আমাদের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। নারী শ্রমিককে মজুরি বৈষম্য রেখে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। এক সময় ছিল গৃহ কাজে অংশগ্রহণ ছাড়া পরিবারের আর্থিক অবস্থা উন্নত করার কোন সুযোগ ছিলনা। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে নারীরা এখন পরিবারের আর্থিক কর্ম সম্পাদন করে সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন অবদান রাখছে। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সেক্টর গামেন্টস প্রায় ৮০ শতাংশ অবদান রাখছে নারীরা। দেশের প্রায় সব ক্ষেএেই নারীদের অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে।
মাধবপুরেও কৃষি কাজে নারীদের অংশগ্রহণ দিন দিন বেড়েছে আশাতীত। দরিদ্র পরিবারের নারীরা নিজের সংসারে অভাব দুর করতে এখন কৃষি কাজ করছেন। সারা বছরে জুড়ে মৌসুমি কৃষি কাজে নারীরা মাঠে দিন মজুরের কাজ করেন। পুরুষের পাশাপাশি সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন। সকাল হলেই দেখা মিলে নারীরা দলবেঁধে কাজে যাচ্ছেন। উপজেলার ৫ টি চা বাগানের বেকার নারী ও কিশোরীরা বেশি কাজ করছেন। তবে তারা মজুরি বৈষম্যের শিকার।মজুরি কম হলেও বাধ্য হয়ে কাজ করেন। কারন কৃষিকাজে মজুরির কোন নীতিমালা নেই। নারী শ্রমিকরা জানান, মাধবপুর উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন সারা বছর মৌসুমি সবজি ও বিভিন্ন কৃষি চাষাবাদ হয়ে থাকে। তাই পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকদের অনেক চাহিদা রয়েছে।
বিশেষ করে চা বাগানে যাদের কাজ নেই সেখানে দরিদ্র নারীরা পরিবারের অভাব ঘোচাতে কৃষি কাজ করেন। চা বাগানের নারী ছাড়া সমতল এলাকার পিছিয়ে পড়া অভাবগ্রস্হ নারীরা কৃষি কাজ করেন। তবে মজুরি নিয়ে নারী কৃষি শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যায়। সকাল থেকে বিকেল অবধি কঠোর কাজ করলেও পুরুষের মত মজুরি দেওয়া হয়না নারীদের। সুরমা চা বাগানের মালতি ভুমিজ নামে একজন নারী কৃষি শ্রমিক বলেন,পুরুষ শ্রমিকদের ৫শ টাকা থেকে সাড়ে ৫ শ টাকা পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। আর সেখানে নারী শ্রমিককে মাত্র ২শ টাকা থেকে আড়াইশ টাকা । নারী শ্রমিকরা পুরুষের চেয়ে কম মজুরি পায় যা পায় তা দিয়ে তাদের পোষায় না। নারীরা পুরুষের মতই হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করেন। এই মুজুরি বৈষম্য চলছে যুগ যুগ ধরে। মজুরি নিয়ে কথা বলতে গেলে কাজ থেকে বাদ পড়ার ভয়েও অনেক নারী কম টাকায় কাজ করে যান।
পরমানন্দপুর গ্রামের সুফিয়া নামে নারী শ্রমিক জানান, আলু, মুলা টমোটো,বরবটি ধান রোপন,ধান কাটা সহ সারা বছর জুড়ে শতশত শ্রমিক রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কৃষি জমিতে কাজ করেন। এ স্বপ্ল মজুরি দিয়ে তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কারন চাল,তেল,লবন, পেয়াজ রসুন কিনে আর কোন টাকা হাতে থাকেনা। মাছ মাংস কেনার সক্ষতা নেই।
আমজাদ মিয়া নামে একজন কৃষক জানান,সার, বীজ সহ কৃষি যন্ত্রপাতির দাম অনেক বেশি। এ কারনে উৎপাদন খরছ বেশি। কৃষকরা শ্রমিকের সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কাউকে কম দেওযার ইচ্ছা নেই।
মাধবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সজিব সরকার জানান,মাধবপুরে নারী পুরুষ মিলে কৃষি কাজ করেন। নারীরা যাতে ন্যায্য পারিশ্রমিক পান সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।
নুসরাত