ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা বিএনপির কাউন্সিলে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, স্বৈরাচারের মাথাটা পালিয়ে গেছে। কিন্তু স্বৈরাচারের কিছু কিছু অবশিষ্ট রয়ে গেছে বাংলাদেশে। যেকোনো সময় ভিন্ন আঙ্গিকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। যদি দেশকে রক্ষা করতে হয়, দেশের মানুষেকে রক্ষা করতে হয়। তাহলে ঐক্যের বিকল্প নেই। বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে যত মানুষ প্রতিবাদ করেছে প্রত্যেকটি মানুষ হয়েছে অত্যাচারিত।
শনিবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ আব্বাস উদ্দিন খান সোহাগপুর মডেল কলেজ মাঠে জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি আরও বলেন, আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে, যারা আমরা দেশের জন্য কাজ করতে চাই দিন শেষে আমরা এক। আমাদের সামনে প্রচুর কাজ, দেশকে পুনর্গঠনের কাজ। আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার অধিকার, স্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বেকারত্ব দূরীকরণ, কৃষি ও শিল্পখাতে উন্নয়ন ৩১ দফায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমরা কৃষককে ন্যায্যমূল্য দিতে চাই। তবে লাগমহীন দ্রব্যমূল্য যেন জনগণের মধ্য নাভিশ্বাসের কারণ না হয়।
তিনি আরও বলেন, অচল কল কারখানাগুলোকে সচল করতে হবে। আমাদের অসংখ্য নদ নদী ও খাল ভরাট হয়ে গেছে। এগুলো খনন করতে হবে। আগামী দিনে সংসদের মেয়াদ কত হবে, সংখ্যা কত হবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এই বিতর্ক থাকতেই পারে। দিন শেষে আমরা এগুলো জনগণের ওপর ছেড়ে দেব। এই নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত বিতর্ক রাষ্ট্র মেরামতের কাজকে বিঘিœত করবে। তবে এর একমাত্র উপায় হলো জাতীয় নির্বাচন। জনগণের ভোটের মাধ্যমে এর ফয়সালা হবে।
তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর জনগণের ভোট দেওয়ার অধিকার ছিল না। জবাবদিহিতা ছিল না। অস্ত্রের মুখে সব অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আমরা ডামি নির্বাচন ভোটারবিহীন নির্বাচন ও ভোট ডাকাতির নির্বাচন দেখেছি। উন্নয়নের নাম করে সামান্য জিনিস দৃশ্যমান করা হলেও এর মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে।
বিএনপি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। এই দলের কর্মী হিসেবে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে জাতিকে পথ দেখাতে হবে। শুধু আমাদের দলই নয় দেশের যে সকল রাজনৈতিক দল যাদের এজেন্ডা দেশ ও দেশের মানুষ তাদের সঙ্গে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মো. বরকত উল্লাহ বুলু। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তৃতা করেন বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভুইয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোস্তাক আহম্মেদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন শ্যামল, বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সায়েদুল হক সাইদ বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মো. শামীম, সালাউদ্দিন শিশির, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ও জেলা বিএনপি নেতা মো. কবির আহম্মেদ প্রমুখ।
এদিকে দীর্ঘ এক যুগ পর জেলা বিএনপির এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জেলার সর্বত্রই ছিল উৎসবের আমেজ। শনিবার সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিভিন্ন রং-বেরঙের ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে আসতে থাকে। দুপুর ১২টার আগেই দলীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। উল্লেখ্য, এই সম্মেলন কেন্দ্র করে জেলা বিএনপি দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। গত ২৮ ডিসেম্বর ও ১৮ জানুয়ারি দুই দফা তারিখ নির্ধারণ করেও তা সম্ভব হয়নি।