ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ মাঘ ১৪৩১

ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন অধরা

ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবিতে মাদারীপুরের ১০ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবিতে মাদারীপুরের ১০ জনের মৃত্যু

অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি

অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে নিহত ২৩ জনের মধ্যে ১০ জনের পরিচয় জানা গেছে। তাদের বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায়। মামা-ভাগ্নেসহ নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। এ ঘটনায় জড়িত দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। 
পুলিশ বলছে, এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর নিহতদের লাশ দেশে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতে ওই ১০ যুবক ইতালি পাড়ি জমাচ্ছিলেন। 
স্বজনরা জানান, দালালদের খপ্পরে পড়ে গত ১ জানুয়ারি ইতালির উদ্দেশে বাড়ি ছাড়ে মাদারীপুরের রাজৈর পৌরসভার পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের চা বিক্রেতা হাসান হাওলাদারের ছেলে টিটু হাওলাদার। তার সঙ্গে মামা আবুল বাশার আকনও ছিলেন। গত ২৪ জানুয়ারি লিবিয়া থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যাত্রা করেন তারা। সোমবার সকালে মৃত্যুর খবর আসলে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহতদের বয়স ২০-৩০ বছরের মধ্যে। 
এ ঘটনায় রাজৈর উপজেলার ১০ জনসহ ২৩ জনের লাশ উদ্ধার করেছে লিবিয়ার কোস্ট গার্ড। ভিটামাটি বিক্রি করার পাশাপাশি চড়া সুদে টাকা এনে দালালদের হাতে লাখ লাখ টাকা তুলে দিলেও শেষরক্ষা হয়নি ওই যুবকদের। ঘটনার মূল হোতা রাজৈর হরিদাসদি গ্রামের স্বপন মাতুব্বর, মজুমদারকান্দি গ্রামের মনির হাওলাদার ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলীপুরের রফিক দালাল। ঘটনায় জড়িত দালালদের কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। পাশাপাশি নিহতের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা। 
এদিকে, দালালদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ^াস দিয়েছে পুলিশ। নিহতদের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে দূতাবাসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
থানা পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে পাওয়া নিহতরা হলোÑ রাজৈর উপজেলার পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের চা বিক্রেতা হাসান হাওলাদারের ছেলে টিটু হাওলাদার, গোবিন্দপুরের বাসিন্দা আক্কাস আলী আকনের ছেলে আবুল বাশার আকন, সুন্দিকুড়ি গ্রামের নীল রতন বাড়ৈ, সাগর বাড়ৈ, একই গ্রামের মহেন্দ্র নাথ বিশ^াসের ছেলে সাগর বিশ^াস, গোবিন্দপুরের ফিরোজ শেখের ছেলে ইনসান শেখ ও আশিষ কীর্তনীয়া, বৌলগ্রামের নৃপেন কীর্ত্তনীয়ার ছেলে অমল কীর্ত্তনীয়া, একই গ্রামের চিত্ত সরদারের ছেলে অনুপ সরদার, শাখারপাড় গ্রামের সজিব মোল্লা, সাতবাড়িয়ার রাজীব। 
নিহত আবুল বাশারের বাবা আক্কাস আলী আকন বলেন, মনির হাওলাদার ও স্বপন মজুমদার এই দুই দালাল ২৮ লাখ নিয়েছে আমার ছেলেকে ইতালি পাঠানোর কথা বলে। কিন্তু আমার ছেলের এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। এই দালালদের কঠোর বিচার চাই।
টিটু হাওলদারের চাচাত ভাই রেজাউল হাওলাদার বলেন, দালালরা লোভ দেখাইয়া আমার ভাইকে এভাবে মৃত্যুর মুখে ফেলে দিবে কখনই তা ভাবতে পারিনি। তাদের কঠিন বিচার চাই। ভাইয়ের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।
মাদারীপুরের রাজৈর থানার ওসি মো. মাসুদ খান বলেন, ইতালি যাওয়ার সময় লিবিয়ায় রাজৈর উপজেলার ১০ যুবক মারা গেছে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। নিহতদের পরিবার থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহ্ মো. সজীব বলেন, নিহত ১০ জনের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। দূতাবাসের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।

×