেকর্ড শাহজালালের

আজাদ সুলায়মান

প্রকাশিত: ২২:৪৬, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

যাত্রীসেবায় নজিরবিহীন রেকর্ড শাহজালালের

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি চেকইন কাউন্টারে যাত্রীদের লাইন

শত সীমাবদ্ধতার মাঝেও বিদায়ী বছরে সাড়ে ১২ মিলিয়নেরও বেশি যাত্রীকে সেবা দিয়ে নজিরবিহীন রেকর্ড গড়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ৮০ লাখের ধারণক্ষমতা ও ১ লাখ স্কয়ার মিটারের এই বিমানবন্দর দিয়ে এত বিপুলসংখ্যক যাত্রীর চাপ সামলানোকে কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম।

বিগত চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই পুরনো এয়ারপোর্টের চাপ বেড়েছে বছরে বছরে। দক্ষিণ এশিয়ায় তো বটেই- বিশ্বের অন্য  কোনো বিমানবন্দরে ম্যান-মেশিনের এমন আনুপাতিক অস্বাভাবিকতার নজিরও নেই। এত বিপুলসংখ্যক যাত্রী সামাল দিতে গিয়ে এয়ারপোর্টকে বারবারই নানা ধরনের সমালোচনা ও আলোচনা সহ্য করতে হচ্ছে। দেশের এত বিপুলসংখ্যক যাত্রীকে মোকাবিলা করাটা আসলেই যে একটা কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং কাজ সেটা দেশের এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরাও  স্বীকার করেন।

তারপরও এখানে পান থেকে চুন খসলেই হুলস্থূল পড়ে যায়, হৈচৈ দেখা দেয়, বদনাম রটে যায় আলোরগতিতে। সর্বশেষ সম্প্রতি প্রবাস ফেরত যাত্রীর সঙ্গে নিরাপত্তা কর্মীদের ধস্তাধস্তির মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় এয়ারপোর্টকে চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে। এ ঘটনায় দায়ী নিরাপত্তাকর্মীদের বিরুদ্ধে শস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম, যিনি বিগত আড়াই বছর ধরে সব ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আসছেন সততা নিষ্ঠা, কঠোর পরিশ্রম ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে।

তার জন্য এই চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে সামনের দিনগুলোতে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে- দিন দিন যাত্রী বাড়ছে আশাতীত হারে, কিন্তু পুরান বিমানবন্দরে অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। থার্ড টার্মিনাল চালু না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে নির্বাহী পরিচালককে যার কাছে যাত্রীদের সেবা আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একমাত্র ব্রত।
বেবিচক জানিয়েছে, গত বছরে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে এক কোটি ২৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭০৬ জন যাত্রী পারাপারের রেকর্ড গড়েছে। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল এক কোটি ১৬ লাখ ৮১ হাজার ১৫০। এতে দেখা যায়, এক বছরে যাত্রী বেড়েছে আট লাখ ছয় হাজার ৫৫৬ জন বা ৬.৯ শতাংশ। এদের বেশিরভাগই আন্তর্জাতিক যাত্রী। আন্তর্জাতিক যাত্রীর সংখ্যা গত বছর সাত লাখ ২৯ হাজার ৬৩৯ জন বেড়েছে।

অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে ৭৬ হাজার ৯১৭ জন কমেছে। অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে ২০২৪ সালে যাত্রী কমেছে ৭৬ হাজার ৯১৭ জন। এর ফলে অভ্যন্তরীণ রুটে এক বছরে ফ্লাইট কমেছে আট হাজার ১০৬টি। আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রী বাড়ার কারণে এক বছরে ফ্লাইট বেড়েছে এক হাজার ১২৫টি। এ কারণে জেট ফুয়েলের চাহিদা বেড়েছে ৩২ হাজার ৫৯৮ মেট্রিক টন।
গত সপ্তাহে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, কর্মীদের অবিশ্বাস্য ও অসাধারণ নৈপুণ্য, নিরলস প্রচেষ্টা, আন্তরিক সেবা ও সমন্বয়ের দরুন আগের চেয়ে অনেকটাই বদলে গেছে বিমানবন্দরের সার্বিক চিত্র। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর দেশের অন্যান্য সেক্টরের মতো এখানেও এসেছে পরিবর্তনের হাওয়া। যিনি আগে দায়িত্বপালনে অনীহা কিংবা গড়িমসি করতেন, এখন তাকেই দেখা যায়, যাত্রীদের স্যার সম্বোধন করে আন্তরিকতার পরিচয় দিতে।

