ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১

বুধবার আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু

প্রকাশিত: ২০:১৪, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ২০:১৬, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বুধবার আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব

ছবি: সংগৃহীত

তাবলীগ জামাতের শুরায়ী নেজামের (জুবায়ের পন্থী) দ্বিতীয় ধাপের আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। বুধবার বেলা ১২ টার মধ্যে আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে বলে ইজতেমার মুরুব্বীদের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান। আখেরি মোনাজাতের দিন টঙ্গী হয়ে চলাচলকারী গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রাখা হবে।

এছাড়াও, বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের দিন টঙ্গী হয়ে চলাচলকারী সকল সড়ক মহাসড়কে গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রাখা হবে। এবার থাকছে না অন্য বছরগুলোর মতো আগের রাত থেকে আখেরী মোনাজাতের দিন পর্যন্ত সড়ক মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ। মঙ্গলবার বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে জিএমপি’র নিয়ন্ত্রণ কক্ষে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।

এ ধাপে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার অন্যতম আকর্ষণ—যৌতুকবিহীন বিয়ে। দু'ধাপে শুরায়ী নেজামের (জুবায়ের পন্থী) তাবলীগ অনুসারীদের প্রথম পর্বের ইজতেমা শেষ হওয়ার পর ৮ দিনের বিরতি দিয়ে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বিতীয় পর্বে মাওলানা সা’দপন্থিদের তিন দিনের ইজতেমা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। ১৬ ফেব্রুয়ারি ওই পর্বের আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা।

এবারের ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় ধাপের দ্বিতীয় দিন বুধবার আল্লাহ প্রদত্ত বিধি-বিধান ও রাসুল (সঃ) প্রদর্শিত তরিকা অনুযায়ী জীবন গড়ার আহ্বান জানিয়ে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি জিকির আসকার, ইবাদত বন্দেগী আর ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে পবিত্র কোরআনের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ বয়ানের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করেছেন। মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের ব্যাকুলতায় দ্বীনের দাওয়াতে মেহনত করার জন্য ইসলামের মর্মবাণী সর্বত্র পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা দলে দলে ছুটে আসছেন টঙ্গীর তুরাগ তীর ইজতেমা ময়দানে। মঙ্গলবারেও টঙ্গী অভিমুখী বাস, ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহনে ছিল মানুষের ভিড়। রবিবার আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মানুষের এ ঢল অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দান পূর্ণ হয়ে গেছে। মূল প্যান্ডেলে স্থান না পেয়ে অনেকে নিজ উদ্যোগে প্যান্ডেলের বাইরে পলিথিন সিট ও কাপড়ের সামিয়ানা টানিয়ে তাতেই অবস্থান নিয়েছেন।

দ্বিতীয় দিন (বুধবার) যারা বয়ান করলেন:
ইজতেমায় জোবায়ের অনুসারীদের মিডিয়া সমন্বয়কারীর দায়িত্বে থাকা মোঃ হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় ধাপের দ্বিতীয় দিন বুধবার মুসুল্লীদের উদ্দেশ্যে বাদ ফজর বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা উবাইদুল্লাহ খুরশিদ। তার বয়ানের তরজমা করছেন বাংলাদেশের মাওলানা জাকারিয়া। পরে তালিমের মোজাকারা করেন ভারতের মাওলানা জামাল। এরপর খিত্তায় খিত্তায় তালিম অনুষ্ঠিত হয়। তা চলে জোহরের পূর্ব পর্যন্ত। ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা বয়ানের মিম্বারের সামনে ওলামায়ে কেরামের সাথে কথা বলেন। এ সময় পাকিস্তানের মাওলানা ফরীদ নামাযের মিম্বারের সামনে মাদ্রাসার ত্বলাবাদের সাথে কথা বলেন। এরপর বাদ জোহর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইসমাঈল গোদারা। বাদ আছর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা জুহাইরুল হাছান। বয়ান শেষে তিনি যৌতুক বিহীন বিয়ে পড়ান। দিনের শেষে বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা। তার বয়ানের তরজমা করেন মাওলানা জুবায়ের।

বয়ানের তাৎক্ষণিক অনুবাদ:
বিশ্ব ইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তাবলিগ মারকাজের ১৫-২০ জন শুরা সদস্য ও বুজর্গ বয়ান পেশ করেন। মূল বয়ান উর্দূতে হলেও বাংলা, ইংরেজী, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসি ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদ হচ্ছে। বিভিন্ন ভাষাভাষি মুসল্লিরা আলাদা আলাদা বসেন এবং তাদের মধ্যে একজন করে মুরুব্বী মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শুনান। মূল বক্তা বয়ানের একটি নির্দিষ্ট অংশ শেষ করার পর অনুবাদের জন্য বিরতি দেন। অনুবাদ শেষ হলে তিনি আবার বয়ান শুরু করে। এভাবেই ইজতেমা ময়দানে তাবলীগ জামাতের মুরব্বীদের বয়ান চলে।

