ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১

পল্লী বিদ্যুতের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা কর্মচারিদের চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:০৬, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ২১:২৮, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পল্লী বিদ্যুতের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা কর্মচারিদের চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি

ছবি: সংগৃহীত

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা কর্মচারিদের নামে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারসহ চাকরিতে পুনর্বহাল এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দমন পীড়ন ও নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগি কর্মকর্তা কর্মচারিরা। মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান। 

বক্তারা বলেন, গ্রাম ও শহরের বিদ্যুৎ বৈষম্য দূরীকরণে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিদ্যমান সংকট নিরসনে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দ্বৈতনীতি পরিহার করে দুটি সংস্থাকে একীভূত করতে হবে। পাশাপাশি চুক্তিভিত্তিক, অনিয়মিতদের চাকরি নিয়মিত করা এবং বিগত সময়ের পল্লী বিদ্যুতের দুর্নীতিবাজদের শাস্তির জন্য নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করারও দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

লিখিত বক্তব্যে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাবেক ওয়্যারিং ইন্সপেক্টর আব্দুস সালাম জাভেদ বলেন, দেশের ৮০ ভাগ অঞ্চলে প্রায় ১৪ কোটি মানুষের বিদ্যুৎ সেবায় নিয়োজিত ৮০টি পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। নিয়ন্ত্রক সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সীমাহীন দুর্নীতি, নিম্নমানের মালামাল ক্রয় ও নন-স্ট্যান্ডার্ড লাইন নির্মাণের কারণে সৃষ্ট গ্রাহক ভোগান্তি, মাঠ পর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও সকল ধরনের পলিসি প্রণয়নসহ আরইবি-পবিস দ্বৈত ব্যবস্থাপনা নিরসনে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস থেকে অভিন্ন চাকুরি বিধি বাস্তবায়ন এবং জরুরি সেবায় নিয়োজিত চুক্তিভিত্তিক/অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের ২ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করা হয়। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে স্মারকলিপি প্রেরণ, বিভিন্ন দফায় গ্রাহক সেবা চালুরেখে কর্মবিরতি, লংমার্চ টু আরইবি, সারাদেশে একযোগে মানববন্ধন ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করা হয়। যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে সরকারের পক্ষ থেকে ২৪ সালের আগস্ট মাসে বিদ্যুৎ বিভাগ, আরইবি এবং পবিসের সমন্বয়ে ০৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে সহযোগিতা না করে বিদ্যমান কাঠামো বহাল রাখার বিষয়ে মতামত দেয় আরইবি। পরবর্তীতে উক্ত কমিটি বিলুপ্ত করে ২৩ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে সরকারের পক্ষ থেকে পুনরায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। প্রায় সাড়ে ০৩ মাস অতিবাহিত হলেও কমিটির প্রতিবেদন সম্পন্ন হয়নি। 

সালাম জাভেদ বলেন, পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে কোন ধরনের কর্মসূচি না থাকা সত্ত্বেও আরইবি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে ভুলবার্তা দিয়ে পরিকল্পিতভাবে গত বছরের ১৬ অক্টোবর আরইবি কর্তৃক পবিসের ১০ জন কর্মকর্তাকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত এবং একই তারিখ দিবাগত রাতে রাষ্ট্র দ্রোহের মামলা দায়ের করা হয়। উল্লেখ্য যে, একই ব্যক্তিদের বিগত সরকারের সময়েও ২০২৪ সালের মে মাসে সরকারের উন্নয়ন বিরোধী আখ্যা দিয়ে স্ট্যান্ডরিলিজ এবং ওএসডি করা হয়। পর দিন সকাল থেকে পবিসের কর্মকর্তাদের গ্রেফতার এবং আরো ১৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করা এবং যৌথ বাহিনী দ্বারা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেধড়ক মারধর ও ধর পাকড় করা হয়। যার প্রেক্ষিতে পবিসের কর্মীরা আতঙ্কিত এবং কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মতো ঘটনা ঘটে। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য যা ছিলো আরইবির পূর্ব পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। পরবর্তীতে উক্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ এবং অন্তবর্তী সরকারের গঠিত কমিটির উপর আস্থা রেখে পবিসের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সকল ধরনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়। 
কর্মকর্তা কর্মচারীরা জানান, প্রায় ০৩ মাস কারাভোগের পর বর্তমানে আমরা জামিনে মুক্ত আছি। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এতোবড় ট্রাজেডি ঘটানোর পরও আরইবি থেমে নেই। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাময়িক বরখাস্ত, স্ট্যান্ডরিলিজ, ওএসডি এবং নিজ জেলা থেকে গড়ে ৫০০-৬০০ কিলোমিটার দূরে হয়রানীমূলক বদলিসহ নানান শাস্তিমূলক ব্যবস্থা চলমান রেখেছে। যা পরিস্থিতিকে আরো বিশৃঙ্খল করে তুলছে। 

গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে এক মাসে প্রায় ৫ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শাস্তি মূলক বদলি করা হয়েছে। এছাড়া চুক্তি ভিত্তিক কর্মচারীদের মধ্যে লাইনক্রু লেভেল-১ এবং বিলিং সহকারীদের চাকরি নিয়মিত করা হলেও মিটার রিডার কাম মেসেঞ্জার এবং লাইন শ্রমিকদের চাকরি নিয়মিত করা হয়নি। মিটার রিডার গণ যদি চুক্তি ভিত্তিতে ৩৬ বছর চাকরি করতে পারে তাহলে তাদের নিয়মিত না করা অযৌক্তিক। বেতন-ভাতা বৃদ্ধি না করেও বিদ্যমান কাঠামোতে তাদের চাকরি নিয়মিত করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া লাইন ম্যানের বিকল্প হিসেবে একই কাজ করা সত্ত্বেও লাইন শ্রমিকদের চাকরি নিয়মিত করা হয়নি। কিছু সংখ্যক নিয়মিত করায় বঞ্চিতদের মধ্যে চরম অসন্তুষ্টি বিরাজ করছে। সর্বশেষ গতকাল সোমবারও পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একজন বিলিং সহকারীকে ফেসবুক পোস্ট/লাইক/কমেন্টের কারণে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। একটা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে কি পরিমাণ কর্মী নিপীড়ন হতে পারে তার দৃষ্টান্ত দেখিয়ে যাচ্ছে পল্লী বিদ্যুতায়নবোর্ড।

কর্মকর্তা কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, আরইবি-পবিস সংকটকালীন সময়ে চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন মেজর জেনারেল জিয়া-উল আযিম। তার অনুরোধ এবং বিদ্যমান সমস্যা দায়িত্ব নিয়ে সমাধানের আশ্বাসে ২৭ আগস্ট তারিখে পবিসের পূর্ব ঘোষিত গণছুটিসহ সকল কর্মসূচী প্রত্যাহার করা হলেও পরবর্তীতে নিরপেক্ষ ভাবে সমস্যা সমাধানে আন্তরিক না হয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের দমন পীড়নের নায়ক হিসেবে তিনি তার ক্ষমতার সর্বোচ্চ অপব্যবহারের নজির স্থাপন করেছেন। পবিসের কর্মীদের বাক স্বাধীনতা পর্যন্ত তিনি কেড়ে নিয়েছেন। পবিসে বিভিন্ন মতবিনিময় সভায় যে সকল কর্মী সংস্কার এবং নির্যাতিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে কথা বলেছেন তাদের প্রত্যেককে দূরবর্তী স্থানে বদলি করেছেন। গত ২১ জানুয়ারি ভোলা পবিসে আরইবি চেয়ারম্যান মতবিনিময় সভায় মিটার রিডার কাম মেসেঞ্জারদের নিয়মিতকরণ সংক্রান্ত দাবির কথা বলাকে কেন্দ্র করে ফেসবুক কমেন্ট, শেয়ারের কারণ দেখিয়ে ২ জন এবং পটুয়াখালী পবিসের ০১ জন মিটার রিডার কাম মেসেঞ্জারকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করেছেন। অথচ জাতীয় মিডিয়ায় আরইবি'র দুর্নীতির বিষয়ে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা হলেও, আরইবি'র সহকারী পরিচালক সমিতির ডিজিএমকে গালিগালাজ করলেও তিনি আরইবি'র কারো বিরুদ্ধে অদ্যাবধি কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি। এছাড়া সংস্কারের জন্য জাতীয় কমিটি কাজকরা সত্ত্বেও আরইবি কমিটির রিপোর্টের তোয়াক্কা না করে একই কাজের জন্য নিজস্ব কমিটি গঠন করে জাতীয় কমিটির কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।  প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে নিজে সমস্যার সুষ্ঠুসমাধানের উদ্যোগ না নিয়ে আরইবির চেয়ারম্যান ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অপপ্রয়োগের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর সুনামক্ষুণ্ণ, পল্লীবিদ্যুৎ খাতকে পুনরায় অস্থিতিশীলকরা এবং সরকারের পল্লীবিদ্যুৎ সিস্টেমের সংস্কার কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে মর্মে প্রতীয়মান হচ্ছে। সরকারের সাথে ইতিপূর্বে বর্ণিত সমস্যা সমূহের বিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে একাধিকবার আলোচনার চেষ্টা করা হলেও কোন ধরনের আন্তরিকতা পরিলক্ষিত হয়নি। 

বিদ্যমান সংকট সমাধানে সাড়ে ০৩ মাস পূর্বে জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে, নিরপেক্ষ এবং টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে অবিলম্বে উক্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য অনুরোধ করছি। 
সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে সরকারের নিকট ৫ দফা দাবি জানান কর্মকর্তা কর্মচারীরা। সেগুলো হলো,
১। মামলা প্রত্যাহারপূর্বক সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা। 
২। দ্বৈতনীতি পরিহারপূর্বক আরইবি-পবিস একীভূতকরণ অথবা অন্যান্য বিতরণ সংস্থার ন্যায় পুনর্গঠন করা। 
৩। অবশিষ্ট চুক্তিভিত্তিক/অনিয়মিতদের চাকরি নিয়মিতকরণ করা।
৪ আরইবি কর্তৃক পবিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দমন পীড়ন, হয়রানী ও উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করা।
৫। বিগত সময়ে আরইবি'র দুর্নীতিবাজদের শাস্তির জন্য নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করা।

সালাম জাভেদ বলেন,পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা সার্বক্ষনিক গ্রাহক সেবায় বদ্ধপরিকর। কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা কিংবা গ্রাহকসেবা বিঘ্নিত হোক এমন কোন পরিস্থিতি কোন ভাবেই কাম্যনয়। আমরা আন্তরিকভাবে প্রত্যাশা করি, রাষ্ট্র তথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

তৌহিদ

×