বিমানকর্মী কিংবা বেবিচক স্টাফ- যিনিই ডিউটিতে থাকেন, তার কাছ থেকেই এমন সুআচরণ মিলছে। যাত্রীরা বিশ্বাস করতে পারছে না এটা সেই শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যেখানে এক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাগেজের জন্য দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রীরা গালিগালাজ করত। ইমিগ্রেশন কাস্টমস হলে হয়রানির শিকার হতেন। এখন আর সেই চিরচেনা রূপ নেই। এই কদিনেই সেটা বদলে গেছে। এখন যাত্রীদের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে- সিভিল এভিয়েশন ও বিমানসহ অন্যান্য সংস্থার সার্বিক পরিষেবার ভূয়সী প্রশংসা। 
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সাবির্ক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মঞ্জুরুল কবীর ভুইঞা বলেন, যাত্রী সেবা ও নিরাপত্তার বিষয়ে জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করার নির্দেশ দেযা হয়েছে নির্বাহী পরিচালককে। যাত্রীদের প্রতিটি অভিযোগকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও সম্মান দিয়ে দেখা হচ্ছে। সেবার মানসিকতা বা হসপিটালিটি এটিচিউট নিয়েই কাজ করতে হবে প্রত্যেককেই।

তিনি জানালেন, বিগত ক বছরে চোখে পড়ার মতো বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জরুরি ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। যেমন- প্রবাসী লাউঞ্জ, ওয়েটিং লাউঞ্জ, হেল্প ডেস্ক, হজ ইউনিট, দ্রুত লাগেজ ডেলিভারি, ওয়েব পোর্র্টাল চালু, প্রশিক্ষণ প্রদান, পরিষ্কার ও বিশুদ্ধতা নিশ্চিতকরণ, বিএমইটি-তে প্রবাসীদের অবদানের স্বীকৃতি সংক্রান্ত মডিউল চালু, গ্রিন চ্যানেল চালু, নতুন টেলিফোন, ইন্টারনেট, নতুন ট্রলি সংযোজন, হটলাইন চালু, ডমেস্টিকে যাত্রীদের আসন সংযোজন, নির্দেশিকা প্রতিক, মশক নিধন পদ্ধতি, প্রবাসীদের শুল্ক পরিশোধের উপস্থিত দাঁড়িয়ে, আংশিক ই-গেট চালু, পাখি হঠানোর জরিপ, শাটল বাস চালু করার মতো যুগোপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। 
এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে- প্রবাসীদের জন্য চালু করা দুটো লাউঞ্জ। একটি ভেতরে আরেকটি বাইরে। সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল রেমিটেন্স যোদ্ধাদের জন্য প্রবাসীদের জন্য ভিআইপি লাউঞ্জ সুিবধা প্রদানের ঘোষণা দেন। তার নির্দেশেই, জরুরি ভিত্তিতে এয়ারপোর্টে চালু করা হয়েছে এ দুটো লাউঞ্জ।  

