ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ মাঘ ১৪৩১

বিব্রত পর্যটকরা

অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সৌন্দর্য হারাচ্ছে কক্সবাজার

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার

প্রকাশিত: ০০:৫১, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সৌন্দর্য হারাচ্ছে কক্সবাজার

কক্সবাজারে এভাবেই যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা

যত্রতত্র আবর্জনা ও সড়কের পাশে ময়লা এবং সৈকতের ঝাউবনে জমে থাকা বর্জ্য অসহনীয় হয়ে উঠেছে পর্যটকদের জন্য। অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে সৌন্দর্য হারাচ্ছে কক্সবাজার। 
জলরাশির ঢেউ গর্জন করে আছড়ে পড়ছে সাগরতীরে। সেই তীরের বালুচরে ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা। পানিতে ভাসছে বোতল, চায়ের কাপ, চিপসের প্যাকেট ও পলিথিন। বালুচরে হাঁটতে গিয়ে ভ্রমণে আসা পর্যটকরা বলেন, পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে এসেছি। সকালে সৈকতের বালিয়াড়ি পাড় ধরে হাঁটার সময় দেখি প্লাস্টিকের বোতল, চিপসের প্যাকেট, চায়ের কাপসহ নানা বর্জ্য পড়ে রয়েছে, যা খুবই বিব্রতকর।

পর্যটন সেবীদের দাবি- বর্জ্য অপসারণে অবহেলা এবং নির্দিষ্ট স্থানের অভাব শহরের পরিবেশ এবং পর্যটন শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। 
সচেতনতার কথা বলে বালিয়াড়িতে প্লাস্টিকের রোবট দানব করা হয়েছে। কিন্তু তা কোনো কাজে আসছে না। পর্যটকদের নিরাপত্তার পাশাপাশি প্রতিদিনই ময়লা কুড়িয়ে ডাস্টবিনে ফেলেন লাইফগার্ড কর্মী মোহাম্মদ শুক্কুর। তিনি বলেন, বালুচরে প্রতিদিনই প্রচুর ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়। মূলত পর্যটকরাই বালিয়াড়িতে এসে এসব বর্জ্য ফেলছেন প্রতিদিন। তাদের বলেও কাজ হচ্ছে না। 
সরেজমিন সুগন্ধা পয়েন্টে দেখা গেল ভয়াবহ চিত্র। যেখানে বালিয়াড়ির সাগরলতায় ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা। সেই আবর্জনা খাচ্ছে গবাদি পশু। আর বালিয়াড়িতে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিকের বর্জ্য। এতে ধ্বংস হচ্ছে সাগরলতাও। 
খুলনা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক আমির বলেন, যেখানেই হাঁটছি সেখানেই শুধু ময়লা-আবর্জনা। রাস্তার পাশে, বালিয়াড়ির সাগরলতায়, ঝাউ বাগান ও সাগরতীরে, সবখানে আবর্জনা। এসব দেখে একজন পর্যটক হিসেবে অস্বস্তিবোধ করছি। তিনি বলেন, হতাশ হলাম। এত টাকা খরচ করে কোথায় আসলাম, বুঝতে পারছি না। আরেক পর্যটক সৈয়দ আমিন বলেন, ঝাউ বাগানের ভেতরে ময়লার যে স্তূপ তা দেখে মনে হয়, বাগানের ভেতরে পিকনিক করে খাবারের প্যাকেটগুলো ফেলে রাখা হয়েছে। এসব ঠিক না।

নারী পর্যটক শিরিন চৌধুরী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এটা সারাদিন ধরে কেউ পরিষ্কার করবে না। আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে এবং এখানে যারা ব্যবসা করছেন তাদেরও এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা করা উচিত। পর্যটন সেবীদের দাবি, কক্সবাজারের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অপরিকল্পিত, রয়েছে সমন্বয়হীনতাও। 
তারকা মানের হোটেল কক্স-টুডের ব্যবস্থাপক আবু তালেব শাহ বলেন, কক্সবাজার হচ্ছে পর্যটকদের রাজধানী। বরাবরের মতোই আমরা আশা করি, ক্লিন এবং গ্রীন সিটি হবে এই এলাকা। কিন্তু এখানে সেটা দেখা যাচ্ছে না। যার কারণে কক্সবাজারের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। একটা সমন্বয়হীনতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। 
কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ ইকবাল বলেন, প্রশাসনের বিভিন্ন সভায় এসব বিষয় উত্থাপন করা হয়। সৈকত এলাকা এবং হোটেল-মোটেল জোনের সড়ক থেকে দ্রুত ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করা হয় এবং ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু বলার পরও কার্যকর কিছু হচ্ছে না। তবে প্রশাসন জানিয়েছে, স্থায়ী সমাধানের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনার প্রয়োজন। 
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান হোসাইন সজীব বলেন, পৌরসভার সঙ্গে সমন্বয় করে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলমান রয়েছে। পর্যটননগরী কক্সবাজারে রয়েছে ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস। রেস্তোরাঁও রয়েছে চারশ’র বেশি। এসব কিছুর ময়লাও যাচ্ছে সাগর বক্ষে। বিভিন্ন সেক্টরের সঙ্গে বসে সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হবে। 

×