ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১

আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই ॥ শিক্ষা মন্ত্রণালয়

অনড় তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা মহাখালী গুলশানে ব্যাপক যানজট

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

অনড় তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা মহাখালী গুলশানে ব্যাপক যানজট

অনড় তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা

সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। অনশনে বসে অন্তত ১০ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবুও দাবি আদায়ে অনড় অবস্থান ধরে রেখেছেন তারা। 
শনিবার বিকেল ৪টার মধ্যে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় গঠনসহ সাত দফা দাবি পূরণ না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আওতাধীন এলাকায় ব্যারিকেড কর্মসূচি শুরু করার হুঁশিয়ারি দেন তারা। পরে কলেজটির শিক্ষার্থীরা মহাখালী সড়ক অবরোধ করেন। এর পর মিছিল নিয়ে গুলশানের সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।

এসময় এলাকাগুলোতে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের যান চলাচল। এতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। তবে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ঘোষণা আদায়ে সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলন করার যৌক্তিকতা নেই বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এই শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলন করছেন, সেসময় বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ঢাকার পুরাতন সাত কলেজকে নিয়ে একটি পৃথক বিশ^বিদ্যালয় তৈরির পরিকল্পনা করছে। এর মধ্যে ‘জুলাই ৩৬ বিশ^বিদ্যালয়’ নামে প্রাথমিকভাবে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, এই দাবি মোটেও অযৌক্তিক নয়। কলেজটিতে পর্যাপ্ত জায়গা ও একাডেমিক ভবনসহ অবকাঠামো আছে। এটি দীর্ঘ ২৭ বছরের দাবি। সরকার যদি ঢাকার কলেজগুলোকে নিয়ে স্বতন্ত্র বিশ^বিদ্যালয়  তৈরি করে এতে আমাদের সমস্যা নেই। তবে ওই বিশ^বিদ্যালয় ৬ কলেজকে নিয়ে করতে হবে। তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা এতে যুক্ত হবে না। এসময় তারা নানা ধরনের স্লোগান দেন।
এর আগের দিন শুক্রবার রাত ১১টায় জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা জানান, শনিবার বিকেল ৪টার মধ্যে আমাদের সাত দফা দাবি মেনে না নিলে এবং তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়কে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না দেওয়া হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচি পালন করা হবে। এই কর্মসূচির আওতায় রেল ও সড়কপথ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, তিতুমীর কলেজ পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়সহ সাত দফা দাবিতে এই অনশন চলছে। এতে দুই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত এই অনশন চলবে। এ বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক বলেন, মহাখালী তিতুমীর কলেজ থেকে অসুস্থ ২ শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাদের দুজনকে মেডিসিন ওয়ার্ডে পাঠিয়েছে। বর্তমানে তারা চিকিৎসাধীন ।
আন্দোলনে তারা ৭ দাবি জানিয়েছে। এরমধ্যে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠন করে ২০২৪-২০২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ নতুবা অনতিবিলম্বে শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন করতে হবে।

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ন্যূনতম দুটি বিষয় ‘আইন’ এবং ‘জার্নালিজম’ সংযোজন করতে হবে। একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। শিক্ষার গুণগতমান শতভাগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আসন সংখ্যা সীমিত করতে হবে। আন্তর্জাতিকমানের গবেষণাগার বিনির্মাণের লক্ষ্যে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিতকরণ করতে হবে।
এদিকে মধ্যরাতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করতে কলেজের দুটি ছাত্রীনিবাস থেকে বেরিয়ে ঝটিকা মিছিল করেছেন শতাধিক নারী শিক্ষার্থী। এ সময় তারা অনতিবিলম্বে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। 
তবে তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ঘোষণা আদায়ে সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলন করার যৌক্তিকতা নেই বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শনিবার বিকেলে মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। কলেজ শিক্ষার্থীদের টানা অবরোধ ও অনশনের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই বিবৃতি দিল।
বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে চলমান আন্দোলনের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা সরকার অবহিত রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাতটি কলেজের সমন্বয়ে একটি পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের লক্ষ্যে ইউজিসির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে। এক্ষেত্রে সরকারি তিতুমীর কলেজের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে এই কমিটি তিতুমীর কলেজসহ সাতটি কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। এই কলেজগুলোর শিক্ষার সুযোগ, সুবিধা ও মানোন্নয়নই বর্তমানে সরকারের প্রধান লক্ষ্য এবং এক্ষেত্রে করণীয় সকল বিকল্পই সরকারের বিবেচনায় থাকবে। এ অবস্থায় তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ঘোষণা আদায়ে সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলন করার যৌক্তিকতা নেই।

সেজন্য আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধৈর্য্য ধারণ করার অনুরোধ করা হলো। জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয় বা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয় এমন কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার জন্য আন্দোলনকারীদের প্রতি আহবান জানানো হচ্ছে। সর্বস্তরের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত দাবিদাওয়ার বিষয়ে সরকার সবসময় সচেতন ও সহানুভূতিশীল রয়েছে।

×