গত ১১ নভেম্বর উদ্বোধন হয় প্রবাসী লাউঞ্জ- ১৪ নভেম্বর উদ্বোধন হয় ওয়েটিং লাউঞ্জ। দুটি লাউঞ্জই উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। একটি প্রবাসীদের জন্য নির্মিত বিশেষায়িত প্রবাসী লাউঞ্জ, অন্যটি ওয়েটিং লাউঞ্জ। প্রবাসীদের লাউঞ্জটির অবস্থান ইমিগ্রেশনের পরবর্তী স্থানে। ওয়েটিং লাউঞ্জটি রয়েছে- বহুতল কার পার্কিং ভবনের দ্বিতীয় তলায় যেখানে আগে করোনা মহামারির টিকা প্রদান করা হতো। এ দুটোর নিরাপত্তায় রয়েছেন-এভসেক ও এপিবিএন।

ওয়েটিং লাউঞ্জে রয়েছে বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা, নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা নামাজের জায়গা, প্রক্ষালন কক্ষ, বাচ্চাদের খেলার জায়গা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ক্যাফে ও মাতৃদুগ্ধ পান কক্ষ। ওয়েটিং লাউঞ্জে বাচ্চাদের খেলার জায়গাও রয়েছে। আছে বিনোদনের টেলিভিশন। রয়েছে- যাত্রীদের ফ্লাইট সংক্রান্ত আগমনী ও বহির্গামী মনিটর। 
জানা গেছে, ফ্লাইট মিস করার ভয়ে বেশিরভাগ প্রবাসী বেশ আগেই বিমানবন্দরে চলে আসেন। কেউ রাতের ফ্লাইট ধরতে চলে আসেন দুপুরে, কেউ আবার বিকেলের ফ্লাইট ধরতে চলে আসেন সকালে। যাত্রীদের সঙ্গে তাদের স্বজনরাও আসেন। বিমানবন্দরে মালামাল নিয়ে তারা নানা হয়রানির শিকার হতেন।

এ অবস্থায় যাত্রীদের পাশাপাশি তাদের স্বজনরা যেন শেষ সময়টুকু নির্বিঘেœ কাটাতে পারেন, মূলত সে উদ্দেশ্যেই গত নভেম্বর বিমানবন্দরে চালু হয় দুটি বিশেষ লাউঞ্জ। প্রবাসীদের জন্য এ ধরনের বিশেষ লাউঞ্জ এটিই প্রথম। দেশে যাতায়াতকালে অভিবাসী কর্মীরা এখানে বিশ্রাম নিতে পারছেন। পাশাপাশি ভর্তুকিমূল্যে নাশতাও খাচ্ছেন। আছে ফ্রি ওয়াওইফাই এবং টেলিফোন কলের সুবিধাও।
যদিও বিমানবন্দরে লাউঞ্জ দুটি সম্পর্কে অনেকেই না জানার মূল কারণ এটি নিয়ে তেমন কোনো প্রচার হয়নি। আবার ওয়েটিং লাউঞ্জটি যেখানে, সেখানে নেই কোনো ব্যানার বা সাইনবোর্ড। কার পার্কিং এলাকায় দায়িত্বরত এক এপিবিএন সদস্যের কাছে এই প্রতিবেদক জানতে চাইলেও তিনি লাউঞ্জের অবস্থান জানাতে পারেননি। অথচ, তিনি যেখানে দায়িত্ব পালন করছেন, তার ঠিক ওপরেই লাউঞ্জ।
এই বিস্ময়কর পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে চাইলে ভোলার নিয়ামত নামের এক যাত্রী বলেন, সত্যিই ভালো একটা কাজ। আগে যেখানে লাগেজ পেতাম দু’ঘণ্টায়, এখন সেটা পেয়েছি এক ঘণ্টায়। আগে যেখানে ট্রলি পাওয়া যেত না, এখন দেখা গেছে ট্রলিম্যান দাঁড়িয়ে ডাকছেন, কিছু লাগবে বলে সহযোগিতায় এগিয়ে আাসেন। আগে যেখানে মাথায় করে লাগেজ নিয়ে ক্যানপি থেকে গোলচত্বর যেতাম, এখন সেখানে পেয়েছি শাটল বাস। আরও পাচ্ছি ফ্রি টেলিফোন সুবিধা, ও ইন্টারনেট কানেকশন। সামনে নাকি আরও সুবিধা আসছে।
রেমিটেন্স যোদ্ধাদের জন্য ভিআইপি লাউঞ্জও সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কম পয়সায় খাবারও পাওয়া যায়, একজন করে লোক যাত্রীর সঙ্গে ভিআইপি লাউঞ্জ পর্যন্ত যেতে পারছে। কাস্টমস চ্যানেলেও এখন ছোটখাটো জিনিস নিয়ে আটকানো কিংবা থামানোর মতো কঠোর আচরণ করে না। সব মিলিয়ে এখন এয়ারপোর্টে ভালো লাগে। আমরা আশা করব এটা যেন ধরে রাখা হয় সব সময়। 
এমন বৈপ্লবিক পরিবর্তন ও উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে এয়ারপোর্টের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাজটাই শুধু যাত্রীদের জন্য। সম্মানিত রেমিটেন্স যোদ্ধাদের কিভাবে আরও বেশি সুবিধা ও নিরাপত্তা দেওয়া যায় সেটা নিয়ে আরও কাজ হচ্ছে। আত্মতুষ্টির জন্য কাজ না করে দেশের জন্যই করতে হবে। এটাই আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এটা যাত্রীদের নগারিক অধিকার।

