ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ মাঘ ১৪৩১

৬ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল শুরু

কর্মসূচি প্রত্যাহার তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫১, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ০১:২৬, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কর্মসূচি প্রত্যাহার তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের

স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে রেলপথ অবরোধ করেন

সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে দিনভর পালন করা দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় করার ব্যাপারে সরকার পদক্ষেপ নেবে এই আশ্বাসে রাত ১০টায় শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. নুরুজ্জামান, কলেজের অধ্যক্ষা অধ্যাপক ড. শিপ্রা রানীর উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। এ সময় অধ্যক্ষ জুস পান করিয়ে তাদের অনশন ভাঙান।
এদিকে তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে ঢাকার মহাখালীতে রেলপথ অবরোধ করে রাখার ছয় ঘণ্টা পর রাজধানী থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন সোমবার রাতে বলেন, ছাত্ররা অবরোধ তুলে নেওয়ার পর আমরা ট্রেন চালানো শুরু করেছি। 
এর আগে তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা সোমবার সকাল থেকে সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে। তারা গুলশান থেকে মহাখালী ও মহাখালী থেকে গুলশান যাওয়ার সড়কে বাঁশ ফেলে অবরোধ শুরু করেন। ফলে রাস্তার দুই লেনে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আমতলী মোড়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কও অবরোধ করেন। বিকেলে গুলশান-১ গোলচত্বর ও মহাখালী রেলক্রসিংয়েও অবরোধ করেন।

এতে ওই রুট দিয়ে উত্তরাঞ্চলের সব ট্রেন ও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে একদিকে যেমন ওই এলাকাসহ রাজধানীতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়, অন্যদিকে ট্রেন ও দূরপাল্লার যাত্রীদের ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে যাত্রীদের। 
অসংখ্য পুলিশ, ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন ও পুলিশের জলকামান প্রস্তুত রেখেও শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরানো সম্ভব হয়নি। এতে দিনভর চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে নগরবাসীকে। অফিস ছুটি হওয়ার পর ভোগান্তির মাত্রা আরও বাড়তে থাকে। শিক্ষার্থীদের এমন কর্মকা- লোকজনকে অতিষ্ঠ করে ফেলছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

তবে আন্দোলন না করে শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। তা সত্ত্বেও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (রাত ৮টা) সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা।  
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে টানা আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। তারা রেলপথ ও মহাসড়কে সর্বাত্মক অবরোধ এবং কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে সোমবার সকাল থেকে কলেজের প্রধান ফটকে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। 
দুপুর ১২টার দিকে তারা জানান, উপস্থিতি বাড়লে সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করবেন। দুপুর পৌনে ১টার দিকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। প্রথমে তারা গুলশান থেকে মহাখালী ও মহাখালী থেকে গুলশান যাওয়ার সড়কে বাঁশ ফেলে অবরোধ শুরু করেন। এতে রাস্তার দুই লেনে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের।
বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে তারা মহাখালী রেল ক্রসিং অবরোধ করেন। এসময় কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেস আটকে দেন। তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত রেলকর্মীরা লাল পতাকা দেখিয়ে রেললাইন ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যান।

পরে ট্রেনের চালক লাল পতাকা দেখে ধীরে ধীরে ট্রেনের গতি থামিয়ে মহাখালী রেলগেটের কাছাকাছি এসে ট্রেনটি থামাতে সক্ষম হন। বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল। সেখানে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন তারা। পরে ট্রেনটি মহাখালী থেকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বিকেল পৌনে ৫টার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, রেল লাইনের উপর বসে আছেন ২০-৩০ জন শিক্ষার্থী। এর পাশে দাঁড়িয়ে আছেন আরও শতাধিক শিক্ষার্থী। 
আর শিক্ষার্থীদের চারপাশ ঘিরে পুলিশ, ডিবি, বিজিবি এবং এবিবিএন সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। এর পেছনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে জল কামান। তবে বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি। শিক্ষার্থীদের অবরোধের ফলে মহাখালী থেকে জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গাড়ি ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে একই স্থানে।

