ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ মাঘ ১৪৩১

শতকোটি টাকা আয়ের আশা

গদখালী-পানিসারা মাঠে সৌরভ ছড়াচ্ছে বিভিন্ন জাতের ফুল

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস

প্রকাশিত: ০০:৪৯, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গদখালী-পানিসারা মাঠে সৌরভ ছড়াচ্ছে বিভিন্ন জাতের ফুল

যশোরের গদখালীতে জারবেরা ফুল খেত

ফেব্রুয়ারিতে বসন্ত, বিশ্ব ভালোবাসা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে ফুল চাষে সরব হয়ে উঠেছে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীর ফুলের মাঠ। আর মাত্র কয়েকদিন। এই তিন দিবসে শত কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা করছেন স্থানীয় চাষিরা।
ফুলের রাজধানী হিসেবে খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, পানিসারা ও আশপাশের এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গাঁদা, লিলিয়াম, জিপসি ও চন্দ্রমল্লিকাসহ নানান ধরনের ফুল। গত মৌসুমে অতিবৃষ্টিতে ফুলের উৎপাদন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আসন্ন তিন বিশেষ দিবস ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন ফুল চাষিরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন রঙের ফুলে মাঠ যেন হাসছে। চাষিরা দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ফুলের পরিচর্যায়। উৎসব পর্যন্ত ফুল ধরে রাখতে এবং পোকামাকড় ও পচন রোধে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন পদক্ষেপ।
ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামের চাষি ইসমাইল হোসেন বলেন, তিন দিবসকে সামনে রেখে প্রস্তুতি বেশ ভালো। বৃষ্টির কারণে কিছুটা ক্ষতি হলেও এবার ফুলের ভালো দাম পাব বলে আশা করছি। একই এলাকার আরেক ফুলচাষি আজিজুর রহমান বলেন, আমরা মূলত উৎসবকেন্দ্রিক ফুলের চাষ করি।

বসন্ত দিবস, ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় বাজার। এ বছর ফুল উৎপাদনে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি, ৮ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারব। 
গদখালী এলাকার চাষি মঞ্জুর হোসেন বলেন, জমিতে এবার জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপ ও লিলিয়াম চাষ করেছি। সবক্ষেত ফুলে ভরা। প্রতি পিস জারবেরা পাইকারি সাত থেকে আট টাকা এবং গোলাপ তিন টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সামনে এসব ফুলের দাম তিন গুণ হয়ে যাবে বলে আশা করছি। এ বছর পাঁচ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। 
আলমগীর হোসেন নামে আরেক চাষি বলেন, উৎসবের বাজার ধরতে গোলাপগুলোতে ক্যাপ পরিয়ে রাখা হচ্ছে। এছাড়া, বিভিন্ন ধরনের ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে যাতে ফুল নষ্ট না হয়। এই বিক্রির ওপর সারাবছরের লাভ-লোকসানের হিসাব নির্ভর করবে। আশা করছি লাভবান হতে পারব।

সৈয়দপাড়ার ফুল চাষি শাহজাহান কবীর বলেন, পাঁচ বিঘা জমিতে গাঁদা ও দুই বিঘায় রজনীগন্ধা চাষ করেছি। ভালোবাসা দিবসে রজনীগন্ধা ও ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসে গাঁদা ফুল বিক্রি করব। ফুল ধরে রাখতে এবং পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে ভিটামিন ও কীটনাশক ব্যবহার করছি। আশা করছি, এক একটি গোলাপের পাইকারি দাম ২৫-৩০ টাকা করে পাব।
গদখালী ফুল চাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে দেরিতে চাষাবাদ হলেও ব্যাপক ফুলের উৎপাদন হয়েছে। সামনে তিনটি উৎসব ঘিরে ফুল সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফুলের দাম বাড়তে শুরু করেছে, তা আরও বাড়বে। অন্তত শত কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আমরা আশাবাদী।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, যশোরে প্রায় ৬শ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়। এ ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লক্ষাধিক মানুষ জড়িত। বসন্ত, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আশানুরূপ ফুল বিক্রি হলে চাষিদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

×