ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সোমবার যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করার দায়ে সুমন (৩৫) নামের এক যুবককে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন। এর পাশাপাশি তাকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বিচারক ফেরদৌস আরা এই রায় ঘোষণা করেন। দণ্ডিত সুমন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভূজপুর থানার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কাশেমের ছেলে। রায় ঘোষণার সময় আসামি সুমন আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং পরে তাকে সাজা পরোয়ানা মূলে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ২০১০ সালে প্রেমের সম্পর্কের সূত্রে সুমনের সঙ্গে মনি আক্তারের বিয়ে হয়। তবে সুমন তার স্ত্রীর কাছে তার আগের একাধিক বিয়ের কথা গোপন করেছিলেন। বিয়ের পর থেকেই সুমন তার স্ত্রীকে নির্যাতন করতে থাকেন। এজাহারে বলা হয়েছে, মনি আক্তার হালদা ভ্যালি চা বাগানে কাজ করতেন এবং নিজের আয় থেকে সুমনকে একটি মোটরসাইকেল কিনে দেন এবং ৫০ হাজার টাকা দেন। তবুও সুমন আরও টাকা দাবি করতে থাকেন এবং স্ত্রীর ওপর নির্যাতন চালাতেন।
২০২১ সালের ৩০ অক্টোবর সুমন তার স্ত্রী মনি আক্তার ও মামাত ভাই মো. টিপুকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যান। সেখানে সুমন তার শ্বশুর মমতাজের কাছে যৌতুক দাবি করেন। শ্বশুরের অপারগতা প্রকাশ করার পর, সুমন স্ত্রী মনি আক্তারকে নিয়ে মোটরসাইকেলে বাড়ির পথে রওনা দেন। পথে কালীকুম্ভ এলাকায় সুমন বাইক থামিয়ে মনিকে রাস্তায় নিয়ে মুখ বেঁধে মারধর শুরু করেন। মারধরে মনি আক্তারের হাত-পা ভেঙে যায়, ইট দিয়ে তার মাথায় আঘাত করা হয়, এবং সুমন মনির বাম চোখে আঘাত করে এবং মোটরসাইকেলের সাইলেন্সারে চেপে তার বুকের ওপর আঘাত করেন।
এ ঘটনার পর, সুমন মনি আক্তারকে প্রথমে স্থানীয় একটি পল্লী চিকিৎসকের কাছে এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ নভেম্বর মনি আক্তার মারা যান।
মনি আক্তারের মৃত্যুর দুদিন পর, তার ভাই আব্বাস ২০২১ সালের ২৭ নভেম্বর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত চলাকালে সুমন তার দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। তদন্ত শেষে পুলিশ অভিযোগপত্র জমা দিলে ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর আদালতে সুমনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলায় ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সোমবার আদালত এই রায় প্রদান করেন।
এ রায়ের মাধ্যমে সুমনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।
রেজা
