ছবি: সংগৃহীত
প্রতিবছরের মতো এবারও ইংরেজি মাধ্যম এবং ইংরেজি ভার্সন স্কুলগুলোর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে মহা আড়ম্বরের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তঃস্কুল বাংলা অলিম্পিয়াড।সারা দেশের শতাধিক স্কুলের দেড় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী এবারের আন্তঃস্কুল বাংলা অলিম্পিয়াডের চতুর্দশ আসরে অংশগ্রহণ করবে।
এ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার দুপুর ২টায় ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল মিলনায়তনে একটি সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশের প্রিন্সিপাল রোকসানা জারিন, বাংলা অলিম্পিয়াডের সমন্বয়ক জনাব কামরুল আহসান, স্কুলের শিক্ষক-ইমাম হোসেন, জনাব আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ, আবুল কালাম আজাদ, আবুল কাশেম, মোঃ মিজানুর রহমান প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি, শনিবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর উত্তরায় ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল প্রাঙ্গণে চতুর্দশ আন্তঃস্কুল বাংলা অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হবে।
ভাষার মাসে, দেশের ইংরেজি মাধ্যম এবং ইংরেজি ভার্সন স্কুলগুলোর অংশগ্রহণে বাংলা ভাষা বিষয়ক সর্ববৃহৎ প্রতিযোগিতা ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ আয়োজিত এই বাংলা অলিম্পিয়াড। বার্ষিক এই প্রতিযোগিতা ১৪ বছর ধরে সাফল্যের সঙ্গে আয়োজিত হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২২ ফেব্রুয়ারি, শনিবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে প্রতিযোগীরা রচনা লেখা, আবৃত্তি, নাচ, গান, অঙ্কন, কুইজ এবং উপস্থিত বক্তৃতা বিষয়ে বয়সভেদে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে।
এ বছরও অন্যান্য বারের মতো, এ প্রতিযোগিতার উপদেষ্টা ও বিচারক হিসেবে রয়েছেন দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক এবং শিল্পী-বৃন্দ। বাংলা অলিম্পিয়াডের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে সম্মতি জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক, বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মোহাম্মদ আজম।
উল্লেখ্য, ১ ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে বাংলা অলিম্পিয়াডের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্কুলগুলো অনলাইনে Banglaolympiad.org ওয়েবসাইট থেকে তাদের শিক্ষার্থীদের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে। রচনা, আবৃত্তি, সঙ্গীত, চিত্রাঙ্কন, তাৎক্ষণিক বক্তৃতা, নৃত্য এবং বাংলা কুইজ—এই ৭টি বিভাগে কয়েকটি ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর প্রত্যেক শিক্ষার্থী একটি রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে দুটি ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতার সুযোগ পাবে।
স্কুল বাংলাদেশের প্রিন্সিপাল রোকসানা জারিন বলেন, “প্রতি বছরের ধারাবাহিকতায় এ বছরও বাংলা ভাষা চর্চার এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পেরে ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ আনন্দিত এবং গর্বিত। আমরা মনে করি, এক যুগের বেশি সময় ধরে এত বড় একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আমাদের স্কুল বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এরই মধ্যে বাংলা অলিম্পিয়াড ইংরেজি স্কুলগুলোর জন্য একটি জাতীয় প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়েছে। শুধু জাতীয় নয়, আমি বলব, বাংলা অলিম্পিয়াড ছড়িয়ে পড়ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। প্রতি বছরই দেশি শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুলের বিদেশি শিক্ষার্থীরাও বাংলা অলিম্পিয়াডে যোগ দিচ্ছে। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশের ইংরেজি মাধ্যম ও ইংরেজি ভার্সন স্কুলগুলো ভাষার মাসে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছে। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিচর্চায় ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরাও এখন অনেক অগ্রসর, বাংলা অলিম্পিয়াড এটাই প্রমাণ করে।”
বাংলা অলিম্পিয়াডের সমন্বয়ক কামরুল আহসান বলেন, “ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে বাংলা অলিম্পিয়াড দেশের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান। গত এক যুগের বেশি সময় ধরে আয়োজিত বাংলা অলিম্পিয়াড দেশের ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের জীবন ও দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিয়েছে। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি তাদের যে ভীতি ও বিতৃষ্ণা ছিল, সেটা বাংলা অলিম্পিয়াডের মাধ্যমে অনেকটাই কেটে গেছে। এখন দেশের বড় বড় স্কুলগুলো সারা বছর আমাদের বাংলা অলিম্পিয়াডের জন্য অপেক্ষায় থাকে। বাংলা অলিম্পিয়াডে পুরস্কৃত হওয়া ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতে বিরাট সম্মানের একটি অর্জন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলা অলিম্পিয়াডে পুরস্কৃত শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিজীবনেও বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে নিজেদের সংযুক্তি বাড়াচ্ছে। অনেকে গান, আবৃত্তি, সঙ্গীতসহ বাংলা সংস্কৃতির নানা অনুষঙ্গে অত্যন্ত দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছে।
“আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে অনেকেই বড় হয়ে বড় লেখক হবেন, বড় শিল্পী হবেন এবং দেশ-বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবেন। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের শিল্প অঙ্গনে বাংলা অলিম্পিয়াড উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে আমরা বিশ্বাসী। এবার শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ আগের চেয়ে সংখ্যায় বেশি এবং স্বতঃস্ফূর্ত,” তিনি বলেন।
প্রসঙ্গত, ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালে।
রেজা