অনুষ্ঠিত হলো যৌতুকবিহীন বিয়ে:
বিশ্ব ইজতেমার অন্যতম আকর্ষণ যৌতুক বিহীন বিয়ে। সম্পূর্ণ শরীয়ত মেনে তাবলিগের রেওয়াজ অনুযায়ী ইজতেমার দ্বিতীয় দিন (বুধবার) বাদ আছর ইজতেমার বয়ান মঞ্চের পাশেই বসে যৌতুকবিহীন বিয়ের আসর বসে। এ আসরে ২৩টি বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। ভারতের মাওলানা জুহাইরুল হাসান এসব বিয়ে পড়ান। তাবলিগের রেওয়াজ অনুযায়ী ইজতেমার দ্বিতীয় দিন বাদ আছর বয়ান মঞ্চের পাশে বসে যৌতুকবিহীন বিয়ের আসর। কনের সম্মতিতে ও তার অনুপস্থিতিতে বর এবং কণে পক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় ওই বিয়ে। বিয়েতে মোহরানা ধার্য করা হয় ‘মোহর ফাতেমী’র নিয়মানুযায়ী। এ নিয়ম অনুযায়ী মোহরানার পরিমাণ ধরা হয় দেড়শ’ তোলা রুপা বা উহার সমমূল্য অর্থ। বিয়ের পর নব-দম্পতিদের সুখ-সমৃদ্ধিময় জীবন কামনা করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়া করে মোনাজাত করা হয়। এসময় মঞ্চের আশপাশের মুসল্লিদের মাঝে খোরমা খেজুর ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়। তাবলীগ জামাতের শুরায়ী নেজামের (জুবায়ের পন্থী) ব্যবস্থাপনায় প্রথম পর্বেও দু’ধাপে মোট ৮৬টি বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মিডিয়া সমন্বয়কারীর দায়িত্বে থাকা মোঃ হাবিবুল্লাহ রায়হান।

তাশকিলের কামরায় চিল্লাভুক্ত মুসুল্লী:
ইজতেমার প্যান্ডেলের উত্তর-পশ্চিমে তাশকিলের কামরা স্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন খিত্তা থেকে বিভিন্ন মেয়াদে চিল্লায় অংশগ্রহণেচ্ছু মুসুল্লীদের এ কামরায় আনা হচ্ছে এবং তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। পরে কাকরাইলের মসজিদের তাবলিগি মুরুব্বীদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এলাকা ভাগ করে তাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাবলিগি কাজে পাঠানো হবে।
মিডিয়া সমন্বয়কারীর দায়িত্বে থাকা মোঃ হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, এ পর্বের প্রথম ধাপে মোট ১ হাজার ৪৬৫টি জামাত গঠন হয়। এর মধ্যে দেশী জামাতের সংখ্যা ১২৭১টি, আরব উর্দু ও ইংলিশ সহ মোট বিদেশী জামাতের সংখ্যা ৯৭টি।

৯ মুসল্লীর মৃত্যু:
শুরায়ে নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে এসে তাবলীগ জামাতের আরো এক মুসল্লী ইন্তেকাল করেছেন। তার নাম আমির হোসেন (৬৫)। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার মোকসেদপুরে। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বাদ ফজর ইজতেমা ময়দানে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার গভীর রাতে ৩১ নম্বর খিত্তায় তিনি মারা যান। এর মধ্যে শুরায়ে নেজামের দুধাপের বিশ্ব ইজতেমায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৯ জনে। তারা সবাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এবং বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন।

এর আগে ইজতেমায় যোগ দেয়া যে ৮ মুসল্লী মৃত্যুবরণ করেছেন তারা হলেন, নরসিংদীর মাধবদীর রংপুর গ্রামের ইমাম উদ্দিনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৪৮), ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া থানার মসজিদপাড় গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে ওয়াহিদ (৫০), ভোলার চরফ্যাশনের হাজী আব্দুল গফুর (৭৫), হবিগঞ্জ জেলা সদরের রমিজ উদ্দিন (৫৫), একই জেলার বাহুবল থানার ইয়াকুব আলী (৬০), খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার আব্দুল কুদ্দুস গাজী (৬০), ঠাকুরগাঁও জেলার আমিরুল ইসলাম (৪৬) ও শেরপুর জেলার শ্রীবরদী থানার সাবেদ আলী (৭০)।

জিএমপি কমিশনারের আহবান:
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান আহ্বান জানিয়ে বলেন, ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপে আখেরি মোনাজাতের আগের মধ্যরাত থেকে গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়। তবে এ ধাপে আখেরী মোনাজাতে আমরা গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করব।
আমি মুসল্লীদের বলব, আপনারা অনুগ্রহ করে মোনাজাতের সময় রাস্তায় বসবেন না। ইজতেমা মাঠে অনেক খালি জায়গা থাকে, আপনারা একটু সময় নিয়ে মাঠে এসে মোনাজাতে অংশ নিলে রাস্তায় যানজট কম হবে। এ সময় তিনি এবারের ইজতেমায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজকদের সন্তুষ্টি প্রকাশের কথা জানান।
বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের জিএমপি’র নিয়ন্ত্রণ কক্ষে আয়োজিত ওই ব্রিফিংয়ের সময় শুরায়ে নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হানসহ বিভিন্ন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

রেজা

×