তিনি জানালেন, কিভাবে তিনি বিগত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত  পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিত সম্পর্কে বলেন, আপনাদের সবার সহযোগিতায় আমরা কাজ করছি। সামনে আরও ভালো কিছু দেখতে পাবেন। একটু  ধৈর্য ধরেন। সত্যিকার অর্থেই যাত্রীর নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিত করাই  আমাদের একমাত্র চ্যালেঞ্জ। 
তিনি জানালেন, এই বিমানবন্দর দিয়ে গত বছর বার মিলিয়নেরও বেশি যাত্রীকে সেবা দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের শেষে যাত্রীর সংখ্যা আরও বাড়বে। এখানে দৈনিক কমপক্ষে দেড় শত ফ্লাইট ও ১ শত ৩০টির মতো ডমেস্টিক ফ্লাইট পরিচালিত হয়। এখন পর্যন্ত ৮৮ শতাংশ যাত্রীর কাছে ১৫ মিনিট থেকে ৬০ মিনিটের মধ্যে লাগেজ ডেলিভারি নিশ্চিত হয়েছে। লাগেজ বহনের সুবিধার্থে বিমানবন্দরে নতুন সংযোজনের পর ট্রলির সংখ্যা বেড়ে ৩ হাজার ৬০০টিতে দাঁড়িয়েছে।

ক্যানপি থেকে বের হয়ে বহুতল পার্কিং ও রাস্তা পর্যন্ত প্রত্যেক যাত্রীর জন্য ট্রলিতে করে লাগেজ নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাত্রীদের সেবা দিতে বাড়ানো হয়েছে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা যাত্রীদের সেবা দিতে বাড়ানো হয়েছে বিভিন্ন সুযোগ-সবিধা। বিগত দিনে এই বিমানবন্দরে অবতরণ করার পরে যাত্রীদের লাগেজ পেতে বিলম্ব হওয়ার অনেক অভিযোগ ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠে এসেছে। এখন আর কোনো যাত্রীকে মাথায় বহন করতে দেখা যায় না ট্রলি। তাদের যতটা সম্ভব সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে দেখা  হয়। 
গত রবিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, এখনকার কাজের ধরনেও আনা হয়েছে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন। আগমন ও বহির্গমন এলাকায় যাত্রীদের তথ্য ও দিকনির্দেশনা প্রদানের লক্ষ্যে নতুন করে হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে আগমনী  এলাকায় দুটি এবং বহির্গমন এলাকায় তিনটি হেল্প ডেস্কে ৫৪ জন সহকর্মী ২৪ ঘণ্টা বিনামূল্যে যাত্রীদের বিভিন্ন তথ্য ও দিকনির্দেশনা প্রদান করে যাত্রীসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
বিমানবন্দরের সবচেয়ে সমস্যা ছিল সময়মতো লাগেজ না পাওয়া, ট্রলি না পাওয়া, কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনের ঝামেলা, ক্যানপি থেকে কোনো শাটল বাস না থাকা। এখন এসব পূরণ করার জন্য নেওয়া হয়েছে বিবিধ উদ্যোগ। এখন টার্মিনাল থেকে রাস্তা পর্যন্ত লাগেজ বহন করতে বাড়ানো হয়েছে ট্রলির সংখ্যা। সম্প্রতি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ চালু করেছে শাটল বাস সার্ভিস।

