ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১

এ সরকারের আমলে বিচারবহির্ভূত হত্যা দুর্ভাগ্যজনক ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এ সরকারের আমলে বিচারবহির্ভূত হত্যা দুর্ভাগ্যজনক ॥ ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

কুমিল্লার যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামকে সাদা পোশাকধারী লোকেরা নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ অভিযোগ করেন। তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যা দুর্ভাগ্যজনক।
এহেন বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনায় দেশবাসী হতবাক হয়েছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, এই হত্যাকা-ের ঘটনা জনমনে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। সরকার ও প্রশাসনে ঘাঁপটি  মেরে থাকা আওয়ামী দোসররা এই ঘটনা ঘটিয়েছে কিনা তার অনসুন্ধান জরুরি বলেও দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।
বিবৃতিতে ফখরুল বলেন, কোনো সরকারি বাহিনীই আইন হাতে তুলে নিতে পারে না। অপরাধ সংঘটনকারী যতই শক্তিশালী হোক, তাকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া আইনের শাসনের অন্যতম শর্ত। কিন্তু তাকে কখনোই বিচারবহির্ভূতভাবে নির্যাতন করে হত্যা করার কোনো অধিকার সরকারি বাহিনীগুলোর নেই। আমি তৌহিদুল ইসলামকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যার নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাই। এই হত্যাকা-ে জড়িত প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।
শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, কুমিল্লার যুব নেতার এই নির্মমতা আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলকেই মনে করিয়ে দেয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার হলোÑগুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যা থেকে জাতিকে মুক্তি দেওয়া, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের ভয়ভীতি থেকে দেশবাসীকে নিরাপদ রাখা।

কিন্তু আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের যদি পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে আবারও দেশে নৈরাজ্যের অন্ধকার নেমে আসবে। মানুষ এক অজানা আশঙ্কায় দিনাতিপাত করবে। বেআইনি হত্যা করে কখনোই সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা যায় না, এতে আইনের শাসনকে চরমভাবে অবজ্ঞা করা হয় এবং দেশকে ঠেলে দেওয়া হয় আদিম অন্ধকারের দিকে।
বিএনপি মহাসচিব তৌহিদুল ইসলামের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
ছাত্ররা সরকারে থেকে দল গঠন করলে দেশের মানুষ মেনে নেবে না -ফখরুল ॥ ছাত্ররা সরকারে থেকে দল গঠন করলে দেশের মানুষ মেনে নেবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার বিকেলে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের খেলার মাঠে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত দুস্থদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে ফখরুল বলেন, আপনাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য কাজ করে যাব। শুধু আপনাদের এই অনুরোধটুকু জানাব,  অযথা সংঘাতমূলক কোনো কথাবার্তা রাজনীতির মধ্যে না আনাই ভাল হবে। আমরা এটা আশা করি আপনাদের কাছে। 
ফখরুল বলেন, ১৫ বছর ধরে আমরা লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি। ১৫ বছরে আমাদের বহু লোক মারা গেছে। জুলাই আন্দোলনে আমাদের ৪২৬ ছাত্র, নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। আমরা আপনাদের কাছে যেটা চাই, নিরপেক্ষ থাকবেন। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকবেন। নির্বাচন এ দেশে অবশ্যই হবে। নির্বাচনটি হতে হবে সব সময় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। আমরা চাইব, এ সরকার সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ছাত্ররা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করবে, রাজনীতিতে আসবে, আমরা তাদের স্বাগত জানাব। তারা তাদের নতুন চিন্তাভাবনা দিয়ে মানুষের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু সরকারে থেকে যদি দল গঠন করেন, এই দেশের মানুষ সেটা মেনে নেবে না।
নির্বাচন জরুরিÑ গয়েশ্বর ॥ ১৭ বছর দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি বলে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ভোটাধিকার  ফিরিয়ে দিতে দেশে এখন নির্বাচন জরুরি। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে  ‘মাদক বিরোধী কল্যাণ সোসাইটি’ আয়োজিত ‘মাদক মুক্ত দেশ ও জাতি গঠনে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। 
গয়েশ্বর বলেন, আমার মনে হয়, একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করা ছাড়া বর্তমান সরকারের অন্য কোনো দায়িত্বের প্রতি আগ্রহ সন্দেহ জনক। এ নিয়ে জনগণের মধ্যে অবিশ্বাস, বিভ্রান্তি, অনাস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তাই নির্বাচনটা যে জরুরি এই বিষয়টা সরকারকে বুঝতে হবে। এই বিষয়টা মাথায় রেখে রাজনৈতিক বিষয়টা রাজনীতিবিদদের হাতে ছেড়ে দেওয়াটাই ভালো। আর  রাজনীতিবিদরা কারা ক্ষমতায় যাবে সেটা জনগণই নির্ধারণ করবে। 
আয়োজক সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি খন্দকার রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম, স্বাধীন বাংলা মাদক বিরোধী কল্যাণ সোসাইটির সভাপতি সেলিম নিজামী প্রমুখ। 
উপদেষ্টাদের হিসাব করে কথা বলতে বললেন সেলিমা রহমান ॥ অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেছেন, সরকারে থেকে দল করবেন, সেটা হবে না। কথা বলবেন হিসাব করে। বিএনপি একটি বড় দল এবং ঐতিহ্যবাহী দল। সেই দলের বিরুদ্ধে কথা বলতে হলে সংযত হয়ে কথা বলতে হবে। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জিয়াউর রহমান সমাজকল্যাণ ফোরাম আয়োজিত এক নাগরিক প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সেলিমা রহমান বলেন, ড. ইউনূসের সম্মান বিশ্বজুড়ে। তিনি এ সরকারের প্রধান হয়ে কাজ করছেন। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদ থেকে যখন আমিত্বের কথা ভেসে আসে, আমি এটা করব, আমরা এটা করেছি- এসব কথা শুনলে কষ্ট লাগে। তিনি বলেন, ছাত্ররা দল করবে খুব ভালো কথা। নতুন প্রজন্ম আগামী দিনে দেশ চালাবে। ছাত্র-যুবকরা ভাষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণআন্দোলন, ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, সব সময়ই তরুণ সমাজ সেটি করেছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে এ রকম ক্ষমতার লোভ ছিল না। 
বিচারবহির্ভূত হত্যার পুনরাবৃত্তি কেন- রিজভী ॥ শেখ হাসিনার শাসনামলের মতো ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের আমলে বিচারবহির্ভূত হত্যার পুনরাবৃত্তি ঘটবে কেন এমন প্রশ্ন রেখেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম  মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শনিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টন ভাসানী মিলনায়তনে ‘ঠিকানা বাংলাদেশে’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির পরিচিতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন প্রশ্ন করেন।
দেশ-বিদেশের ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত চলছেই বলে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, আশঙ্কা আমাদের দিন দিন বাড়ছে। কুমিল্লায় যুবদলের একটা ছেলেকে ধরে নিয়ে মৃত অবস্থায় ফিরিয়ে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবের সরকারের আমলে এই ঘটনা ঘটবে কেন? ড. ইউনূস সাহেবকে পৃথিবীর বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলো অত্যন্ত পছন্দ করে এবং এদেশের মানুষও তাকে পছন্দ করে। তিনি দেশের একজন গুণী মানুষ, যিনি দেশের জন্য আন্তর্জাতিক সম্মান নিয়ে এসেছেন। তার সময়ে যদি শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন দুষ্কর্ম এবং অত্যাচারের পুনরাবৃত্তি হয় তাহলে তো হোঁচট খাবে জনগণ।

×