ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০ মাঘ ১৪৩১

পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নে

গ্রামবাসীর সেচ্ছাশ্রমে প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ

স্টাফ রিপোর্টার,  পঞ্চগড়

প্রকাশিত: ১৭:৩৭, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গ্রামবাসীর সেচ্ছাশ্রমে প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ

ছবিঃ সংগৃহীত।

পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নে প্রায় দেড় কিলোমিটার কাঁচা সড়ক গ্রামবাসীরা সেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ করেছেন। গত প্রায় দুই মাস ধরে দিনরাত পরিশ্রম করে সড়কটি নির্মান করেছেন। তবে সড়কটির ডাঙ্গাবাড়ি অংশে একটি সেতুর দাবি তাদের। সেতুটি নির্মিত হলে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা দূর হয়ে দ্রুতই পানি নিষ্কাশন হবে। এতে ভোগান্তি কমার পাশাপাশি সুফল ভোগ করবেন তারা।

 সদর উপজেলার গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, সন্ধ্যার পরে ও সকাল বেলা বৃদ্ধ, যুবক, তরুণ, শিশু সহ শতাধিক গ্রামবাসী মিলে মোল্লাপাড়া থেকে ডাঙ্গাবাড়ি কাঁচা সড়কটি নির্মান করছেন। কারো হাতে কোদাল, কারো কাধেঁ মাটি বহনের ভাড়। কেউ সড়কের পাশের ক্ষেত থেকে মাটি কাটছেন, আবার কেউ সড়কে এনে মাটি ফেলছেন। এভাবেই দুই মাসের পরিশ্রমে সড়কটি নির্মান প্রায় শেষ করে ফেলেছেন। তবে সড়কের ডাঙ্গাবাড়ি অংশে কিছু ব্যাক্তি সড়কের জমি দখল করে রাখায় সড়কের কাজ শুরু করা যায় নি। তবে শীগ্রই সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করছেন তারা।

গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নের মোল্লা পাড়া থেকে ডাঙ্গাবাড়ি কাঁচা সড়কটি ব্রিটিশ আমলের রেকর্ড করা। কিন্তু নানা কারণে ইউপি চেয়ারম্যান সহ সংশ্লিষ্টরা মেরামতের কোন উদ্যোগ না নেয়ায় সড়কটি মাটির সাথে প্রায় মিলে গিয়ে আইলের মত হয়ে যায়। শুষ্ক মৌসুমের সেই আইলের পথ ধরে স্থানীয় সহ শিশুরা স্কুল, কলেজ ও গন্তব্যে যেতেন। তবে বর্ষাকালে তাদের সেই পথে যাওয়ার কোন উপায় থাকতো না। কলার গাছের ভেলা কিংবা হাটু পানিতে হেটে তাদের যেতে হতো কিংবা প্রায় ৩-৪ কিলোমিটার সড়ক ঘুরে যেতে হতো। এছাড়া গ্রামের কেউ মারা গেলে দাফন কাজে অংশ নিতেও গ্রামবাসীদের দীর্ঘ পথ ঘুরে যেতে হতো। বর্ষকালে ভোগান্তির যেন শেষ নেই। তবে সংশ্লিষ্টদের কাছে ঘুরেও গ্রামবাসীরা পাননি কোন প্রতিকার। পরে নিজেরাই উদ্যোগ গ্রহন করেন সড়কটি উঁচু করে নির্মাণের। অবশেষে তারা সফল হয়েছেন। তবে সড়কে একটি সেতু নির্মাণের দাবি করছেন তারা। সম্প্রতি ওই সড়কটি ঘরে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সদর উপজেলা ভূমি সহকারী কমিশনার মোহন মিনজী।

গ্রামবাসী মোজাম্মেল হক বলেন, মোল্লাপাড়া থেকে ডাঙ্গাবাড়ি কাঁচা সড়কটি ব্রিটিশ আমলের রেকর্ড করা। কিন্তু সড়কটি সংস্কারের অভাবে আইলের মত হয়ে যায়। আমরা গ্রামবাসীরা মিলে দিনরাত পরিশ্রম করে সড়কটি উঁচু করে নির্মাণ করেছি। কাজ প্রায় শেষের দিকে। আমরা আশা করছি সরকার যদি সড়কে একটি সেতুর ব্যবস্থা করে তাহলে রাস্তাটি মজবুত হবে। বর্ষায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা হবে।

ইউনিয়নের বাসিন্দা সলিমুল্লাহ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ সড়কের অভাবে ভোগান্তিতে ছিলাম। গ্রামের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ পথ ঘুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হতো। আমরা কেউ রোগী নিয়ে হাসপাতালে যেতেও দীর্ঘ পথ ঘুরে যেতাম। গ্রামের দুইটি কবরস্থান রয়েছে কিন্তু কেউ মারা গেলে দাফন কাজ করা কষ্টকর হতো। আমি গ্রামবাসীদের নিয়ে সড়কটি নির্মাণ শেষ করেছি। সরকার আমাদের একটি সেতুর পাশাপাশি পাঁকার ব্যবস্থা করলে ভালো হয়।

পঞ্চগড় সদর উপজেলা ভূমি সহকারী কমিশনার মোহন মিনজী বলেন, গ্রামবাসীর এতবড় কাজকে সাধন করার জন্য সাধুবাদ জানাই। তারা অনেক বড় একটি কাজ করেছেন। তবে তাদের একটি সেতুর দাবি রয়েছে। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে মনে তাদের দাবিটি পূরণের চেষ্টা করবো।

Faruk

×