ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১

৯ মাসের জন্য সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাওয়া বন্ধ ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০১:০২, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

৯ মাসের জন্য সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাওয়া বন্ধ ঘোষণা

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে ৯ মাসের জন্য পর্যটক যাওয়া বন্ধ

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে ৯ মাসের জন্য পর্যটক যাওয়া বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সাধারণত প্রতিবছর ১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ মাস সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের ভ্রমণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকে। তবে এ বছর এই নিষেধাজ্ঞা আরও তিন মাস বর্ধিত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

যার ফলে ১ এপ্রিলের পরিবর্তে ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই শুরু হচ্ছে এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। আর ৩০ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। তাই শনিবার থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাওয়া নিষিদ্ধ হয়ে গেল। 
তবে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ করেছে সংশ্লিষ্ট সব খাতের ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের যাতায়াত ও রাত যাপনের জন্য উন্মুক্ত করার। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বন অধিদপ্তরে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য ঠিক রাখতেই স্থানীয় জনগণ কেন্দ্রিক পর্যটন করার পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যটন খাতকে বাঁচাতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ 
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত গত দুই মাসে ১ লাখ ২০ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করেছেন। এ সময় ভ্রমণের আগে অনলাইনে নিবন্ধন সম্পন্ন করে ট্রাভেল পাস নিয়ে সেন্টমার্টিন যেতে হয়েছে পর্যটকদের। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছিল, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা দ্বীপটিতে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসবেন। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে দৈনিক দুই হাজার পর্যটকের জন্য সেন্টমার্টিন ভ্রমণ ও সেখানে রাতযাপনের সুযোগ রাখা হয়।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ সুরক্ষায় যে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, তা ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে। পর্যটক যাতায়াত বন্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের বিকল্প জীবিকার বিষয়টিও ভেবে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৯ মাসের জন্য বন্ধ হলো সেন্টমার্টিনে পর্যটক ভ্রমণ। যার প্রভাব পড়েছে দ্বীপের পর্যটন খাতে। বন্ধ রয়েছে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল। সেন্টমার্টিনে যাতায়াত বন্ধ হওয়ায় সুনসান নীরবতা জেটিঘাটে। জাহাজে বেকার সময় পার করছেন কর্মচারীরা। এতে বিপাকে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে জাহাজ কর্তৃপক্ষ বলছেন, ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে একটি শুনানি রয়েছে। শুনানিতে ফেব্রুয়ারি মাসে জাহাজ চলাচল করবে কি না সিদ্ধান্ত আসতে পারে, যার অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। তবে সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসীর দাবি, ফেব্রুয়ারি মাসও যেন পর্যটকদের জন্য সেন্টমার্টিন দ্বীপ উন্মুক্ত থাকে।
ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের গমন ও রাত যাপনের জন্য উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সব খাতের ব্যবসায়ীরা। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্টন, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) মিলনায়তনে ‘সেন্টমার্টিন’স দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা-উন্নয়ন জোট’ এর ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তারা। ব্যবসায়ী, স্থানীয় জনগণ, শ্রমিক কর্মচারী ও দিনমজুরদের স্বার্থে ফেব্রুয়ারি মাসে পর্যটকদের ভ্রমণ ও রাত যাপনের জন্য দ্বীপ উন্মুক্ত রাখার দাবি জানান তারা।
ব্যবসায়ীরা বলেন, গেল নভেম্বরে সেন্টমার্টিন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়; কিন্তু ওই সময় ট্রাভেল পাস জটিলতাসহ নানা কারণে পর্যটকরা দ্বীপে যেতে পারেননি। ডিসেম্বর থেকে যেতে পারলেও অনেকেই ট্রাভেল পাসবিষয়ক প্রতিবন্ধকতায় পড়ছে। আগামী মার্চে রমজান মাস শুরু। এর আগে ফেব্রুয়ারিই ভ্রমণের মোক্ষম সময়। এই সময় পর্যটক ভ্রমণ বন্ধ থাকলে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে দ্বীপবাসী। 
পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিনকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ী, সেন্টমার্টিন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সর্বশেষ ২০২০ সালের আগস্টে সেখানে প্রথম পর্যটক নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

সরকারের তরফ থেকে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেসকে (সিইজিআইএস) একটি সমীক্ষা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি গবেষণা শেষে জানায়, দ্বীপটিতে কোনোভাবেই পর্যটকদের রাতে থাকার অনুমতি দেওয়া ঠিক হবে না।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে পর্যটক ভ্রমণের সময় কমানোর পাশাপাশি নানা বিধিনিষেধ জারি হয়েছে। নভেম্বরে পর্যটকদের সেন্টমার্টিনে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করা হয়। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে ২ হাজার পর্যটক যাওয়া এবং রাত্রিযাপনের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারি থেকে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, সেন্টমার্টিনের সুরক্ষার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার আগে দ্বীপের বাসিন্দা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, পরিবেশকর্মীসহ অংশীজনদের নিয়ে বৈঠক করতে হবে। সেন্টমার্টিনে অবৈধভাবে ২৩০টি হোটেল-রিসোর্ট-কটেজ রেস্তোরাঁ তৈরি হয়েছে। দ্বীপবাসীর কল্যাণে তাদের অবদান কতটুকু তা খতিয়ে দেখতে হবে। পর্যটন বন্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দ্বীপের মানুষের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা জানান, সাধারণত প্রতিবছর ১ অক্টোবর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত পর্যটকরা যাতায়াত করে থাকেন। কিন্তু এ বছর ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যটক ভ্রমণের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। দ্বীপে ভ্রমণের সময় অন্তত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো উচিত।
সেন্টমার্টিন হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি এম এ আবদুর রহিম জিহাদী বলেন, অতীতে এ রকম কোনো সংকট দ্বীপে তৈরি হয়নি। এখন যদি দ্বীপে পর্যটক আসা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে নানামুখী সংকটে পড়বেন বাসিন্দারা।

×