যাত্রীরা হাসফাঁস করতে থাকেন। কেউ কেউ বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু জনযটে সেটিও সম্ভব হচ্ছিল না। একই অবস্থা দেখা যায় বনানী, মহাখালী, গুলশান এলাকায়। তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় হাতিরঝিলে। 
এদিকে ফ্লাইওভার ব্যবহার করে কিছু যানবাহন চলাচল করলেও ভোগান্তিতে পড়েছেন এই রুটে চলাচলকারী অধিকাংশ মানুষ। এতে সাধারণ মানুষকে হেঁটে আন্দোলনরত স্থান পাড়ি দিতে দেখা গেছে। একই সঙ্গে শ্যামলী, ফার্মগেটের দিক থেকে আসা গাড়ি মহাখালী রেলক্রসিংয়ের আগ থেকে ইউটার্ন নিতে দেখা গেছে। ফলে সাধারণ মানুষ দীর্ঘ পথ হেঁটে এসে উঠছেন গাড়িতে। এছাড়া উত্তরাগামী গণপরিবহনগুলোকে ফ্লাইওভার ব্যবহার করতে দেখা যায়।
মহাখালী চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে হেঁটে রেলগেটে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী কবির আনোয়ার। তিনি বলেন, প্রতিদিন এত এত আন্দোলনে আমরা অতিষ্ঠ। প্রতিটা দিন এই আন্দোলনের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায়ই কেটে যাচ্ছে। এভাবে কি কোনো দেশ চলতে পারে?
অন্য এক পথচারী লোকমান বলেন, মানুষের একটা যৌক্তিক দাবি থাকে, সেটার কারণে আন্দোলন হলে ঠিক আছে। কিন্তু এটা আবার কেমন দাবি তাদের? মন চাইলেই যে কোনো বিষয়ে দাবি জানালাম আর রাস্তায় বসে পড়লাম? এমন হলে আমরা সাধারণ মানুষ কোথায় যাব?
বিদেশগামী ও প্রবাসীরাও এমন ভোগান্তিতে পড়েছেন। বাহরাইন প্রবাসী এক যাত্রী বলেন, তিনি আন্দোলনের বিষয়টি মাথায় রেখে রওনা দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও তাকে দীর্ঘ সময় যানজটে আটকা পড়তে হয়েছে। পরে জাহাঙ্গীর গেট থেকে কাকলী পর্যন্ত পায়ে হেঁটে গাড়ি নিয়েছেন। কিন্তু তার সঙ্গে থাকা মালামাল টানতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছেন। 
জানতে চাইলে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের তেজগাঁও জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার জাকারিয়া বলেন, শিক্ষার্থী তাদের দাবি নিয়ে সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছেন। তাদের কোন মতেই বোঝানো যাচ্ছে না। সরানোও যাচ্ছে না। আমরা প্রস্তুত রয়েছি। যাতে কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে।  
রেলপথ অবরোধে ঢাকা-টঙ্গী-ঢাকা সেকশনে বিকেল ৩টা ৪০ মিনিট থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। 
এদিকে, অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। 
শিক্ষার্থীদের এমন কর্মকান্ড লোকজনকে অতিষ্ঠ করে ফেলছে বলে এক অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। উপদেষ্টা বলেন, তারা (তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী) তো লোকজনকে অতিষ্ঠ করে ফেলছে। দিনের পর দিন কিন্তু তাদের এ দাবি-দাওয়া বেড়েই চলছে।

এটার পেছনে কারা জড়িত সেটাও কিন্তু আপনারা জানেন, এটা কিন্তু আপনারা প্রচার করেন না। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে সাধারণ মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছে। এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করণীয় কি জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আপনারা বলেন, ‘এই অবস্থায় আমার কি করা উচিত? এটা শুধু আমার একার দায়িত্ব নয়, এটা দেশবাসী সবার দায়িত্ব।

সচিব মহোদয় (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব) যা বলেছেন, সেটা আপনারা ভালোভাবে প্রকাশ করেন, জনগণই তাদের (তিতুমীরের শিক্ষার্থী) রেললাইন থেকে উঠিয়ে দেবে।’

×