ছবি: জনকণ্ঠ
বিকেলে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার ফুলবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে খেলাধুলা নিয়ে যদুনন্দী ইউনিয়নের খারদিয়া ও বল্লভদী ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রামের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। তবে উভয় ইউনিয়নের বাসিন্দারা এ ঘটনার পর থেকে ক্ষোভে ফেটে পড়ে, যার ফলে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে রাতেই উভয় ইউনিয়নের নেতারা মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।
মাইকের ঘোষণার পর বল্লভদী ইউনিয়নের পক্ষের অন্তত ৬-৭ হাজার লোক ফুলবাড়িয়া বাজারে দেশীয় অস্ত্রসহ জড়ো হয়, অন্যদিকে যদুনন্দী ইউনিয়নের পক্ষের প্রায় ২-৩ হাজার লোক খারদিয়া এলাকায় একইভাবে সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত হয়। দুই পক্ষই দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করে সংঘর্ষের জন্য অপেক্ষা করছিল।
সংঘর্ষের সম্ভাবনার খবর পেয়ে প্রথমে সালথা থানা পুলিশ এবং পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতায় কোনো ধরনের সহিংসতা ছাড়াই দুই পক্ষকে শান্ত করা সম্ভব হয়।
বল্লভদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. খন্দকার সাইফুর রহমান শাহিন জনকণ্ঠকে বলেন, খেলাধুলার সময় ছবি তোলা নিয়ে ফুলবাড়িয়া গ্রামের শিক্ষার্থীদের মারধর করে খারদিয়া গ্রামের শিক্ষার্থীরা। যদুনন্দী ইউনিয়নের খারদিয়া গ্রামটি অনেক বড়, তারা অন্য ইউনিয়নের কাউকে মানুষই মনে করে না। তাই বাধ্য হয়ে আমাদের ইউনিয়নের লোকজন প্রতিবাদ করতে জড়ো হয়েছিল। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), ওসি, সেনাবাহিনী ও উপজেলা বিএনপির নেতাদের প্রচেষ্টায় সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
যদুনন্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিক মোল্যা জানান, ঘটনার মীমাংসার আলোচনা হয়েছে এবং বর্তমানে এলাকার পরিবেশ শান্ত। তবে সংঘর্ষের প্রস্তুতির কারণ সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করতে চাননি।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, শনিবার বিকেলে ফুলবাড়িয়া স্কুলে খেলার সময় ছবি তোলা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝামেলা হয়। এ সময় খারদিয়া গ্রামের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে ফুলবাড়িয়া গ্রামের শিক্ষার্থীদের মারধর করে। ঘটনাটি ইউনিয়ন পর্যায়ে চলে যায়, যা দুই গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি করে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সারা রাত দুই ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি। তবুও রবিবার সকালে প্রায় ১০ হাজার মানুষ সংঘর্ষের প্রস্তুতি নেয়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। বর্তমানে উভয় ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রয়েছে।
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিছুর রহমান বালী জনকণ্ঠকে বলেন, সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হওয়ার পরপরই আমি দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে ফোন করে অনুরোধ করি যেন কোনোভাবেই সংঘর্ষ না হয়। চেয়ারম্যানরাও তাদের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।
সেনাবাহিনী ও পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপের ফলে সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে উভয় ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।
সায়মা ইসলাম