ছবি: প্রতিনিধি
গাজীপুরের শ্রীপুরে এমসি বাজার এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে বসতবাড়ির ৮টি কক্ষ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনে এসব ঘরে থাকা ফ্যান, ফ্রিজ, টিভি, খাট, ওয়ারড্রোব, লেপ-তোষক, আলমারি, স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকাসহ মূল্যবান মালামাল পুড়ে যায়।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল পৌনে ১১টায় শ্রীপুর মাওনা (উত্তরপাড়া) এলাকায় সেলিম খানের টিনশেড ঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে মাওনা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় ৪৫ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। বাড়ির মালিক সেলিম খান জানান, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, পুড়ে যাওয়া ওইসব ঘরে স্থানীয় বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকদের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। প্রতিটি কক্ষে একটি করে পরিবার বসবাস করত। হঠাৎ একটি ঘর থেকে আগুন বের হতে দেখে মুহূর্তের মধ্যে তা পাশের ৮টি ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা অফিসে থাকায় তাদের ঘরের সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পাশাপাশি ৮টি ঘরের সবকটিই টিনশেড। প্রতিটি ঘর একে অপরের সঙ্গে লাগোয়া ছিল। ছোট ছোট কক্ষে একেকটি পরিবার বসবাস করত। আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরগুলোর আসবাবপত্র, ফ্যান, খাট সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। কারও কারও ঘরে থাকা ছেলেমেয়েদের বই-খাতাও পুড়ে গেছে।
কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলার চরসিদাই গ্রামের ফেরদৌস আহমেদের স্ত্রী, পোশাক শ্রমিক সুমি আক্তার (৩৫) বলেন, "হঠাৎ খবর পেলাম ঘরে আগুন লেগেছে। ছুটি নিয়ে ফিরে এসে দেখি আমার নগদ টাকা পুড়ে গেছে। কিছুই বের করতে পারিনি, সব ছাই হয়ে গেছে। এতে আমার প্রায় ২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।"
একই জেলার চর শীতইজা গ্রামের পোশাক শ্রমিক আশরাফুল ইসলামের স্ত্রী খাদিজা (৩৫) বলেন, "আমি অফিসে ডিউটিতে ছিলাম। আগুন লাগার খবর পেয়ে ছুটে এসে দেখি, ঘরের ওপর দিয়ে আগুনের কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। চোখের সামনে পুরো ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেল। আগুনে আমার ৩০ হাজার টাকার মালামাল পুড়ে গেছে।"
জামালপুর জেলার সদর উপজেলার ইটালি বাজার গ্রামের মৃত রুস্তম আলীর ছেলে, কন্ট্রাকটর মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ বলেন, "কখনো কাজ পাই, কখনো পাই না। প্রায় এক বছর ধরে স্ত্রী-সন্তানসহ এই ছোট টিনশেড ঘরে তিন হাজার টাকায় ভাড়া থাকতাম। সব হারিয়ে এখন আমি বড় অসহায়। এতে আমার ৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।"
একই জেলার সদর থানার সোনাটিয়া গ্রামের মৃত বেলায়েত আলীর ছেলে মুকুল মিয়া (৩৫) বলেন, "আমি কাজে গিয়েছিলাম। তখন খবর পেলাম যে ঘরে আগুন লেগেছে। বাসায় এসে দেখি সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। একটি ঘর থেকে লাগা আগুন পাশের ৮টি ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে কিছু মালামাল বের করতে পারলেও বেশিরভাগই পুড়ে গেছে। এতে আমার ১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।"
নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার তাইজত খাঁর ছেলে, পোশাক শ্রমিক মামুন (২৯) বলেন, "আগুন লাগার সময় আমি এবং ৮টি ঘরের বেশিরভাগ সদস্য অফিসে কিংবা বাইরে ছিলাম। তাই কোনো মালামাল বের করতে পারিনি। আগুনে আমার দেড় লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে।"
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর ভীমপাড়া গ্রামের জয়নাল আবেদীনের মেয়ে, পোশাক শ্রমিক রিমা আক্তার (২০) বলেন, "জীবনের স্বপ্ন পূরণের আশায় পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়েছিলাম। তিন হাজার টাকায় টিনশেড ঘর ভাড়া নিয়ে শুরু করেছিলাম নতুন জীবন। তবে সেই স্বপ্ন ও সম্বল কেড়ে নিয়েছে এই নির্মম আগুন। চাকরি করে কিছু টাকা জমিয়েছিলাম, কিন্তু তাও আগুনের লেলিহান শিখা থেকে রক্ষা করতে পারিনি। কাপড়-চোপড় থেকে শুরু করে বিছানাপত্র, কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।"
মাওনা ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউস ইন্সপেক্টর অপূর্ব বল জানান, "সেলিম খানের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় ৪৫ মিনিটের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে বসতবাড়ির ৮টি কক্ষ সম্পূর্ণভাবে পুড়ে যায়। এসব কক্ষ বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা পরিবারসহ ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।"
মোস্তফা কামাল প্রধান/এম.কে.