বিমানবন্দর থেকে কাছাকাছি বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশনে আসা- যাওয়া সহজ করতে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে এই উদ্যোগটি চালু করা হয়। নামমাত্র ভাড়ায় এসিযুক্ত বাসে যাত্রীরা তাদের লাগেজসহ চলাচল করতে পারেন। 
জানা গেছে, বিমানবন্দরে কর্মরত সব সংস্থার সদস্য কর্তৃক যাত্রীদের আন্তর্জাতিক মানের সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত বিমানবন্দরে কর্মরত ২৮টি ব্যাচের প্রায় ৮০০ সদস্য প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এয়ারলাইন্স কর্তৃক যাত্রীদের লাগেজ রেখে আসা বা লেফট বিহাইন্ড রোধে কাজ চলছে। এ লক্ষ্যে যেসব এয়ারলাইন্সের বেশি ‘লেফট বিহাইন্ড’ সেগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের আগমনী সিটের ক্যাপাসিটি কমিয়ে এনে এবং সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সগুলোর সার্বিক সহযোগিতায় লাগেজ ‘লেফট বিহাইন্ড’ সমস্যায় উন্নতি করা হচ্ছে।

এখন লেফট বিহাইন্ডের ৯৯ দশমিক ৮০ শতাংশ লাগেজ যাত্রীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এর আগে যাত্রীদের সুবিধার্থে ১০টি ফ্রি টেলিফোন বুথ ও ফ্রি ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবস্থা করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। আগমনী যাত্রীদের বিমানবন্দরে অবতরণের পর বিভিন্ন তথ্যসেবা অনলাইনের মাধ্যমে নিতে হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশী সিমকার্ড না থাকায় যাত্রীরা অসুবিধায় পড়েন। তাই বিভিন্ন অপারেটরের সহায়তায় যাত্রীদের ফ্রি ওয়াই-ফাই ব্যবহার করার ব্যবস্থা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, এটা সত্যিই কঠিন কাজ। ৮০ লাখের ধারণ ক্ষমতার এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ যাত্রী যাতায়াত করেছে। এটা যেমন চ্যালেঞ্জের তেমনই আনন্দের। কারণ আমরা সব যাত্রীকে সর্বাত্মকভাবে সেবা দিতে পেরে আনন্দিত।

যাত্রীদের যাত্রা সুন্দর ও আরামদায়ক করার প্রয়াসে ২৪টির বেশি সরকারি সংস্থা, ৪২টি এয়ারলাইনসসহ সব সংস্থার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কাজ করে যাচ্ছে। বিমানবন্দরে ৪২টি এয়ারলাইনস এখন ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। আমাদের সব স্টেকহোল্ডারের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিদ্যমান অবকাঠামোর মধ্যেই কিভাবে অভ্যন্তরীণ অপারেশনকে গতিশীল করে আরও ভালো যাত্রীসেবা দেওয়া যায় সে ব্যাপারে আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সমর্থন, বেবিচকের সুদূরপ্রসারী নির্দেশনায় এবং সব সরকারি ও বেসরকারি স্টেকহোল্ডারের সমন্বিত প্রচেষ্টায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সর্বদাই সুশৃঙ্খলভাবে যাত্রীসেবা প্রদান এবং জবাবদিহি নিশ্চিতকরণে কাজ করছে।

×