অর্ধেকেরও কম চিকিৎসক ও জনবল দিয়েই চলছে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা। প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও জনবল সংকটে রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা না থাকায় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ।
জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে রোগীদের যেতে হচ্ছে জেলা শহরসহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে। ফলে যেমন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন রোগী ও স্বজনরা, তেমনি পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। কিন্তু এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নেই কোনো মাথা ব্যথা। আর জনবল শূন্যতা পূরণে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় উপজেলার সচেতন মহলে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সব্যসাচী নাথ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদানের পর থেকেই জনবল সংকটের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন বলে জানান তিনি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৫শ' থেকে ৭শ' রোগী চিকিৎসা নেন। ৫০ শয্যার বিপরীতে ৬০ থেকে ৭০ জন পর্যন্ত ভর্তি থাকেন নিয়মিত। বিপুল সংখ্যক এই রোগীর জন্য ২১টি চিকিৎসকের পদ বরাদ্দ থাকলেও ৯টি রয়েছে শূন্য। আবার ২জন আছেন অন্য জায়গায় সংযুক্তিতে।
এছাড়াও জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. নাজনিন আক্তার যোগদানের পর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। ফিল্ড স্টাফ ৫৩ পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ২২ টি। নার্স মিডওয়াইফ ২৬ টি পদের মধ্যে ১৭টি পদ শূন্য এবং ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির ২৭টি পদের মধ্যে ১৯টি শূন্য রয়েছে। এতে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।
প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কাজেও রয়েছে নানা বিড়ম্বনা। ৪র্থ শ্রেণির গুরুত্বপূর্ণ কুক পদটিও রয়েছে দীর্ঘ দিন থেকে শূন্য। ফলে রোগীদের খাবার তৈরির মান নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন অনিয়ম। হাসপাতালে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ (কার্ডিওলজিস্ট)। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে এ পদটিও শূন্য রয়েছে এবং বর্তমানে কার্ডওগ্রাফারও নেই অনেক দিন থেকে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রোগী জানান, ‘কোনো রোগী দুপুর ১২টায় ভর্তি হলে পরের দিন সকালে একজন চিকিৎসক দেখেন। এ সময়ে রোগী কষ্টে মরে গেলেও নার্স ছাড়া কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায় না। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকায় প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীদের ফিরে যেতে দেখা যায়। সংকট সমাধানে আরও বেশি উদ্যোগী হওয়ার দাবি রোগী ও রোগীর স্বজনদের।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সব্যসাচী নাথ বলেন, হাসপাতালে অনেক দিন ধরেই চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে কিছুটা বঞ্চিত হচ্ছে। এরপরও যে জনবল রয়েছে, তাই দিয়ে তাঁরা মানুষকে চিকিৎসা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
এসআরএস